সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চলতি বছরেই নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন ইরানে নারী স্বাধীনতা আন্দোলনের নেত্রী নার্গিস সাফি মহাম্মদি। জেলে বন্দি থাকা অবস্থাতেই নোবেল জিতেছিলেন তিনি। এবার জেলেই অনশন আন্দোলন শুরু করলেন তিনি। কারাগারে বন্দিদের চিকিৎসায় ইরান প্রশাসনের উদাসীনতা ও হিজাব নিয়ে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তাঁর এই প্রতিবাদ।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, সোমবার থেকে অনশন শুরু করেছেন নোবেলজয়ী নার্গিস। যা নিয়ে ‘ফ্রি নার্গিস মহাম্মদি ক্যাম্প্যান’ -এর তরফে বলা হয়েছে, নার্গিস এভিন জেল থেকে বার্তা দিয়েছেন, কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি অনশন শুরু করেছেন। এই বিষয়ে যেন তাঁর পরিবারকে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কেন তাঁর এই সিদ্ধান্ত? জানা গিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নার্গিসের ফুসফুসের চিকিৎসার জন্য তাঁর আইনজীবী একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করার আবেদন জানাচ্ছেন। কিন্তু এখনও সেই নিয়ে জেল কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। পাশাপাশি নার্গিসের দাবি, এমনকী কারাগারের অন্যান্য বন্দিদেরও চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। যা নিয়ে উদাসীন মনোভাব দেখাচ্ছে প্রশাসন। এক বিবৃতিতে ‘ফ্রি নার্গিস মহাম্মদি ক্যাম্প্যান’-এর তরফে জানানো হয়েছে, নার্গিসের এই অনশন মূলত দুটি কারণে। এক, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের নীতি নির্ধারণে বিলম্ব এবং অসুস্থ বন্দিদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না করা। যার ফলে তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি। দুই, ইরানের মহিলাদের উপর কঠোর হিজাব নীতি চাপিয়ে দেওয়া।
[আরও পড়ুন: যুদ্ধের আগুনে পুড়ছে ইতিহাস! বন্দরনগরী ওডেসা কাঁপছে রুশ বোমায়]
৫১ বছর বয়সি এই সমাজকর্মীকে একাধিকবার হেনস্তা করেছে ইরানের প্রশাসন। সবমিলিয়ে মোট ১৩ বার গ্রেপ্তার হয়েছেন নার্গিস। পাঁচটি অভিযোগে ইতিমধ্যেই তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছে ইরানের আদালত। এখনও ১৫৪টি অভিযোগ রয়েছে নার্গিসের বিরুদ্ধে। আপাতত ৩১ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন তিনি। জেলে বন্দি থাকা অবস্থাতেই নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন নারী স্বাধীনতার জন্য সওয়াল করা নার্গিস। সমাজের জন্য কাজ করতে বারবার ব্যক্তিগত জীবনে মূল্য চোকাতে হয়েছে তাঁকে। ইরানের নিপীড়িত নারীদের স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন লড়াই করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই মাহসা কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটে ইরানে। ঠিকমতো হিজাব না পরায় পুলিশি মারে প্রাণ হারায় আরও এক কিশোরী। আরমিতা জেরাভান্দ নামের ওই কিশোরী ২৮ দিন কোমায় ছিলেন। গত ৩ অক্টোবর তেহরান মেট্রোয় ওই কিশোরীকে প্রবল মারধর করে সরকারি বাহিনীর লোকজন। ঘটনাটি চেপে যাওয়ার জন্য তার পরিবারের উপর চাপ তৈরি করছে প্রশাসন। অবশেষে গত ২৮ অক্টোবর হাসপাতালে মৃত্যু হল সেই কিশোরীর। এর আগে ২০২২-এর ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানে নীতি পুলিশের মারে মৃত্যু হয় ২২ বছরের কুর্দ তরুণী মাহসা আমিনির। তার পর থেকেই হিজাবের শিকল ভেঙে ফেলতে বেনজির গণউত্থানের সাক্ষী থেকেছে ইসলামিক দেশটি। তবে ‘মোল্লাতন্ত্রে’র নিয়ন্ত্রণে থাকা তেহরানে পরিস্থিতি বিশেষ পালটায়নি। রাষ্ট্রের মদতে নারী নির্যাতন অব্যাহত। যা নিয়ে আরও একবার প্রতিবাদে নামলেন জেলবন্দি নোবেলজয়ী।