দিন কয়েক আগেই নয়া ক্রেডিট পলিসি ঘোষণা করেছে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া। নীতিতে গুরুত্ব পেয়েছে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি। রেপো রেটে বদল না আনা হলেও কোথাও যেন ভবিষ্যতে তা হওয়ার আভাস বিদ্যমান। তবে এর পাশাপাশি আর কী কী বিষয় সম্পর্কে আগাম হুঁশিয়ার থাকলে বহুলাংশে এড়ানো যাবে ঝুঁকি, এগিয়ে থাকা যাবে অনেকটাই, ক্রেডিট পলিসি খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করে তারই সন্ধান দিলেন নীলাঞ্জন দে
৮ই এপ্রিল ঘোষিত পলিসি নিয়ে বাজারে কৌতূহলের অন্ত নেই। রিজার্ভ ব্যাংক যে পুরনো নীতি থেকে কিছুটা সরে এসে এবার ‘ইনফ্লেশন ম্যানেজমেন্ট’-কে প্রাধান্য দিচ্ছে, তা এখন সকলেই বুঝেছেন। সে কারণেই আগের ‘অ্যাকোমোডেটিভ পলিসি’ সামান্য হলেও বদলেছে। যদিও মূল রেটের (রেপো) কোনও বদল হয়নি, তবুও এবারের পদক্ষেপ যেন আগামিদিনের রেট বদলের ইঙ্গিত দিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। ‘সঞ্চয়’-এর পাঠকদের জন্য এই লেখায় রইল সেই সংক্রান্ত কিছু তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ।
l গ্রোথ বাড়ানো তো বটেই, তবে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে ব্যাংক নিয়ন্ত্রক কিছুটা বেশিই ভাবিত।
l রিজার্ভ ব্যাংক আগামিদিনে রেট নিয়ে ‘ফ্লেক্সিবল’ থাকবে, সেই বিষয়ে গভর্নর শ্রী শক্তিকান্ত দাস ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন।
l আগামী জুন মাসের (মানে পরের বার) পলিসিতেই কি এই বদলটি প্রতিফলিত হবে? রেট যদি বদলায়, তা কত বেসিস পয়েন্ট হবে?-এই প্রশ্নগুলি এখন বাজারে সকলেই জিজ্ঞাসা করছেন।
l যাঁরা ডেট মার্কেটে বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরা যেন বিশেষভাবে সতর্ক থাকেন। এখন পর্যন্ত ট্রেন্ডগুলি তেমন ইতিবাচক বলে মনে হচ্ছে না, বিশেষত যাঁরা দীর্ঘমেয়াদী লগ্নি করেছেন, তাদের জন্য এ কথা বেশি প্রযোজ্য।
l যাঁরা স্বল্প মেয়াদের কথা ভাবছেন, মূলত মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে যাঁরা বিনিয়োগ করেন, তাঁরা লিকুইড, মানি মার্কেট, লো ডিউরেশন, শর্ট টার্ম ইত্যাদি বিকল্পের দিকে নজর দিন।
[আরও পড়ুন: আপনার পলিসি কি সেরা ক্যানসার কভার দেয়?]
এই প্রসঙ্গে যা উল্লেখ করার যোগ্য তা হল ইনফ্লেশন-জনিত প্রোজেকশন বদলেছে রিজার্ভ ব্যাংক। জিডিপির গ্রোথ নিয়েও নতুন চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে এই ক্রেডিট পলিসিতে। মনে রাখতে হবে, বিশ্বের একাধিক কোণে ইতিমধ্যে ‘ইনপুট কস্ট’ বাড়ার কারণে মুদ্রাস্ফীতি মাথা চাড়া দিয়েছে। তবে ‘ডিমান্ড’ তেমন কমেনি বলে ‘রিকভারি’ও হচ্ছে দ্রুত বলে জানা যাচ্ছে। আমাদের দেশে আগামী বর্ষায় যদি ঠিকমতো চাষাবাদ হয়, তাহলে চিন্তা কিছুটা হলেও
কম হবে।
অর্থবর্ষ ২০২২-২৩ তে যা হবে বলে ভাবা হচ্ছে–
(১) GDP বৃদ্ধির হার ৭.২% (আগের ৭.৮% থেকে কম)
(২) মুদ্রাস্ফীতির হার ৫.৭% (আগের ৪.৫% থেকে বেশি)
ডেট মার্কেটে ইন্টারেস্ট রিস্ক এই সন্ধিক্ষণে কম নয়, তাই এই বিশেষ প্রতিবেদন ডেট ইনভেস্টরদের কয়েকটি ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হল।
-ডেট ফান্ড বা অন্য মার্কেট নির্ভর ডেট সিকিউরিটি এখন স্বল্প রিটার্নই দেবে।
-ঋণপত্রের বাজারে অনিশ্চয়তা থাকবে, যদিও বড় ধরনের ক্রেডিট রিস্ক এখনই কেউ আশঙ্কা করছেন না।
-মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদী ডেটের কথা চিন্তা বেশি না করাই ভাল। যদিও রিস্ক বাড়বে, আংশিকভাবে এবং ধীরে ধীরে ইকুইটিতে সুইচ করার কথা ভাবতে পারেন। তবে তা আপনার রিস্ক প্রোফাইল যদি অনুমতি দেয়, তবেই। ট্যাক্স বেশি দিতে হবে কি না, তাও সুইচের সময় দেখতে হবে, না হলে খরচে পোষাতে নাও পারে।
এই মুহূর্তে SDL (স্টেট ডেভেলপমেন্ট লোন) নির্ভর কিছু ফান্ড এসেছে। প্রয়োজন বুঝলে সেরকম কিছু ভাবতে পারেন। তবে লক-ইন থাকলে তা আপনার জন্য আদর্শ নাও হতে পারে।
উদাহরণ :–
পক্ষপাতশূন্য হয়ে সম্প্রতি বাজারে আসা Tata Nifty SDL Plus AAA PSU Bond Dec 2027 60:40 Index Fund নামক NFO-টির কথা বলি এই প্রসঙ্গে।
মূল বৈশিষ্ট্য :–
(১) পোর্টফোলিওর ৬০% SDL-এ বিনিয়োগ করা হবে।
(২) বাকিটা প্রধানত AAA রেটিং যুক্ত বন্ডে
(৩) ইল্ড টু ম্যাচুরিটি : ৬.৬০% (আনুমানিক)
(৪) ম্যাচুরিটির সময় : ডিসেম্বর ২০২৭
ফান্ডের ভ্যালুয়েশন যেমনই তখন হোক না কেন, ২০২৭ সালের ডিসেম্বরে এটি নিয়মমাফিক ক্লোজ হবে। এই প্রসঙ্গে ডেট ফান্ডের ট্যাক্সেশন কী ধরনের রয়েছে, তা জেনে নিতে ভুলবেন না। ইনডেক্সেশন সংক্রান্ত নিয়মকানুনও জেনে নেওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি।
(লেখক লগ্নি পরামর্শদাতা)