shono
Advertisement

কপালের স্টিকার দেখে রোগীর চিকিৎসা চলছে মেডিক্যালে

সর্বত্রই অসহায়তার ছবি। The post কপালের স্টিকার দেখে রোগীর চিকিৎসা চলছে মেডিক্যালে appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:29 AM Oct 04, 2018Updated: 09:46 AM Oct 04, 2018

অর্ণব আইচ: এমার্জেন্সির লিফটের পাশে নাগাড়ে কাতরে চলেছেন অশীতিপর বৃদ্ধ। কপালে লিউকোপ্লাস্ট সাঁটা। তাতে লেখা ‘আইসিসিইউ কার্ডিও’। ক্যাথিটার খুলে ভিজে গিয়েছে চাদর। তারই মধ্যে স্যালাইনের বোতল হাতে নিয়ে চিৎকার করে চলেছেন সনৎ কাঁড়ার। চিকিৎসা করবেন কী! ডাক্তারবাবু তো ওঁর কথার একবর্ণও বুঝতে পারছেন না!

Advertisement

সুপার অফিসের সামনে খোলা আকাশের নিচে মায়ের কোলে শুয়ে সতেরা বছরের কিষানকুমার দারি। রাতে এক বোতল রক্ত চলেছে। এখন চলছে স্যালাইন। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত কিষানের রক্তে ছোবল দিয়েছে হেপাটাইটিসও। আবার হেমাটোলজির ২ নম্বর বেডে ভরতি ছিল সুমিতা মুণ্ডা। সতেরো বছরের কিশোরীর কেমো চলছে। আগুনের আঁচে টালমাটাল হয়ে অন্য অনেক রোগীর মতো সেও মা সুচিত্রা মুণ্ডার সঙ্গে হেঁটে হেঁটে এল মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবে।

বুধবার সকালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে অগ্নিকাণ্ডের জেরে সার্বিক রোগী দুর্ভোগের খণ্ডচিত্র। সকাল সাড়ে সাতটায় আগুন লাগে। আটটা পর্যন্ত সনৎবাবু, কিষান, সুমিতাদের মতো শ আড়াই রোগীর ঠিকানা ছিল এমসিএইচ বিল্ডিং। কেউ দোতলার মেডিসিন বিভাগে, কেউ চারতলার হেমাটোলজিতে। কেউ তিনতলার ক্রনিক মেডিসিনে। দুর্ঘটনার পর সবাই ঠাঁইনাড়া। প্রথমে এমসিএইচ বিল্ডিংয়ের সামনে খোলা আকাশের নিচে। তারপর অন্যান্য বিল্ডিংয়ের কোণে কোণে। এমার্জেন্সি অবজারভেশন ওয়ার্ড, এজরা ওয়ার্ড, মাদার অ্যান্ড চাইন্ড হাব, ইএনটি বিল্ডিং, অর্থোপেডিক ওপিডি ইত্যাদি। হার্টের রোগীর বুকে হাত বুলিয়ে দিয়েছেন ডেঙ্গু পেশেন্ট। হিমোফিলিয়া আক্রান্তের স্যালাইন বোতল ধরে আছেন বুকে জল জমা যুবক। অক্সিজেন নিতে নিতে একই বিছানা ভাগ করে নিয়েছেন তিন অশীতিপর। আগুনের আতঙ্ক সবাইকে এনে দিয়েছে এক বন্ধনীতে। 

সুখবর, এই প্রথম চতুর্থী থেকে সকাল ৮ টাতেই চালু মেট্রো ]

এদিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ ধোঁয়া দেখা যায় এমসিএইচ বিল্ডিংয়ের নিচে। তারপর সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে ধোঁয়া। হুগলির হরিপালের বাসিন্দা মদনমোহন দে কার্ডিওলজি বিভাগে ভরতি ছিলেন। অগ্নিকাণ্ডের পর সিঁড়ি বেয়ে নিজেই নেমে এসেছেন নিচে। আশ্রয় নিয়েছেন এমার্জেন্সির মেঝেতে। বললেন, “ঘুম ভেঙে দেখি ধোঁয়ায় চারদিক অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। সুইপাররা বললেন, বেরিয়ে চলে যান। আগুন লেগেছে। কোনওদিকে না তাকিয়ে হাতে স্যালাইনের বোতল নিয়ে ছুটতে শুরু করি। জানেন, আজ আমার ছুটি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যাব কী করে? আমার ফাইল তো ভিতরে রয়ে গিয়েছে। কী ওষুধ খাব কিছুই জানি না।” এমার্জেন্সি অবজারভেশন ওয়ার্ডের বাইরেই মেঝেতে চাদর পেতে শুইয়ে রাখা হয়েছে নদিয়ার সোনা বানু মণ্ডলকে। জেনারেল মেডিসিন বিভাগের ফিমেল ওয়ার্ডের ২৮৭ নম্বর বেডে ভরতি ছিলেন তিনি। স্যালাইন চলছে। টানাটানিতে চ্যানেল বেয়ে রক্ত গড়াচ্ছে। অর্ধচেতন অবস্থা। মাথায় টিউমার ধরা পড়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে এমআরআই করাতে নিয়ে যায়। কিন্তু হয়নি। আজ আবার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই এই অবস্থা। এজরা বিল্ডিং। ইএনটি বিল্ডিং সর্বত্রই অসহায়তার ছবি। বেশিরভাগ রোগীই বেড হেড টিকিট সঙ্গে নিয়ে বেরোতে পারেননি। ফলে, ডাক্তাররা বুঝে উঠতে পারেননি রোগীকে কী ওষুধ কী ডোজে দেবেন। অনেক রোগীর সঙ্গে আবার বাড়ির লোক নেই। কেউ আবার ডামাডোলের মধ্য পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। কেউ চলে গিয়েছেন বাড়ি। অনেকেই এদিন ওষুধ পাননি। অনেকের এমআরাই, স্ক্যান, এক্স-রে, ব্লাড টেস্ট হয়নি। তবে, রোগীর পরিজনরাও একবাক্য স্বীকার করে নিয়েছেন, যেভাবে ডাক্তার, নার্স, অ্যাটেনড্যান্টরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রোগীদের পরিষেবা দিয়েছেন তা বহুদিন মনে থাকবে।

বঙ্গ বিজেপিতে রদবদল, নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক মুকুল রায় ]

The post কপালের স্টিকার দেখে রোগীর চিকিৎসা চলছে মেডিক্যালে appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement