শেখর চন্দ্র, আসানসোল: ৮ দিনের দিনের পুলিশি হেফাজত থাকার পর জিতেন্দ্র তেওয়ারিকে ফের তোলা হল আসানসোল সিজেএম আদালতে। পুলিশ আরও ৬ দিনের হেফাজত চেয়েছে জানতে পেরে জিতেন্দ্র তেওয়ারি রাগে ফুঁসে ওঠেন। নিজেই বিচারককে পুলিশের বিরুদ্ধে নানাবিধি অভিযোগ জানান। তিনি বিচারককে অভিযোগ করে বলেন, “আমি জামিন চাইছি না, আমাকে পিসি অর্থাৎ পুলিশ হেফাজতই দেওয়া হোক। কিন্তু এই ৮ দিনে অর্থাৎ ১৯২ ঘণ্টার মধ্যে আমাকে মাত্র ২ ঘন্টা জেরা করা হয়েছে। আমি পুলিশের এন্টারটেইনার নই। সারাদিন বসিয়ে রেখে রাতে দশ মিনিট শুধু জিজ্ঞাসাবাদ। শুধু আটকে রাখার জন্যই যেন পিসি অর্থাৎ পুলিশ কাস্টডি চাওয়া হয়েছে। এই ঘটনা তীব্র প্রতিবাদ করছি।”
তিনি বলেন, “আমাকে ৬ দিনের পুলিশি হেফাজত নিয়ে আমি আপত্তি জানাচ্ছি না। কিন্তু আমাকে যেন পুরোপুরি তদন্তের স্বার্থে কাজে লাগানো হয়। যদি মনে হয় তদন্তে আমাকে প্রতিদিন ১০-১২ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন তাও রাজি আছি। কিন্তু উপরতলার কোনও বাবুকে খুশ করার জন্য পুলিশ আমাকে এভাবে আটকে না রাখে। বা হেনস্তা যেন না করে। এটা আমার কাছে বিড়ম্বনা।” বিচারকের কাছে জিতেন্দ্র তিওয়ারি অভিযোগ করে বলেন, “আমি আসানসোলের মেয়র ছিলাম। মেয়র থাকাকালীন এই আদালতে নতুন বিল্ডিং তৈরির সময় এক শ্রেণির মাফিয়ারা তোলাবাজি চেয়েছিল। আদালত নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে এই আদালত নির্মাণের কাজ শেষ করিয়েছি। আজ ওই মাফিয়ারা পুলিশের বেষ্টনীতে রয়েছে। আর আমাকে থাকতে হচ্ছে জেলে। এটা আমার কাছে বিড়ম্বনা, আমার কাছে ব্যথার। এটা হয়তো কোনও আইনি কথা নয়। কিন্তু আমি আমার ব্যথা ও কষ্টের কথা জানালাম।”
[আরও পড়ুন: বাবা হতে তান্ত্রিকের নির্দেশেই নরবলি! তিলজলায় শিশু খুন নিয়ে বিস্ফোরক দাবি ধৃতের]
আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র বিচারক তরুণ মণ্ডলকে স্পষ্টভাবে বলেন, “আমি অ্যাবসকন্ডেড বা পলাতক ছিলাম না। আমি দিল্লিতে গিয়েছিলাম সুপ্রিম কোর্টে আগাম জামিনের আবেদনের জন্য। আমার সোশ্যাল মিডিয়ায় দিল্লির বিভিন্ন ছবি দেখলেই বুঝতে পারবেন। এর মাঝে আমি আসানসোলে একাধিক মিছিল করেছি। কলকাতা বইমেলায় অনুষ্ঠান করেছি। বিচারপতি মান্থার ওখানে গিয়ে আমি দলের কাজ করেছি। সবই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেখা যেত। পুলিশ মিথ্যা কেস সাজিয়েছে। আমার নামে ১৫ মার্চ ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে। এই দেখিয়ে সেশন কোর্ট এবং হাই কোর্টের ৪৩৮ এ আমার বেল রিজেক্ট হয়েছে। কিন্তু লার্নার কোর্টকে পুলিশ তথ্য গোপন করেছে। সুপ্রিম কোর্টে বা এসএলপি যে পেন্ডিং রয়েছে সেই তথ্য জানানো হয়নি আদালতকে। আমার এসএলপি গ্রহণ হয়েছে এবং ২০ তারিখ শুনানি রয়েছে। একথা জানার পর নিশ্চয়ই লার্নার কোর্ট বিষয়টি বিবেচনা করতেন। কিন্তু তার আগেই এইভাবে আমাকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে দিল্লি থেকে। এই ৮ দিনে আমার বাড়ি থেকে একটি টেলিফোন শুধু সিজ করেছে পুলিশ। কম্বল কান্ডে পদপৃষ্ঠের দুর্ঘটনায় এই হচ্ছে তদন্তের অগ্রগতি।”
জিতেন্দ্র আইনজীবী শেখর কুণ্ডু একই কথা বলেন। লার্নার কোর্ট অর্থাৎ সিজিএম আদালতকে তথ্য গোপন করে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট নেওয়া হয়েছে তা বিচারককে জানান। শেখর কুণ্ডু বলেন, “ইতিমধ্যেই কাউন্সিলর গৌরব গুপ্তা এবং যুবনেতা তেজ প্রতাপ সিং আগাম জামিনের আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ পেয়েছেন। এই মামলার মূল অভিযুক্ত চৈতালি তিওয়ারি তিনিও অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশে রয়েছেন বা যাকে বলা হয় বিশেষ প্রোটেকশনে। তাহলে জিতেন্দ্র কেন এভাবে আটকে থাকবেন?”
জিতেন্দ্র ফের নিজেই বিচারককে বলেন, “আমি জামিনের আবেদন চাইছি না। পুলিশ যখন পিসি চাইছে আমাকে পিসিই দেওয়া হোক। কিন্তু আমাকে যেন পরিপূর্ণভাবে তদন্তে ব্যবহার করা হয়। হেনস্তার উদ্দেশে পিসি বা পুলিশ কাস্টডি নয়।” এদিন জিতেন্দ্র ভরা এজলাসে কটাক্ষের সুর বলেন, “এখন তো পিসিরই গুরুত্ব আছে বাংলায়। তাই পিসিই দেওয়া হোক।”
এদিন আসানসোল উত্তর থানা থেকে যখন আদালতের পথে জিতেন্দ্রর তারিকা আনা হয় তখন তিনি থানা থেকে বেরিয়ে শহরবাসীকে রমজান মাসের শুভেচ্ছা জানান।মলয় ঘটককে ইডির তলব প্রসঙ্গে বলেন আসানসোলবাসী হিসেবে কারও অকল্যাণ হোক চাই না। এদিন বেলা আড়াইটা নাগাদ আদালতে ঢোকানো হয় জিতেন্দ্র তেওয়ারিকে। আদালত চত্বরে বিজেপি নেতাকর্মীরা জিতেন্দ্র তিওয়ারি জিন্দাবাদ বিজেপি জিন্দাবাদ আওয়াজ তোলেন।পুলিশকে ধিক্কার বলেও স্লোগান দিতে থাকেন। জিতেন্দ্র তেওয়ারি আদালতে ঢোকার সময় বলেন, কলকাতার কাছে আসানসোল মাথা নত করবে না। আরও দশটা মামলা করুক। এক বছর জেলে রাখুক। তবু কলকাতার কাছে আসানসোল পরাজয় স্বীকার করবে না।