বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: এসজেডিএ-র জমি কেলেঙ্কারিতে উঠে আসতে পারে একাধিক দেবাশিস প্রামাণিকের নাম। ভূমি ও রাজস্ব দপ্তরের অনুসন্ধান শুরু হতে তেমনই আভাস মিলছে। সেই আতঙ্কের জ্বরে এখন রীতিমতো কাঁপন ধরেছে শহর শিলিগুড়ির শরীরে। শনিবার ভূমি ও রাজস্ব দপ্তরের কর্তারা গজলডোবায় এসজেডিএ-র এক বোর্ড সদস্যদের দখলে থাকা আট বিঘা সরকারি জমির (খাস) খোঁজ পেয়েছেন। এখানে আরও সরকারি জমি দখল হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠেছে, হরির লুঠের বাতাসার মতো বিভিন্ন কায়দায় মোটা টাকার বিনিময়ে সরকারি জমি বেসরকারি সংস্থা এবং মাফিয়াদের হাতে তুলে দিয়ে প্লট করে বিক্রি হয়েছে।
বেআইনি আবাসন তৈরির অনুমোদনেও রয়েছে মোটা টাকা লেনদেনের অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেদখল হয়ে যাওয়া সরকারি জমি উদ্ধারের নির্দেশ দিতে প্রশাসন নড়েচড়ে বসায় আরও প্রচুর অভিযোগ সামনে আসতে শুরু করেছে। শুধু জমি সংক্রান্ত নয়, সরকারি প্রকল্পের টাকা হাফিস করার অভিযোগও উঠেছে এসজেডিএ-র বিরুদ্ধে। হঠাৎ রহস্যজনক কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া ওই সংস্থার বিরুদ্ধে দু’শো কোটি টাকা দুর্নীতির তদন্ত শেষ করার দাবিতে সরব হয়েছে বামেরা।
[আরও পড়ুন: ওভারহেডের তার ছিঁড়ে বিপত্তি, শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখায় বন্ধ ট্রেন চলাচল, ভোগান্তিতে যাত্রীরা]
মোটা টাকার বিনিময়ে সরকারি জমি মাফিয়াদের হাতে তুলে দিয়ে প্লট করে বিক্রির অভিযোগ যে অমূলক নয় সেটা শুক্রবার থেকে শুরু ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের অভিযানে ক্রমশ স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ এলাকার ফাঁসিদেওয়া, খড়িবাড়ি, নকশালবাড়ি ও মাটিগাড়া ব্লকে অন্তত ৮২ একর সরকারি জমি বেহাত হয়েছে। সবথেকে বেশি সরকারি জমি বেদখল হয়েছে নকশালবাড়ি ব্লকে। পরিমাণ প্রায় ৩৯ একর। এটা গেল সরকারি জমি বেদখল। পাশাপাশি এসজেডিএ-র দেওয়া ল্যান্ড ইউজ কম্প্যাটিবিলিটি সার্টিফিকেট (এলইউসিসি) ঘিরেও ভুড়িভুড়ি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ইস্টার্ন বাইপাস, মাটিগাড়া, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সংলগ্ন বেশকিছু এলাকায় বেপরোয়াভাবে বহুতল নির্মাণের অনুমতি নিয়ে অনেকদিন থেকেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর বিভিন্ন মহলে খোলাখুলি অভিযোগ উঠেছে বেআইনিভাবে ‘ল্যান্ড ইউজ কম্প্যাটিবিলিটি সার্টিফিকেট’-এর ব্যবস্থা করে মোটা টাকা রোজগারের চক্র গড়ে উঠেছে এসজেডিএ-কে ঘিরে। সেই মধুতে রাতারাতি ফুলেফেঁপে বৈভবে দেবাশিস প্রামাণিকের মতো কিছু নেতার জীবনযাত্রা পালটেছে। বেদখল হয়ে যাওয়া সরকারি জমি উদ্ধার অভিযান শুরু হতে তাদের মাথায় বাজ পড়েছে।
[আরও পড়ুন: বাবাকে খুন করে বাগানে পুঁতল ছেলে! অনুশোচনায় বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা]
এদিকে সুযোগ বুঝে বামেরা প্রশ্ন তুলেছে, এর আগে এসজেডিএ-র ২০০ কোটি টাকা দুর্নীতির ঘটনার তদন্ত কয়েকজন আমলা, ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেপ্তারের পর থমকে গেল কেন? যে তৃণমূল নেতা, বোর্ড সদস্যদের বিরুদ্ধে ২০০ কোটি টাকার দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ ছিল, তাদের কেন শাস্তি হল না? দুর্নীতির তদন্তকারী পুলিশ কমিশনার কে জয়রামনকে কেন পাঠানো হয়েছিল কম্পালসারি ওয়েটিং-এ? দার্জিলিং জেলা সিপিএম সম্পাদক সমন পাঠক বলেন, ‘‘আগের ২০০ কোটি টাকার দুর্নীতির ঘটনা পুরো ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। এবার তো শুধু জমির কথা বলছে। সেটাও শেষ পর্যন্ত কতদূর এগোবে সন্দেহ আছে। কারণ ঘটনার সঙ্গে অনেক হেভিওয়েট জড়িত।’’ তিনি অভিযোগ করেন, কাওয়াখালিতে প্রায় দুশো একর জমি এসজেডিএ-র মাধ্যমে প্রথমে হিডকো এবং পরে হাত বদল হয়ে বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে। কেন এবং কিসের বিনিময়ে উপনগরীর নামে নির্দিষ্ট জমি দখল হাতবদল হয়েছে সেটা কি খতিয়ে দেখা হবে! শনিবার ভূমি ও রাজস্ব দপ্তরের কর্তারা দখল হয়ে যাওয়া সরকারি জমির খোঁজে গজলডোবায় যান। সঙ্গে ছিলেন রাজগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক খগেশ্বর রায়। তিনি বলেন, ‘‘যে যার মতো সরকারি জমি ঘিরে রেখেছে। বলেছি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে।’’ জানা গিয়েছে, এখানেই এসজেডিএ-এর এক বোর্ড সদস্যদের দখলে থাকা আট বিঘা সরকারি জমির খোঁজ মিলেছে।