শাহজাদ হোসেন, ফরাক্কা: মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ। বাঙালির প্রিয় উৎসবেও তাই বাংলা ভাষারই উদযাপন। মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) ধুলিয়ানের এক পুজোয় এবারের থিম - বর্ণপরিচয়: মাতৃভাষা। ধুলিয়ানের যুবরাজ ক্লাবের পুজোমণ্ডপ (Durga Puja) এবার সেজে উঠছে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দেড়শোটি বই দিয়ে। তাতেই সকলের নজর কাটতে চলেছেন উদ্যোক্তরা।
বইয়ের পাশাপাশি ধুলিয়ানের মাতৃভাষার গুরুত্ব তুলে ধরতে এই মণ্ডপে ৮০ ফুট উপর থেকে ঝুলবে বাংলা বর্ণমালা। প্যান্ডেলের দু'পাশে থাকবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের (Iswar Chandra Vidyasagar) জীবন সংগ্রামের ইতিহাস। মণ্ডপের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেবী দুর্গার পিছনের চালা হবে স্লেটের। মণ্ডপে প্রবেশের পরই দর্শকদের নজর কাড়বে বাংলা বর্ণমালা। থাকবে স্লেট-পেনসিল। সমাজ ভাবনাকে সামনে রেখে ধুলিয়ান যুবরাজ ক্লাবের ১৪ তম বর্ষের পুজোর থিম করা হয়েছে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বর্ণমালা ও মাতৃভাষা। চলছে শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি।
শিশুদের হাতে এখন আর দেখা যায় না স্লেট-পেনসিল, এমনকি বর্ণপরিচয়। বিশ্বায়নের প্রভাবে শিশুরা এখন মোবাইলে আসক্ত। বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপুজোয় তাই মাতৃভাষার গুরুত্ব তুলে ধরতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয়কে হাতিয়ার করেছে যুবরাজ সংঘ। মণ্ডপে বিদ্যাসাগরের লেখা ৫০ টি বই তৈরি করা হয়েছে প্লাই ও থার্মোকল দিয়ে। অন্দরসজ্জা খানিকটা এরকম - বই দিয়ে মণ্ডপের মধ্যে জানলা তৈরি হয়েছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
[আরও পড়ুন: কালিম্পং থেকে গ্রেপ্তার পাক চর! বনগাঁ সীমান্তে আন্তর্জাতিক মোবাইল পাচারচক্রের পর্দা ফাঁস]
ধুলিয়ান পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে যুবরাজ সংঘের এই পুজোকে ঘিরে শুরু হয়েছে রীতিমতো উন্মাদনা। পুজোর বাজেট প্রায় চার লক্ষ টাকা। যুবরাজ সংঘের সভাপতি ঝুলন প্রামাণিক জানান, "মুর্শিদাবাদ জেলার মধ্যে সামশেরগঞ্জ ব্লক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে সব থেকে পিছিয়ে পড়া এলাকা। মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রথম বোধের উন্মেষ। মাতৃভাষার মধ্য দিয়ে শিশুর চেতনার বিকাশ ঘটে। মানব জীবনে বেঁচে থাকা এবং আমাদের অস্তিত্ব, স্বাভাবিক বোধকে বাঁচিয়ে রাখার অন্যতম প্রয়াস হল বর্ণপরিচয়। কিন্তু আমরা আমাদের সন্তানদের মাতৃভাষা থেকে বঞ্চিত করে উচ্চশিক্ষার জন্য পাশ্চাত্য মাধ্যমকে বেছে নিতে শেখাই। মাইকেল মধুসূদন দত্ত বলেছিলেন, "ওরে বাছা মাতৃকোষে রতনের রাজি/এ ভিখারি দশা তবে কেন তোর আজি? যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে।"
[আরও পড়ুন: কংগ্রেস সভাপতি পদের দৌড় শুরু, প্রথম মনোনয়ন তুললেন শশী থারুর, বিভ্রান্ত G-23 গোষ্ঠী]
ক্লাব সম্পাদক বলরাম সিংহ বলেন, মূল মণ্ডপটি ঈশ্বরচন্দ্রের লেখা দেড়শোটি বই দিয়ে সাজানো হবে। তার উপরে বিদ্যাসাগরের মূর্তি। মণ্ডপের ভিতর দর্শক প্রবেশ করলে নজরে আসবে চোখধাঁধানো আলেকসজ্জায় সজ্জিত বর্ণমালা। থাকছে স্লেট-পেনসিল। শিশুমনে বর্ণপরিচয় ও বিদ্যাসাগরের সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে এমন থিমের আয়োজন করা হয়েছে।