রমনী বিশ্বাস, তেহট্ট: এক সময় ছিল ডাকাতদের আখড়া, রীতি মেনে এখন সেখানেই হচ্ছে ডাকাত সর্দারের শুরু করা যশাই মায়ের পুজো। মঙ্গলবার থেকে মহাসমারহে শুরু হয়েছে তিনদিনের এই পুজো। শেষ হবে আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার। তেহট্ট থানার ভবানীপুরে যশাই মায়ের পুজো উপলক্ষে চলছে মেলাও।
লোকমুখে প্রচলিত, স্থানীয় চিলাখালি গ্রামে বাস করতেন সুধন্য দাসবৈরাগ্য। তিনি ডাকাত ছিলেন। প্রত্যেকদিন ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে ভবানীপুরের জঙ্গলে দলের বাকিদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে পরিকল্পনা করতেন সুধন্য। ডাকাতি শেষে জঙ্গলে ফিরে লুটের জিনিস ভাগ করতেন। এভাবে ভালই চলছিল কারবার। একদিন সুধন্য ডাকাতের সঙ্গে এক বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে ঘটে যায় অলৌকিক ঘটনা। বাকিরা পালাতে পারলেও সুধন্য সেই রাতে একটি বাড়িতে আটকা পড়ে যায়। গ্রামবাসীরা তাকে ঘিরে ধরে, সুধন্যের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। তখন তিনি গৃহকর্ত্রীর দুই পা জড়িয়ে ধরে প্রাণ ভিক্ষা চায়। তখন গৃহকর্ত্রী বলেন, তোমার প্রাণ বাঁচাতে পারি কিন্তু তোমাকে কথা দিতে হবে তুমি এই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য কোন পেশা অবলম্বন করবে। এরপরই ডাকাতি ছেড়ে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন তিনি।
[আরও পড়ুন: গুড ফ্রাইডেতে পরতে হয় কালো পোশাক, এই বিশেষ দিনে আর কী কী নিয়ম মানতে হয়?]
কথিত আছে, ডাকাতি ছেড়ে দিলেও মাঠের মধ্যে কুল গাছ ভরা জঙ্গলে সুধন্যের নিত্য যাতায়াত ছিল। প্রত্যেকদিন তিনি একটা জিনিস খেয়াল করতেন দুটো সাপ একইসঙ্গে ওই কুল গাছের নিচে আসে, কিছু সময় ঘোরাঘুরি করে আবার কোথায় মিলিয়ে যায়। পরে ভবানীপুর ও পার্শ্ববর্তী গ্রামের মহিলারা অলৌকিক ঘটনা উপলব্ধি করে প্রতিমা ব্যতীত ওই কুল গাছকে যশাই মা(কালী)রূপে পুজো করা শুরু করে। কালক্রমে সেই কুল গাছের জঙ্গল না থাকলেও তাঁর পাশের একটি জাম গাছকে যশাইমা রূপে পুজো করছেন স্থানীয়রা। এক আখড়ার কর্মকর্তা অলকের বিশ্বাস বলেন, “এই পুজো কবে থেকে শুরু হয়েছে সঠিক করে বলা সম্ভব না, তবে এক কথায় বলতে গেলে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এই পুজো। আগে পারিপার্শ্বিক কয়েকটি গ্রামের মানুষ জঙ্গলের একটি কুল গাছকে যশাই মা মনে করে সারা চৈত্র মাস দুধ কলা দিয়ে পুজো করত। তখন এত লোক সমাগম হতো না, যতদিন গড়িয়েছে লোকসমাগম বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় ৩০ বছর ধরে লক্ষ্য লক্ষ্য ভক্ত সমাগমে হয়ে আসছে এই পুজো ও মেলা।” কথায় আছে, ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর’। তাই বিশ্বাসের উপর ভর করেই চলছে এই পুজো।
মুর্শিদাবাদ থেকে মা ও ছোট সন্তান কোলে করে পুজো দিতে এসেছেন সাথী সরকার নামে এক গৃহবধ। তিনি জানান, গত বছর যশাই মায়ের স্থানে গোপাল দিয়ে মানত করেছিলেন তিনি। তার সেই মনস্কামনা পূর্ণ হয়েছে। তাই এবছরও যশাই মাকে পুজো দিতে এসেছেন। তিনি একা নন, মনস্কামনা পুরণ হওয়ায় অনেকেই প্রতিবছর শামিল হন এই পুজোয়।