বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: ভোট পরবর্তী হিংসায় (Post Poll violence) জড়িত অভিযোগে এবার ধরপাকড় শুরু করল সিবিআই (CBI)। নদিয়ার চাপড়া থেকে এই ঘটনায় ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে খবর। তাঁরা চাপড়ার হৃদয়পুরের বাসিন্দা। শনিবার সকালে সিবিআই আধিকারিকরা তাঁদের বাড়ি থেকে আটক করে চাপড়া থানায় নিয়ে যায়। সন্ধের পর তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
একুশের বিধানসভা ভোটে বড়সড় ব্যবধানে জয়ী হয়ে তৃণমূল (TMC) তৃতীয়বার রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভোট পরবর্তী হিংসার ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠেছিল। বহু টানাপোড়েনের পর আদালতের নির্দেশে এই মামলার তদন্তভার নেয় সিবিআই। তারপর বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে স্পর্শকাতর এলাকাগুলি পরিদর্শন করে, সেখানকার মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট তৈরি করে। আর তদন্তে নেমে এই প্রথম গ্রেপ্তারির পথে হাঁটলেন সিবিআই কর্তারা। গত ১৪ মে নদিয়ার (Nadia) হৃদয়পুর এলাকায় বিজেপি-তৃণমূলের সংঘর্ষে ধর্ম মণ্ডল নামে এক বিজেপি (BJP) কর্মী গুরুতর আহত হন। স্থানীয় হাসপাতালের পর কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতাল থেকে কলকাতার এনআরএস (NRS) হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে ১৬ মে তাঁর মৃত্যু হয়।
[আরও পডুন: Coronavirus: করোনায় ‘সিঙ্গল মাদার’কে হারিয়ে একা নবম শ্রেণির শুভ]
এই ঘটনায় মোট ৮ জনের নামে চাপড়া থানায় অভিযোগ দায়ের হলে, পুলিশ ৮ জনকেই গ্রেপ্তার করে। কিন্তু এরপর পরিবারের সদস্যদের গোপন জবানবন্দি নিতে দিয়ে আরও ১২ জন অভিযুক্তের নাম উঠে আসে। এরা কেউই গ্রেপ্তার হয়নি। এবার তারই তদন্তে নেমে ফের ধর্ম মণ্ডলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ওই কয়েকজন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নেয়। এরপর শনিবার হৃদয়পুর পঞ্চায়েত অফিসে ঢুকে কয়েকজন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এরপর বিজয় ঘোষ ও অসীমা ঘোষ নামে দু’জনকে আটক করে চাপড়া থানায় নিয়ে আসেন সিবিআই আধিকারিকরা। সন্ধের দিকে বিজয় ও অসীমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের এই আচরণে ক্ষুব্ধ হন এলাকাবাসী। অভিযোগ, পঞ্চায়েত অফিসে ঢুকে তাঁরা রাজ্য সরকারের ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পকে কটাক্ষ করেছে। সিবিআইয়ের গাড়ি ধরে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী। এ নিয়ে সাময়িক অশান্তিও হয়। চাপড়া থানার পুলিশ পরিস্থিতি সামলায়।
[আরও পডুন: পুলিশ হেফাজতে ফের অসুস্থ রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ভরতি হাসপাতালে]
বিষয়টি নিয়ে কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সম্পাদক সুখদেব ব্রহ্মর প্রতিক্রিয়া, ”সিবিআইয়ের লোকজন যে ঘটনার তদন্ত করছে, তাতে সবাই সহযোগিতা করছিল। কিন্তু ওরা তদন্তের নামে এসে রাজ্য সরকারের কর্মসূচিকে কটাক্ষ করেছে। তাই বিক্ষোভ দেখিয়েছে লোকজন।” বিজেপি মুখপাত্র সন্দীপ মজুমদার বলেন, ”বিধানসভা ভোটের পর নদিয়াতেও রাজনৈতিক হিংসার শিকার হয়েছে বিজেপি কর্মীরা। এর তদন্তে আমরা সিবিআই-কে স্বাগত জানিয়েছে। দোষীরা সাজা পাক, এটাই চাই।”
ভোট পরবর্তী হিংসায় সিবিআই সক্রিয়তা নিয়ে এদিন সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও (CM Mamata Banerjee)। তিনি বলেন, ”ভোট পরবর্তী হিংসা বলে রাজ্যে কিছু হয়নি। সিবিআই যখন তদন্ত করতে আসছে, তখন তো আমরা আটকাইনি। আর মানবাধিকার কমিশন শুধু বাংলায়? যে ক’জন মারা গিয়েছে, তাদের মধ্যে ১৬ জনই তো তৃণমূলের।”