একগাদা আশ্বাস, অথচ কাজের বেলায় সবই ডুমুরের ফুল। হেলথ ইনসিওরেন্স কিনে আপনারও কি এই অবস্থা হয়েছে? যা ভেবেছিলেন, তার কোনওটাই মনোমত হয়নি? ঘাবড়াবেন না। আপনি প্রথম নন। এহেন সমস্যায় জর্জরিত অনেকেই। লিখছেন শোহিনী চক্রবর্তী
কোনও বিশেষ নালিশ তথা অভিযোগ থাকলে বিমা কোম্পানির গ্রাহক ইনসিওরেন্স ওমবাডসম্যান বা বিমা লোকপালের দ্বারস্থ হতে পারেন- এটি আপনার অধিকারের মধ্যেই পড়ে। কাজেই এ ব্যাপারে কয়েকটি দরকারি কথা জেনে রাখুন। সেগুলি হল–
১. নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে স্থাপিত হওয়া ওমবাডসম্যান স্কিমটি সেটলমেন্টের বিলম্ব হওয়া, ক্লেম খারিজ হওয়া, প্রিমিয়াম পেমেন্ট সংক্রান্ত নালিশই মূলত মেটানোয় সাহায্য করে। এছাড়াও ‘মিসরিপ্রেজেন্টেশন’ সংক্রান্ত অভিযোগ শোনা হয় – যেখানে পলিসির শর্তাবলী নিয়ে নালিশ উঠেছে।
২. শুধু তাই নয়, ইনসিওরেন্স কোম্পানির এজেন্টরাও (ইন্টারমিডিয়ারি যাদের বলা হয়ে থাকে) লোকপালের নিয়মকানুনের অন্তর্গত।
৩. যদি প্রিমিয়াম দেওয়ার পরও আপনি পলিসি ডকুমেন্ট না পেয়ে থাকেন, অভিযোগ করুন। একই নিয়ম প্রযোজ্য হেলথ ইনসিওরেন্স নিয়েও।
৪. ইনসিওরেন্স অ্যাক্টের ব্যবহারে কোনও হেরফের নজরে এলেও অভিযোগ জানাতে পারবেন।
এবার আসুন সঠিক পদ্ধতিতে-কীভাবে অভিযোগ জানাবেন? কার কাছে যাবেন? কেমন ভাবে এগোবেন? এই প্রসঙ্গে মনে রাখুন –
১. টেরিটোরিয়াল জুরিসডিকশন খেয়াল করুন। অর্থাৎ, আপনার স্থানীয় ওমবাডসম্যানের অফিসেই যোগাযোগ করুন, অন্যত্র নয়।
২. যে কেউ অভিযোগ করতে পারেন। গ্রুপ পলিসিই হোক বা মাইক্রো ইনসিওরেন্স, কিছুই এর পরিধির বাইরে নয়।
৩. গ্রুপ পলিসিই হোক বা পারসোনাল অ্যাক্সিডেন্ট পলিসি, মেডিক্লেম, ব্যক্তিগত সম্পত্তির ইনসিওরেন্স- সমস্তই রয়েছে।
৪. লিখিত অভিযোগ করুন, নিজে করাই ভাল। বা অ্যাসাইনি/নমিনির সাহায্যও নিতে পারেন। ব্যক্তিগতভাবে এবং সরাসরি করুন। দরকারে পোস্টাল সার্ভিস (ডাক বিভাগের মাধ্যমে) ব্যবহার করুন।
৫. এক বছরের মধ্যে করুন। অর্থাৎ, ক্লেম সেটল না হলে বেশি দিন ফেলে রাখবেন না।
৬. যদি ইতিমধ্যে কনজিউমার ফোরামের সাহায্য নিয়ে থাকেন তাহলে লোকপালের কাছে
যাবেন না।
[আরও পড়ুন: বেশি লাভের আশায় ফাঁদে পা দিলেই বিপদ, জেনে নিন কীভাবে নিরাপদে লগ্নি করবেন]
এখানে জানাই, যদি দু-পক্ষই ‘মেডিয়েশন’ বেছে নেন, তাহলে ওমবাডসম্যান তাঁর বক্তব্য (recommendation) একমাসের মধ্যে দেবেন। তবে লিখিতভাবে দু’পক্ষকেই তার ব্যাপারে সায় দিতে হবে। যদি এভাবে না হয়, তাহলে অভিযোগ পাওয়ার তিনমাসের মধ্যে তিনি মতামত (award) দেবেন। ওমবাডসম্যান কোন এক্স-গ্রাশিয়া (ex-gratia) পেমেন্ট নিয়ে অ্যাওয়ার্ড পাস করতে পারেন না।
এবার প্রশ্ন হল, লোকপালের সিদ্ধান্ত আপনার পছন্দ যদি না হয়, তাহলে কী করতে পারেন? জানিয়ে রাখি, অ্যাওয়ার্ড বা রেকমেন্ডশন দুই-ই, দু-পক্ষকে পুরোপুরি মানতে হবে – আইনি ভাষায় full and final settlement of complaint। যদি তা না সম্ভব হয়, তাহালে আপনি ইনসিওরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে কোর্টে যেতেই পারেন। ওমবাডসম্যান যদি আপনার নালিশ খারিজ করেন, তাহলেও ‘লিগাল রেমেডি’ চাওয়ার ক্ষেত্রে কোন বাধা নেই। শেষ করি একটি ব্যাপারে সতর্ক করে। ওমবাডসম্যানের কাছে যথার্থ অভিযোগ নিয়েই যাবেন, অন্যথা নয়।
‘রুটিন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ম্যাটার’ যাকে বলা হয়, সেই সমস্ত ব্যাপার এখানে আনবেন না। বিশেষ কোনও ইনসিওরেন্স কোম্পানির কর্মচারীর ব্যবহারের দিকেও লোকপালের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লাভ নেই। এতে কেবল আপনার সময়ই নষ্ট হবে।