shono
Advertisement

হেঁশেলে মুরগির আসন টলাতে রাজ্য আনছে ৩০ টাকা কেজির মাংস

গুগলি বলে চিকেন আউট! The post হেঁশেলে মুরগির আসন টলাতে রাজ্য আনছে ৩০ টাকা কেজির মাংস appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 03:55 PM Dec 18, 2016Updated: 02:16 PM Dec 21, 2016

সুদীপ রায়চৌধুরি: আমবাঙালির হেঁশেলে ব্রয়লার মুরগির শক্তপোক্ত উইকেট ফেলতে ‘গুগলি’-র শরণাপন্ন রাজ্য মৎস্য দফতর৷
‘গুগলি’ মানে গুগলির মাংস৷ গাঁ-গঞ্জের খাল-বিল-ডোবায় অজস্র মেলা যে বস্তু প্রান্তিক মানুষজনের বড় প্রিয়৷ পল্লিবাংলার অতি পরিচিত সেই আমিষ পদ এবার নাকউঁচু শহুরে বাঙালিকে খাওয়াতে কোমর বাঁধছে মৎস্য দফতরের অধীনস্থ রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগম৷ দোকান, বাজার, শপিং মল তো বটেই, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এই মাংস বেচতে নিগমকর্তাদের নজর মহানগরীর অভিজাত ক্লাব, নামী রেস্তোরাঁ এমনকী পাঁচতারা হোটেলের দিকেও৷
রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৌম্যজিৎ দাশ জানাচ্ছেন, নতুন বছরের প্রথমদিকেই প্যাকেটজাত গুগলির মাংস বাজারে নিয়ে আসার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে৷ জল থেকে তোলার পর খোলা ছাড়িয়ে, গরম জলে ধোয়ার পর প্যাকেটবন্দি করা হবে এই গুগলি৷ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্যাকেটবন্দি করা ‘কিমা’ ও ‘মাংস’– এই দুই চেহারায় বাজারে আনা হবে গুগলি৷ দামও রাখা হবে অত্যন্ত কম৷ কেজি প্রতি ৩০ টাকা মাত্র! পরে ধীরে ধীরে আনা হবে গুগলির মাংসের চপ, গুগলির মাংসের মোমো, ফিশ কচুরির অনুকরণে গুগলি কচুরি, গুগলির পরোটা, গুগলির কিমা চচ্চড়ির মতো রেডিমেড পদ৷
“আগামী জানুয়ারিতে নলবন ফুড পার্কে বার্ষিক মাছ উৎসবের আসর বসছে৷ এবার এই উৎসবের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ৷ সেই উপলক্ষে এই উৎসবেই আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হবে গুগলির৷ গুগলির মাংস ও গুগলির চপ-মোমো-কচুরির মতো রেডিমেড পদ– দুইয়েরই৷” জানাচ্ছেন রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের এমডি৷
পুষ্টিবিদদের মতে গুগলি বা ‘হেলিক্স অ্যাসপেরসা’র মাংস মুরগি, খাসি বা অন্য যে কোনও মাংসের থেকে বেশি উপকারী৷ প্রতি ১০০ গ্রাম গুগলির মাংস ৯০ ক্যালোরি শক্তির জোগান দেয়৷ প্রোটিনের পরিমাণ ১৬.৫ গ্রাম৷ পাশাপশি কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট– এই দুইয়েরই পরিমাণ অত্যন্ত কম৷ ১০০ গ্রাম গুগলির মাংসে কার্বোহাইড্রেট থাকে মাত্র ২ গ্রাম, ফ্যাট সাকুল্যে ১.৬ গ্রাম৷ সামুদ্রিক মাছের মতো গুগলির মাংসেও প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩’ রয়েছে৷ আছে প্রচুর ভিটামিন বি-১২, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো পদার্থ৷ যে কারণে গ্রামে-গঞ্জে প্রান্তিক দরিদ্র সমাজে প্রোটিন খাদ্য হিসাবে গুগলির চাহিদা প্রবল৷ চিকিৎসকদের মধ্যেও একটা বড় অংশ সন্তানসম্ভবা বা প্রসবের পর গ্রামীণ মহিলাদের রোজকার খাদ্যতালিকায় গুগলির মাংসকে রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷
শুধু পুষ্টিগুণের কারণে নয়৷ স্বাদের কারণেও গুগলির কদর খাদ্য রসিকদের কাছে যথেষ্ট৷ ফরাসি সমাজে ঝিনুক বা ‘ওয়েস্টার’-এর মতো গুগলি বা ‘স্নেল’-এরও বিস্তর কদর৷ আর সব কিছুর মতো বিশ্বায়নের দৌলতে এই গুগলির নানবিধ পদ গোটা ইউরোপে আজ ছড়িয়ে পড়েছে৷ এদেশেও গুগলি বহু প্রাচীন দেশীয় পদ৷ গ্রামীণ ভারতে এর জনপ্রিয়তা অপরিসীম৷ অত্যন্ত সহজলভ্যও বটে৷ কিন্তু তার পরও খোলা ছাড়ানো, পরিষ্কার করা ইত্যাদি ঝামেলা থাকায় শহরের উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত মানুষ এই অতি উপকারী ও সুস্বাদু মাংসের স্বাদ থেকে বঞ্চিত৷ সেই ফাঁক ভরাতেই রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের এই উদ্যোগ৷
সম্প্রতি নলবনে নিজেদের রেস্তোরাঁয় ফুড ইন্ডাস্ট্রি’র সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনকে নিমন্ত্রণ করে রান্না করা গুগলির মাংস খাইছেন সৌম্যজিৎবাবু৷ তাঁর দাবি, “ওঁরা তো খেয়ে লাফাচ্ছেন৷ সেই প্রতিক্রিয়া দেখেই আমাদের সাহস আরও বেড়ে গিয়েছে৷” সৌম্যজিৎবাবুর কথায়, “আমিষ খাবারের জগতে ব্রয়লার মুরগির কদর এখন সব থেকে বেশি৷ যার অন্যতম কারণ এর স্বল্প মূল্য৷ যে কারণে ব্রয়লারের স্বাদ একঘেয়ে হয়ে যাওয়ার পরও মানুষ চিকেনের বাইরে বেরোতে পারছে না৷ এই জায়গা থেকেই গুগলির মাংসের সাফ্যলের সোনালি রেখা দেখছি আমরা৷ ঠিকমতো বিপণন করতে পারলে হয়তো আগামিদিনে আমবাঙালির হেঁশেল থেকে চিকেনের শক্তপোক্ত আসন টলিয়ে দেবে গুগলি৷ মানে চিকেন আউট৷ গুগলি ইন৷”
বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল নিগম কর্তাকে৷

Advertisement

The post হেঁশেলে মুরগির আসন টলাতে রাজ্য আনছে ৩০ টাকা কেজির মাংস appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement