ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: নিম্নচাপের ভ্রুকূটি কাটিয়ে শরতের আকাশ ফিরিয়ে দিয়েছে আশ্বিন। আর কোথাও মেঘ জমে নেই। নীল রংয়ে আর কোনও আলসেমি নেই। ভিড় রাতের ধাক্কাধাক্কিতে মিলেমিশে যাচ্ছে রঙীন জীবন। দুর্মূল্যের এই শারদোৎসবে মানুষে মানুষে নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পালা শুরু হল রাজনীতির আঙিনায়।
টানা পুজো উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে সে কাজ একপ্রকার শুরু হয়ে গিয়েছে। মহালয়ার বিকেল থেকেই শুরু হয়েছে বোধনের পালা। তার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দলের জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দিয়েছিলেন পুজোয় যাঁর যাঁর এলাকায় থাকতে। অন্যদিকে, ২০১৮ পার করেই ২০১৯। ভোটের বছর। সে কথা মাথায় রেখে খুব স্বাভাবিকভাবেই পুজোয় মেতেছে তৃণমূল। নিবিড় জনসংযোগের কাজ শুরু করে দিয়েছে রাজ্যের শাসক দলের নেতারা। গত বছরের তুলনায় পুজোয় মেতে অসংখ্য মানুষের ভিড়ে মিশে যাচ্ছেন। কেউ মাতছেন নিখাদ আড্ডায়। তাতে রাজনীতি থাকলেও বেশি পরিমাণে থাকছে পাড়ার ফেলে আসা আড্ডা। চলছে পাড়ার মোড়ের আড্ডা। সাধারণ জীবনের সঙ্গে মিলেমিশে যাচ্ছে রাজনীতি। অন্য দলগুলিও সময় নষ্ট করছে না। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকেও দেখা গিয়েছে পুজো উদ্বোধনের মুডে। তবে এ যাবৎকালে মুখ খুলে বারবার বিতর্কের মধ্যে পড়েছেন দিলীপবাবু। পুজোয় অবশ্য সে সব বাদ। তিনিও মজেছেন বিপুল আড্ডায়। সঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্বে পালাবদলের জেরে এবার সেখানেও বোধনের জোয়ার। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। কলেজ স্কোয়ারের পুজো তাঁরই দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা বন্ধুবর বাদল ভট্টাচার্যর। ফলে দুই বন্ধুর এই পুজোয় মেতেছে মধ্য কলকাতাও।
একের পর এক পুজো উদ্বোধন সেরে নবনীড় বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের সঙ্গে দেখা করে পুজো শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন বৃদ্ধাবাসের আবাসিকদের কথা। বলেছেন, “ওদের হাসিমুখ দেখা, ওদের সঙ্গে ভাল সময় কাটানো খুব আনন্দের।” মহালয়া থেকে তাঁর পুজো উদ্বোধনের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। তাঁর দলের নেতাদেরও দেখা গিয়েছে পাল্লা দিয়ে মেতেছেন পুজোর উদ্বোধনে। শ্রীভূমির সুজিত বসু, চেতলার ফিরহাদ হাকিম, সুরুচির অরূপ বিশ্বাস, নাকতলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়রা যেমন আছেন, তেমনই জেলায় আছেন দলীয় নেতারা। উত্তর কলকাতার বাগবাজার, পোস্তা, বড়বাজারে একাধিক পুজোর উদ্বোধনে ছিলেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। দক্ষিণ কলকাতায় ছিলেন সুব্রত বক্সি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন
ডায়মন্ডহারবারে পুজোর উদ্বোধনের সঙ্গে জড়িত। সেখানে আবার বিশেষ গানের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। মেদিনীপুর ছাড়াও মুর্শিদাবাদের বহু পুজোর উদ্বোধন করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। সঙ্গে গোটা পুজোজুড়ে চলেছে পাড়ায় পাড়ায় আড্ডা।
পুজোর আগেই দলীয় বৈঠকে ভোটের দামামা বাজিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। তার পরই পুজোয় জোরদার জনসংযোগের কাজ শুরু করে দিলেন তৃণমূলের নেতারা। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “সামনের বছর লোকসভা ভোট। এই দুর্গাপুজোই তো একমাত্র সময় সবচেয়ে বেশি জনসংযোগের। সেই কাজই করা হচ্ছে।” তৃণমূলনেত্রীর নির্দেশমতো শুধু কলকাতা নয়, বিভিন্ন জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জেলায় জেলায় নিজেদের এলাকায় ঘুরছেন। পুজোয় মেতে প্রবল জনসংযোগ করছেন। জেলার এক সাংসদ বলছেন, “পুজোয় প্রতি বছরই মেতে থাকা হয়। এবার তো পুজো কাটলেই ভোট। এর থেকে এত বড় সুযোগ পাওয়া যাবে না। নেত্রীর নির্দেশ মেনেই আমরা পুজোয় তাই জনসংযোগের কাজটা সেরে নিচ্ছি।”
ছবি: শংকর নাগ, গোপাল দাস
The post শিয়রে লোকসভা নির্বাচন, পুজোয় জনসংযোগে নেতা-নেত্রীরা appeared first on Sangbad Pratidin.