সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ওআরএস। জলবাহিত রোগ আটকাতে এই পানীয়র কোনও বিকল্প নেই। শরীরে লবণ, চিনি এবং অন্যান্য ফ্লুইডের পরিমানে ভারসাম্য রাখে এই থেরাপি। জানেন কী, এক বাঙালির হাত ধরে পাদপ্রদীপে এসেছে এই ওআরএস। বেঁচেছে দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষের প্রাণ। স্রষ্টার নাম দিলীপ মহলানবিশ। পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের উন্নয়নে সম্প্রতি এক কোটি দান করেন মহলানবিশ দম্পতি।
[হাঁটার গতিই বলে দেবে আপনি কতটা অসুস্থ]
শিশু চিকিৎসক হিসাবে পরিচিত হলেও এর বাইরে একটি দুনিয়া আছে মহলানবিশের। পার্ক সার্কাসের এই স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁর যোগ দীর্ঘদিনের। কীভাবে শিশু হাসপাতালটিকে আরও আধুনিক করা যায় তার জন্য এই চিকিৎসকের পরিকল্পনা ছিল অনেক দিন। কাজে গতি আনতে ওই প্রতিষ্ঠানকে দিলীপবাবু এবং তাঁর স্ত্রী ১ কোটি টাকা দান করেছেন। তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত ওআরএস সমাজের সব স্তরের মানুষের কাছে তাঁকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। গবেষকরা বলেন ওষুধ আবিষ্কারে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বড় প্রাপ্তি হল এই ওআরএস। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় কলেরায় সে দেশের মানুষ নাস্তানুবাদ হয়ে পড়েছিলেন। গাঁ উজাড় হওয়ার অবস্থা হয়েছিল। তখন দিলীপবাবুর হাতযশে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি মৃত্যুমুখ থেকে ফেরান।
[প্রতিবন্ধকতা বাধা নয়, এক হাতেই মৃন্ময়ী দশভুজা গড়ছেন জগদীশ]
৭১-এর যুদ্ধের সময় বনগাঁয় দাঁড়িয়ে থেকে গোটা কর্মকাণ্ড সামলেছিলেন এই ডাক্তার। সেই অশান্ত সময়ের কথা এখনও গড়গড়িয়ে বলে যান হার না মানা যোদ্ধা। দিলীপবাবুর কথায়, কাজটা অত্যন্ত কঠিন ছিল। ডায়েরিয়া এবং কলেরা সামলানোর মতো টোটকা সেই মুহূর্তে কারও জানা ছিল না। তবুও বিশ্বাস ছিল চোখের সামনে নিরীহদের মৃত্যু আটকানো যাবে। নাগালে থাকা চিনি এবং নুন জলে মিশিয়ে লড়াইটা শুরু হয়। যা অসুস্থদের শরীরে ভারসাম্য রাখতে ম্যাজিকের মতো কাজ করতে থাকে। উদ্বাস্তু শিবিরগুলিতে তাঁর এই টোটকার সাফল্য দেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওআরএসকে স্বীকৃতি দেয়। মূলত তাদের উদ্যোগে দুনিয়া জুড়ে ওআরএস ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জে বিভিন্ন দেশের উদ্বাস্তু শিবিরগুলিতে জলবাহিত রোগ আটকাতে ওআরএসের বাইরে আর কিছু ভাবেনি। যার ফলে মৃত্যুহার অনেকটাই কমানো সম্ভব হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি তথ্য বলছে, ৯০-এর দশকের আগে প্রতি বছর জলবাহিত রোগে ১২ লক্ষ মানুষ বেঘোরে প্রাণ হারাতেন। ২০১০-এ সংখ্যাটা ১০ লক্ষের নিচে নেমে এসেছে। ওআরএস নিয়ে কাজের যাবতীয় স্বীকৃতি শিক্ষক ধীমান বরুয়াকে দিয়েছেন তাঁর সুযোগ্য ছাত্র দিলীপ মহলানবিশ। সল্টলেকের বাড়িতে বসে ৮৪ বছরের যোদ্ধা অসুস্থদের জন্য নতুন টোটকা খুঁজে চলেছেন।
The post জানেন, শহরে এসে কী করলেন ORS-এর জনক এই বাঙালি? appeared first on Sangbad Pratidin.