কল্যাণ চন্দ্র, বহরমপুর: শীতকালের অন্যতম পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য সবজি ফুলকপি। বাজারে গেলেই প্রথমেই নজরে আসে এই সবজিটি। চিকিৎসা-শাস্ত্র মতে, দাঁত, হাড় ও স্নায়ুর রোগে ফুলকপির জুড়ি মেলা ভার। এছাড়া, ওজন কমাতে, ফ্যাট ঝরাতে ফুলকপির চাহিদা বেড়েই চলেছে। তবে এখন আর শুধু শীতকালেই নয়, বছরভর বাজারে মিলছে ফুলকপি। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে সারা বছর ধরে করা হচ্ছে ফুলকপির চাষ। জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাস ফুলকপি চাষের প্রকৃত সময়। তবে গরমকালেও বাজারে ফুলকপির বেশ ভালই দাম পাওয়া যায়। রাজ্যের জেলাগুলির মধ্যে মুর্শিদাবাদে প্রচুর ফুলকপির উৎপাদন হয়।
[আয় বাড়াতে পরিত্যক্ত খোলা মুখ খনিতে মাছ ছড়াল মৎস্য দপ্তর]
এই জেলার প্রায় ২২ থেকে ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলকপির চাষ হয়। এর মধ্যে বহরমপুর ও বেলডাঙা অন্যতম। ফুলকপির বেল্ট বলা যায় বেলডাঙাকে। বেলডাঙার বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে ফুলকপির চাষ করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে বেলডাঙা-১ নম্বর ব্লকে ৪৭০ হেক্টর এবং বেলডাঙা-২ নম্বর ব্লকে ৩২০ হেক্টর জমিতে ফুলকপির চাষ করা হয়। চলতি বছর ৩০ লক্ষ ফুলকপি-সহ বিভিন্ন চারা চাষিদের মধ্যে বিনামূল্যে বিলির কাজ শুরু হয়েছে। এক একজন কৃষককে দেড় হাজার করে ফুলকপির চারা দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে কৃষকদের মধ্যে ১৬ লক্ষ ফুলকপির চারা বিলি করা হয়েছে। তার মধ্যে শুধুমাত্র বেলডাঙাতেই প্রায় আড়াই লক্ষ চারা দেওয়া হচ্ছে। বেলডাঙার খিদিরপুরে ফুলকপি চাষের জন্য খামার তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকে ‘হাজার আট’ প্রজাতির ফুলকপির চারা নিয়ে অনেক চাষিই ফুলকপি চাষে নেমে পড়েছেন। এখানে উৎপাদিত ফুলকপি শীতের মরশুমে বাজারে পৌঁছে যাবে।
[আমনের ভরা মরশুমে জলসংকট মেটাতে আশীর্বাদ তিতলি! আশায় বর্ধমানের কৃষকরা]
বেলডাঙ্গার পুলিন্দা গ্রামের বাসিন্দা উত্তম প্রামাণিক নামে এক চাষি জানাচ্ছেন, গত ১৫ বছর ধরে তিনি ফুলকপির চাষ করছেন। লাভজনক ব্যবসা হওয়ার কারণে সারা বছর ধরে ‘সামার কুইন’, ‘সামার বিউটি’-সহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলকপি তিনি নিজের জমিতে চাষ করছেন। গত বছর প্রথমদিকে ফুলকপি প্রতি ১৫-১৬ টাকা দাম পাওয়া গিয়েছিল। তবে পরে দাম কমলেও ৮-১০ টাকার নিচে নামে না। বেলডাঙার বাসিন্দা আরএক কৃষক সাফাউল্লা শেখ জানান, এ বছর আবহাওয়া খুব ভাল রয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত বর্ষা না হওয়ায় কোনও জমি জলে ডোবেনি। সেই কারণেই এলাকার প্রায় সব কৃষক-ই ফুলকপির চাষ শুরু করে দিয়েছেন। আর এজন্যই তিনি কিছুটা আতঙ্কিত। কারণ, বাজারে ফুলকপির আমদানি বেশি হলেই দাম কমে যাবে। তবে এবার তিনি মাঠে সাত হাজার ফুলকপির চারা লাগিয়েছেন। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যেই ফুলকপি উঠতে শুরু করবে। সাফাতুল্লা সাহেব জানান, বেলডাঙার খিদিরপুর খামার থেকে তিনি দু’দফায় বিনামূল্যে তিন হাজার ও দেড় হাজার ফুলকপির চারা পেয়েছেন। ওই চারায় ইতিমধ্যে ফুলও ধরেছে। এ বছরও ভাল দাম পাবেন বলে বিশ্বাস তাঁর মতো অনেক ফুলকপি চাষিরই। ফলে এখন থেকেই বেলডাঙা ব্লকের একাধিক গ্রামে ফুলকপি চাষ শুরু হয়ে গিয়েছে।
The post অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে ফুলকপি চাষ করে নজির গড়ল মুর্শিদাবাদ appeared first on Sangbad Pratidin.