অর্ণব আইচ: দুর্ধর্ষ ডাকাতির মাস্টারমাইন্ড আসলে এক পুলিশকর্মী! সিবিআই আধিকারিক সেজে ডাকাতির জন্য ডাকাতদের পুলিশি আদবকায়দা শিখিয়েছিলেন ওই পুলিশ কনস্টেবল। প্রায় দেড় মাস ধরে তাঁর উপর নজরদারি রাখার পর গোয়েন্দা আধিকারিকরা নিশ্চিত হন যে, ওই পুলিশকর্মীই দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ডাকাতির মাস্টারমাইন্ড। শেষপর্যন্ত দেবব্রত কর্মকার নামে ওই ‘ডাকাত পুলিশ’কে গ্রেপ্তার করলেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।
পুলিশ জানিয়েছে, দেবব্রত কর্মকার কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চে কর্মরত। তিনি উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা। গত ১২ ডিসেম্বর রাতে ভবানীপুরের এক ব্যবসায়ীর ফ্ল্যাটে সিবিআই আধিকারিক সেজে ঢুকে ৫০ লক্ষ টাকার নগদ ও গয়না ডাকাতি করে অভিযুক্তরা। তদন্ত শুরু করে ডাকাতির মূল পান্ডা রাকেশ মণ্ডল-সহ একে একে বারোজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার হয় পুলিশ স্টিকার দেওয়া গাড়িও। ধৃত রাকেশের মুখেই উঠে আসে তার ‘পুলিশ বউ’য়ের কথা।
[আরও পড়ুন: বিজ্ঞানের আশীর্বাদ, এবার মূত্রপরীক্ষার ফলাফলই দেবে ব্রেন ক্যানসারের হদিশ]
বারাকপুর কমিশনারেটের ওই মহিলা কনস্টেবলের অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছিল ডাকাতির টাকা। যদিও আদালতে গোপন জবানবন্দি দেন ওই মহিলা পুলিশকর্মী। এছাড়াও রাকেশ-সহ অন্য ধৃতদের যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, তারা পুলিশি আদবকায়দা কোথা থেকে শিখেছে, তখনই তাদের মুখে উঠে আসে ‘দেবুদা’র নাম। তদন্ত করে পুলিশ জানতে পারে যে, ওই ‘দেবুদা’ আসলে স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের পুলিশ কনস্টেবল দেবব্রত কর্মকার।
দেবব্রতর সঙ্গে আসলে যোগাযোগ ছিল এক ব্যবসায়ীর, যিনি ভবানীপুরের অভিযোগকারী ব্যবসায়ীর ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী। ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকেই ভবানীপুরে ফ্ল্যাটে প্রচুর টাকা ও গয়না রাখার খবর পান দেবব্রত। রাকেশ ও তার সঙ্গীদের কয়েকজনকে আগে থেকেই দেবব্রত চিনতেন। গত বছরের অক্টোবর মাসে পুজোর পরপরই দেবব্রতর পরামর্শেই রাকেশ ডাকাতদল তৈরি করে। ওই পুলিশকর্মীই পরিকল্পনা করেন, কীভাবে সিবিআই আধিকারিক সেজে ডাকাতি করা যায়। কিন্তু পুলিশ সাজার জন্য প্রয়োজন পুলিশি আদবকায়দা শেখার। সেই প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব নেয় দেবব্রত। কয়েকবার সে রাকেশদের নিজের পছন্দমতো চায়ের দোকানে ডেকে পাঠায়। সেখানে বসেই ডাকাতির ছক কষা হয়। একই সঙ্গে চলে সিবিআই আধিকারিক সাজার প্রশিক্ষণ।
[আরও পড়ুন: শেষকৃত্যের পরদিন চমকালো পরিবার, বন্ধুর সঙ্গে ভিডিওকলে কথা ‘মৃত’ অটোচালকের!]
লালবাজারের গোয়েন্দারা কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলের অন্তত তিনটি সিসিটিভি ফুটেজে প্রমাণ পান যে, দেবব্রত কর্মকার দলের অন্যদের সঙ্গে বসে আলোচনা করছে। এভাবে প্রায় দেড় মাস ধরে ‘দেবুদা’র উপর চলে গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারি। উল্লেখ্য, এর আগেও তালতলা-সহ একাধিক জায়গায় সিবিআই আধিকারিক সেজে ডাকাতি ও অপহরণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন পুলিশকর্মীরা। উত্তর ২৪ পরগনার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ কনস্টেবল দেবব্রতকে গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার করেন। ধৃতকে জেরা করে অন্য কোনও পুলিশকর্মী যুক্ত কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।