Advertisement
সুচিত্রার খোলা পিঠে চুমু! সুপ্রিয়ার 'বেগানা', লিলির সঙ্গে 'চুপকে চুপকে', ধর্মেন্দ্রর বাঙালি 'ড্রিম গার্ল'রা
শর্মিলা, মৌসুমী, জয়াদের পাশাপাশি সুচিত্রা-সুপ্রিয়াদের সঙ্গে কেমন ছিল 'হি ম্যান'-এর অনস্ত্রিন রসায়ন?
ষাট-সত্তর দশকের নায়িকাদের কাছে ধর্মেন্দ্র ছিলেন 'ড্রিম হিরো'। পর্দায় তাঁর সুঠাম দেহ, ক্যারিশ্ম্যাটিক ব্যক্তিত্বে সম্মোহিত নায়িকার সংখ্যা নেহাত কম ছিল না। হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বঙ্গতনয়া শর্মিলা ঠাকুর, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, জয়া বচ্চনদের (ভাদুরী) পাশাপাশি ধর্মেন্দ্র জুটি বেঁধেছিলেন সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়াদেবী, লিলি চক্রবর্তীদের সঙ্গেও।
অসিত রায়ের 'উত্তর ফাল্গুনী'র হিন্দি রিমেক 'মমতা' ছবিতে সুচিত্রা সেনের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন ধর্মেন্দ্র। সেই ছবির শুটেই এক কাণ্ড করে বসেন অভিনেতা। শোনা যায়, সেটে যে অভিনেত্রীর 'ডোন্ট টাচ!' সংলাপে তটস্থ হয়ে থাকতেন সহকর্মীরা, সেই সুচিত্রার পিঠেই অতর্কিতে একবার চুম্বন করে বসেন ধর্মেন্দ্র। 'মমতা'র জন্য এক পার্টির দৃশ্যের শুটিং চলছিল।
সুচিত্রার পরনে শাড়ি, গলায় সাদা মুক্তোর মালা। স্বাভাবিকভাবেই ফ্লোরের সকলের মধ্যমণি তখন ম্যাডাম সেন। ঠিক সেসময়েই পিছন থেকে এসে আচমকা সুচিত্রার খোলে পিঠে চুম্বন করেন ধর্মেন্দ্র। ফলত রেগে গিয়ে ফ্লোর ছেড়ে বেরিয়ে যান এবং পরিচালক অসিতকে সোজাসাপটা জানিয়ে দেন, এই ছবি তিনি করবেন না। তবে পরে ধর্মেন্দ্র ক্ষমা চাওয়ায় এই সিনেমা মুক্তি পায় এবং দারুণ সুপারহিট হয়।
শ্বশুর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুবাদে ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে আলাপ হয় মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের। ১৯৭৮ সালে 'ফান্দেবাজ' ছবিতে প্রথম জুটি বাঁধেন ধর্মেন্দ্র-মৌসুমী। এরপর 'মেরা ধরম মেরা করম' (১৯৮৭), 'জুলম কি হুকুমত' (১৯৯২), 'আগ হি আগ' (১৯৮৭) এর মতো আরও বেশ কিছু ছবি করেছেন।
স্মৃতিচারণায় মৌসুমী জানান, "নাসিকে 'জুলম কি হুকুমত'-এর শুটিংয়ের সময় বড়মেয়ে পায়েলকে নিয়ে গিয়েছিলাম। পায়েল তখন অনেক ছোট। আমার মেয়েকে ধরমজির এতটাই পছন্দ হল যে আমাকে বলেই ফেললেন- ওকে আমি ববির সঙ্গে বিয়ে দেব। যদিও অদৃষ্টের পরিকল্পনায় কী আছে? সেটা ভেবে দুজনেই হেসে ফেলি।" আরেকবার শুটিংয়ে বিয়ারকে 'লস্যি' বলে চালাতে গিয়ে মৌসুমীর কাছে ধরা পড়ে যান ধর্মেন্দ্র।
শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে নয়টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ধর্মেন্দ্র। সেই তালিকায় রয়েছে 'সত্যকাম' 'অনুপমা', 'নাসিব', 'দেভর', 'মেরে হামদম মেরে দোস্ত'-এর মতো সিনেমাগুলি। ধর্মেন্দ্রর প্রয়াণে স্মৃতির সরণি বেয়ে শর্মিলা জানান, "ধরমজি শুধু বলিউডের হি-ম্যান ছিলেন না, ছিলেন সত্যিকারের ভদ্র, ভাল মানুষও। ধরমজি কাছাকাছি থাকলে আমরা খুব নিরাপদ বোধ করতাম। সেই সময় আমাদের তেমন ভালো সুরক্ষা বলয় ছিল না। তবে ধরমজি ঠিক 'সুরক্ষা কবচে'র মতো আমাকে আগলে ভিড় থেকে বের করে নিয়ে যেতেন।"
শর্মিলার সংযোজন, "'অনুপমা' ছবির শুটিংয়ের সময় প্রথম আলাপ আমাদের। প্রথম দিন ওঁকে দেখার ঘটনা এখনও মনে আছে। ধর্মেন্দ্র অত বড় স্টার হয়েও একদম সাধারণ মানুষের মতো থাকতেন। মানুষকে ভালবাসতেন। সবার যত্ন করতেন। কোনওদিন তারকাসুলভ আচরণ করতে দেখিনি। মনে পড়ে, 'চুপকে চুপকে' ছবির শুটিংয়ে একবার ধর্মেন্দ্র দেরি করে আসায় পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় ওঁকে কিছু না বলেই শুটিং শুরু করে দিয়েছিলেন। অনেক পরে এসে ধরমজি সেটা চুপ করে দেখেন। তারপর থেকে আর কোনওদিন দেরি করেননি। ধরমজির মতো এরকম মানুষ পাওয়া মুশকিল। বহু লোককে সাহায্য করেছেন। এখন তো মানুষ শুধু নিজের স্বার্থ নিয়েই ভাবেন।"
সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গেও কিন্তু অনস্ক্রিন রসায়ন দারুণ জমেছিল ধর্মেন্দ্রর। ১৯৬৩ সালে মুক্তি পায় ধর্মেন্দ্র ও সুপ্রিয়া দেবীর প্রথম ছবি 'বেগানা'। সেই ছবিতে ধর্মেন্দ্র-সুপ্রিয়ার সমীকরণ বহুল প্রশংসিত হওয়ায় পরের বছর ১৯৬৪ সালে একসঙ্গে 'আপ কি পরছাঁইয়া' ছবিতে জুটি বাঁধেন তাঁরা। দুটি ছবিই দারুণ চলেছিল সেসময়ে।
উত্তম-মাধবীর 'ছদ্মবেশী'র হিন্দি রিমেক 'চুপকে চুপকে' ছবিতে লিলি চক্রবর্তীর সঙ্গে অভিনয় করেন ধর্মেন্দ্র। কিংবদন্তি অভিনেতার স্মৃতিচারনায় অভিনেত্রী বলেন, "খুব অল্প দৃশ্য ছিল। সেভাবে যে খুব কথা হয়েছিল ওঁর সঙ্গে, তেমন নয়। তবে, আমি বাঙালি মেয়ে দেখে উনি নাকি পরিচালকেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'কুরি ক্যায়সি হ্যায়?' (মেয়ে কেমন?) আর ডিরেক্টর বলেছিলেন, 'কুরি খতরনাগ হ্যায়।' যদিও আমাকে এই কথা পরিচালকই বলেছিলেন। ধর্মেন্দ্রর মুখ থেকে আমি শুনিনি। ওঁর চলে যাওয়ায় বড্ড কষ্ট হচ্ছে।"
জয়া বচ্চনের সঙ্গেও দারুণ সখ্যতা ছিল ধর্মেন্দ্রর। শেষবার 'রকি অউর রানি'তে অনস্ক্রিন জুটিও বাঁধেন জয়া-ধর্মেন্দ্র। তবে শুরুটা 'গুড্ডি' ছবির হাত ধরে। যেখানে 'স্কুলপড়ুয়া জয়া' ধর্মেন্দ্রর প্রেমে মগ্ন ছিলেন। তবে পর্দার ভালোলাগা বাস্তবেও ছিল, বললেও অত্যুক্তি হয় না! কারণ কফি উইথ করণ-এ জয়া বচ্চন নিজে একবার বলেছিলেন সেকথা। কী বলেন তিনি?
জয়ার মন্তব্য ছিল, "আমি ধর্মেন্দ্রকে ভালোবাসতাম। আমি যখন ওকে প্রথমবার দেখি লার্ভাস হয়ে সোফার পিছনে লুকিয়ে ছিলাম। সেদিন শ্বেতশুভ্র প্যান্ট-শার্টে ধর্মেন্দ্রকে গ্রিক গডের মতো দেখাচ্ছিল। রসিকতা করে এও বলেন যে, "আমার বাসন্তীর চরিত্রে অভিনয় করা উচিত ছিল, আমি তো ধর্মেন্দ্রকে ভালোবাসতাম!" 'শোলে; 'সমাধি', 'চুপকে চুপকে' এবং 'পিয়া কা ঘর' একাধিক ছবিতে জয়া-ধর্মেন্দ্র জুটি নজর কেড়েছে। (ছবি- সংগৃহিত)
Published By: Sandipta BhanjaPosted: 05:57 PM Nov 25, 2025Updated: 07:17 PM Nov 25, 2025
Sangbad Pratidin News App
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
