বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ৩০ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত জোড়ো যাত্রা। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বিজেপি বিরোধী যে ২২টি দলকে সেখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তারমধ্যে ক’টি দল সমাবেশে যোগ দেয় তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ে কংগ্রেস।
সোমবারের সমাপ্তি মঞ্চে পাহাড়ি রাজ্যের তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুখ আবদুল্লাহ (Farooq Abdullah) ও তাঁর পুত্র ওমর এবং পিডিপির মেহবুবা মুফতি (Mehebooba Mufti) উপস্থিত থাকবেন। যাত্রায় যোগ দিয়ে প্রবীন নেতা ফারুখ আবদুল্লাহ বুকে টেনে নেন রাহুল ও প্রিয়ঙ্কাকে। ফারুখ পুত্র ওমরের সঙ্গে রাহুলের বন্ধুত্ব অনেক দিনের। বাবার মতো ওমরও বন্ধু রাহুলের যাত্রার প্রশংসা করেছেন। কিন্তু কংগ্রেস ও রাহুলের প্রশংসায় ফারুখ এবং ওমরকে ছাপিয়ে গিয়েছেন পিডিপি (PDP) নেত্রী তথা রাজ্যের আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। শনিবার পা মিলিয়েছেন রাহুলের যাত্রায়। এদিন পুলওয়ামায় শহিদ জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানাতে যান রাহুল।
[আরও পড়ুন: প্রশ্নপত্রের খসড়া আগাম জানতেন কুন্তল, পার্থর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে মিলল তথ্য]
রাহুলের পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে ভূস্বর্গে নয়া রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ২০১৯-এর ৫ অগাস্ট কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ করে সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদটি (Article 370) বাতিল করে। সেই সঙ্গে রাজ্যটি দুই ভাগে ভাগ করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ গঠন করে। ভেঙে দেওয়া হয় বিধানসভা। সেই সঙ্গে গৃহবন্দি করা হয় প্রাক্তন তিন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক, ওমর এবং মেহবুবাকে। বেশ কয়েক মাস গৃহবন্দি থাকার পর সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরেছেন তিনজনই। কংগ্রেস সরাসরি সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা না করে বিধানসভায় আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পদক্ষেপ করা উচিত ছিল বলে জানায়। তবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের গৃহবন্দি করার সিদ্ধান্তেরও তীব্র সমালোচনা করেন সোনিয়া (Sonia Gandhi), রাহলরা। সংসদেও সরব হন প্রাক্তন দুই কংগ্রেস সভাপতি।
ইতিমধ্যে বিধানসভা ভোটের ঢাকে কাঠি পড়েছে রাজ্যে। এ বছরের শেষ অথবা আগামী বছরের গোড়ায় বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। আবার উপত্যকার নেতা গুলাম নবি আজাদ (Ghulam Nabi Azad) কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে নিজের দল গড়লেও তেমন সাড়া পাননি। কংগ্রেস শিবির মোটের উপর অক্ষত উপত্যকায়। এবার উপত্যকার মুল তিন নেতা রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রায় যোগ দিয়ে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে জোটের রাস্তা খুলে রাখলেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: সীমান্তে চিনের আচরণ অপ্রত্যাশিত! ‘চিকেন নেক’ রক্ষার্থে শিলিগুড়ি করিডরে কড়া নজর সেনার]
অন্যদিকে, ভারত জোড়ো যাত্রায় রাহুলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন কংগ্রেস। নিরাপত্তায় গাফিলতির অভিযোগ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে (Amit Shah) চিঠি দেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। দিল্লিতে রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রা চলাকালীন নিরাপত্তার গাফিলতিতে সরব হয়েছিল কংগ্রেস। রাহুলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআরপিএফের (CRPF) বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তোলা হয়। এখন পদযাত্রা শ্রীনগরে প্রবেশ করেছে। সোমবার পদযাত্রার শেষদিন। তার আগে আরেকবার রাহুলের নিরাপত্তা নিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে অভিযুক্ত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে (Amit Shah) চিঠি দিলেন মল্লিকার্জুন খাগড়ে। চিঠিতে লেখেন, প্রথম থেকেই ভারত জোড়ো যাত্রায় ব্যাপক ভিড় হচ্ছে। তাই যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তা করছে না কেন্দ্রীয় বাহিনী। তারজন্য শুক্রবার আরও একবার পদযাত্রা মাঝপথে বন্ধ রাখতে হয়। সোমবার পদযাত্রা শেষে যে সমাবেশ হবে সেখানে দেশের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতৃত্ব হাজির থাকবেন। এছাড়াও সমাবেশে ব্যাপক ভিড় হবে। তাই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা করার আবেদন জানান খাড়গে।