অর্ণব দাস, বারাসত: কথায় আছে, 'চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা/ যদি না পড়ো ধরা'। কথাটা একটু বদলে ফেলে বলাই যায়, চুরি শিল্প বড় শিল্প, এমনকী যদি ধরাও পড়ে! ভাবছেন তো কেন এমন কথা বলা হচ্ছে? বারাসত থেকে সদ্য ধরা পড়া এক চোরকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সাতকাহন শুনে একথা বললে অত্যুক্তি হয় না। বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে বারাসতে ঢুকে পড়া চোর একাই একশো। তার চুরির পদ্ধতি শুনে শিল্পের কথাই মনে হয়। এত গুছিয়ে চুরি করা এবং চুরির সামগ্রী দিয়ে ফ্ল্যাট গোছানো - সমস্ত কাজে তার নৈপুণ্য দেখে তাজ্জব হয়ে যাচ্ছেন দুঁদে পুলিশকর্তারাও। শত সাবধান সত্ত্বেও এ চোরের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া কিঞ্চিৎ কঠিন বইকী। কারণ, তার কাজের কেতা তো আর পাঁচজন চোরের মতো নয়। তবু বারাসত পুলিশ বলছে, সাবধান হোন।
'কারও পৌষমাস, তো সর্বনাশ'। তবে এই প্রবাদ বাক্য উৎসবের মরশুমেও যে সত্যি হয়ে যেতে পারে, কে-ই বা ভেবেছিল? দুর্গাপুজোর সময় কলকাতার ঠাকুর দেখার টানে যাঁরা বারাসত থেকে বিকেলে পাড়ি দিয়েছিলেন, এই শারদোৎসবে সেই চার-পাঁচটি পরিবারের তো সর্বনাশ। আর চোর বাবাজির একেবারে 'পৌষমাস'। চুরির সামগ্রী দিয়েই সে এর মধ্যে ভাড়ার ফ্ল্যাট সাজিয়ে ফেলেছে! পুলিশের জালে ধরার পড়ার পর চোর নিজেই সব ফাঁস করেছে।
বারাসতের পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খড়িয়া সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে চোর-কাহিনি বর্ণনা করেছেন। চোরের নাম মিজানুর তালুকদার। এবছর পুজোর আগে বাংলাদেশ থেকে স্ত্রীকে নিয়ে অনুপ্রবেশ করে এপাড়ে। বারাসত হাসপাতালের কাছে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ছিল সস্ত্রীক মিজানুর। পুজোর মরশুমে সে চারপাশে রেকি শুরু করে। লক্ষ্য একটাই, ফাঁকা বাড়ি সাফসুতরো করে ফেলা। আর সেই কাজে সে সফলও হয়েছে। দুর্গাপুজোর সময় বারাসতের আশেপাশে একাধিক বাড়িতে চুরি করেছে মিজানুর। যেখান থেকে যা সোনা পেয়েছে, বাড়ি ফিরে নিজস্ব তুলাযন্ত্রে তা মেপেছে। এভাবেই ভাড়ার ফ্ল্যাটকে সে সাজিয়ে তুলছিল।
সাংবাদিক বৈঠকে বারাসতের পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খড়িয়া।
দুর্গাপুজো থেকে কালীপুজো, উৎসবের মরশুমে একাধিক চুরির অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে বারাসত জেলা পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য নমুনা পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে এটা স্পষ্ট হয়, কোনও গ্যাং নয়, একজন একাই চুরি করছে। সেই 'লোন থিফ'ই মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে পুলিশের। অবশেষে প্রায় একমাস পর মিজানুর তালুকদার নামে ওই চোরকে পাকড়াও করা হয়। আর পুলিশি জেরার মুখে পড়ে নিজের কীর্তি নিজেই বলে দিয়েছে। বাংলাদেশি মিজানুরের পেশাই চুরি করা। একেবারে দিনক্ষণ তিথি দেখে চুরি করতে যেত। নিশুত রাত বা ভরদুপুরে নয়, বিকেল থেকে সন্ধে পর্যন্ত ছিল তার 'অপারেশন' টাইম। কারণ, রেকিতে সে দেখেছিল, ওই সময়টাতেই বাড়িতে লোকজন থাকেন না। দুয়ারে তালা লাগিয়ে তাঁরা বেরন। সুতরাং, ফাঁকা বাড়িতে মন খুলে হাতসাফাই।
এসব কীর্তির পর পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খড়িয়ার আবেদন, যাঁরা বাড়ি বা ফ্ল্যাটভাড়া দিচ্ছেন, তাঁরা অবশ্যই পরিচয়পত্র এবং অন্যান্য নথি যাচাই করে নিন। থানাতেও জানিয়ে রাখুন। নইলে ফাঁকতালে বাড়ি ফাঁকা হওয়ার খুব আশঙ্কা থাকবে।