কৃষ্ণকুমার দাস: মাত্র দু’মাসে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগামী দু’বছর ধরে দেশে ফেরত নেওয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করল মায়ানমার সরকার। কক্সবাজার ও টেকনাফ জেলায় কয়েক হাজার শরণার্থী শিবিরে থাকা প্রায় দশ লক্ষ রোহিঙ্গার মধ্যে এবার সীমান্ত পেরিয়ে আসা ছয় লক্ষকে আগে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। এর মধ্যে মংডু ও বুড়িডং লাগোয়া বাংলাদেশ সীমান্তে যে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী কার্যত খোলা আকাশের নিচে রয়েছেন তাঁদেরই সবার আগে ঘরে ফেরানো হবে। মায়ানমারের রাজধানী নাইপিদাওয়ে বাংলাদেশের বিদেশসচিব শহিদুল হকের সঙ্গে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গোষ্ঠীর দীর্ঘ বৈঠকের পর এক চুক্তি স্বাক্ষর শেষে মঙ্গলবার একথা জানান সু কি সরকারের বিদেশসচিব মিন্ট খোয়ে।
[মায়ানমারে সেনার হাতে খুন ৬৭০০ রোহিঙ্গা, তথ্য আন্তর্জাতিক সংস্থার]
জয়েন্ট ওয়ার্কিং গোষ্ঠীর দীর্ঘ বৈঠকে এদিন ঠিক হয়েছে, শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর জন্য সীমান্তে পাঁচটি ট্রানজিট ক্যাম্প খুলবে বাংলাদেশ সরকার। বার্মিজ সেনার সঙ্গে আলোচনা করেই দলে দলে ওপারে পাঠানো হবে রোহিঙ্গাদের। ওপারে যাওয়ার পর পৃথক দু’টি ক্যাম্পে রেখে পরীক্ষা করবে মায়ানমার পুলিশ ও সেনা। সহজ কথায় সু কি সরকার দেখে নেবে যে সমস্ত রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সন্ধানে তল্লাশি চালানো হচ্ছিল তারা শরণার্থীর ভিড়ে মিশে ফের দেশে ঢুকে পড়ছে কি না। শহিদুল-মিন্ট বৈঠকে একটি নির্দিষ্ট ‘ফর্ম’ চূড়ান্ত করেছে দুই দেশ। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গোষ্ঠী ঠিক করেছে, প্রতিটি পরিবারকে একটি করে ইউনিট ধরে পুনর্বাসন দেওয়া হবে। এদিনের বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় দুই দেশ, তা হল-‘অনাথ ও আকাঙ্ক্ষিত ঘটনায়’ জন্ম নেওয়া শিশুদের পুনর্বাসনে বিশেষ গুরুত্ব দেবে মায়ানমার সরকার। রাষ্ট্রসংঘ এমন শিশুদের পুনর্বাসনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার জন্য সুপারিশ করে। উল্লেখ্য, সেনা নিপীড়ন ও পালিয়ে আসার সময় দুর্বৃত্তদের হাতে বহু নারী ও কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আর এই ঘটনার জেরে জন্ম নিয়েছে পিতৃপরিচয়হীন বহু শিশু। সেই সমস্ত সন্তানদের পুনর্বাসনের বিশেষ গুরুত্ব দিতে সম্মত হয়েছে দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গোষ্ঠী।
পাকিস্তানের আইএসআই-এর চক্রান্তে জঙ্গিদের সঙ্গে মায়ানমার সেনার সংঘর্ষের জেরে গত ২৫ আগস্ট থেকে উৎপীড়ন শুরু হয় নিরীহ রোহিঙ্গাদের উপর। জঙ্গি অনুসন্ধানের নামে গ্রামে গ্রামে ঢুকে পুরুষদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের হত্যা করে মায়ানমার সেনা ও মগ-দুবৃর্ত্তরা। প্রাণভয়ে পালিয়ে কক্সবাজার ও টেকনাফে আশ্রয় নেন প্রায় ছয় লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী। এর আগে ১৯৯২ সাল থেকেই দফায় দফায় আরও চার লক্ষ রোহিঙ্গা এসে বিভিন্ন শিবিরে আশ্রয় নিয়ে আছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরম মমতায় অসহায় লক্ষ লক্ষ শরণার্থীকে আশ্রয়, খাদ্য ও ওষুধ-পথ্যের ব্যবস্থা করেন।
২৩ নভেম্বর নাইপিদাওয়ে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী মামুদ আলি এবং মায়ানমারের বিদেশমন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ের মধ্যে শরণার্থী ফিরিয়ে নেওয়া নিয়ে সমঝোতাপত্র সাক্ষরিত হয়। কিন্তু দু’মাস কেটে যাওয়ার পরেও তা কার্যকর হচ্ছিল না। চাপে পড়ে শেষে এদিন নাইপিদাও জয়েন্ট ওয়ার্কিং গোষ্ঠীর বৈঠকে বসে। সেখানেই শরণার্থী ফিরিয়ে নেওয়া নিয়ে ডেটলাইন চূড়ান্ত হয়। এদিন দুই দেশে দু’বছরের সময় নির্ধারিত করলেও প্রশ্ন রয়েছে চুক্তিটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা নিয়ে। কারণ, এবছরের শেষেই নির্বাচনের মুখোমুখি হচ্ছে হাসিনা সরকার। স্বভাবতই সরকার যখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকবে তখন ওই শরণার্থী ফেরতে কতটা মনযোগ দিতে পারবে ঢাকা? আর ঢাকায় যদি সরকার বদল হয় তখন কী হবে? কারণ, শেখ হাসিনা যতটা আন্তরিক মমতায় এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন ততটা সহজ-সরল কি হবে নতুন সরকার? চিন্তায় রোহিঙ্গারাও।
[রোহিঙ্গা নির্যাতনের মাশুল দিতে হবে মায়ানমারকে, হুমকি আল কায়েদার]
The post অবশেষে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরাতে চুক্তি স্বাক্ষর মায়ানমারের appeared first on Sangbad Pratidin.