হঠাৎ রক্তক্ষরণ! প্রস্রাবের সঙ্গে এমন হলে ইউরিনারি ট্রাক ইনফেকশন হয়েছে, ধরে বসে থাকবেন না। হতে পারে ক্যানসার টিউমারও। টার্গেট কিডনি কিংবা ব্লাডার। তাই উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পদক্ষেপ নিন। সাবধান করলেন ইউরোলজিস্ট ডা. অমিত ঘোষ। শুনলেন জিনিয়া সরকার।
মানববাবুর বয়স বেশি নয়, মাত্র ৪৫ বছর। কিছুদিন যাবৎ একটাই সমস্যা, মাঝে মধ্যেই মূত্র ত্যাগের সময় রক্তপাত। যার উৎপত্তি বেশ কয়েক মাস ধরে। এতদিন ইস্তক আলেকালে হতো রক্তক্ষরণ, হালে যার ঘনঘন হচ্ছে। তাই তড়িঘড়ি করে নানা চিকিৎসকের কাছে ঘুরে শেষে ইউরোলজিস্টের পরামর্শ নিতে বাধ্য হলেন।
আসলে, এই ভুলটাই অধিকাংশই করেন। হেমাচুরিয়া হলে মূত্রের মাধ্যমে রক্তপাতের ধরনটা বড় অদ্ভুত। টানা হতে থাকে না, হঠাৎ একদিন হল তারপর আবার এক-দু’মাস পর রক্তপাত। রোগী মনে করেন, তেমন ভয়ানক ব্যাপার নয়, হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। ফেলে রাখেন কিংবা জুড়িবুটিতে উপশম পেতে ছোটেন। তখনই শরীরে ভিতরে পাকাতে থাকে অসুখটি। আপাত দৃষ্টিতে ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন (UTI) মনে হলেও এই উপসর্গের পিছনে থাকতে পারে ক্যানসার।
কী ধরনের ক্যানসারে এমন হয়?
ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন হলে ইউরিন কালচার করলেই তা ধরা পড়বে। কিন্তু যদি দেখা যায়, ইউরিন কালচারের রিপোর্ট নেগেটিভ এল সেক্ষেত্রে কিন্তু ক্যানসার (Cancer) হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইউরিনারি ট্র্যাকের ব্লাডারে অথবা কিডনিতেই ক্যানসারের বীজ লুকিয়ে থাকে।
স্মোক করেন? তাহলে সামলে!
আসলে সমীক্ষার তথ্য, ধূমপান শুধু ফুসফুসের ক্যানসারই নয়, ডেকে আনে কিডনি কিংবা ব্লাডার ক্যানসারও। ধূমপানের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি যোগসূত্র রয়েছে ব্লাডার টিউমার বা ক্যানসারেরই। অল্প ধূমপানও মারাত্মকভাবে এই ধরনের অসুখ ডেকে আনতে পারে।
এছাড়াও যাঁরা ডাই ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন তাঁদের মধ্যেও কিন্তু দেখা দিতে পারে এই সমস্যা।
ব্লাডার বা কিডনি ক্যানসার কোনও বয়স মানে না, পুরুষ-মহিলা সকলেরই হতে পারে। তবে কিছু কিছু কিডনি টিউমার হতে পারে বংশগত সূত্র ধরে। সেক্ষেত্রে অল্পবয়সেই তা দেখা দেয়।
শুধু রক্তক্ষরণ নয় উপসর্গ নয় কিন্তু…
রক্তক্ষরণ ছাড়াও প্রস্রাব করার সময় জ্বালা, ব্যথা অনুভব হবে। কিডনি টিউমার হলে কিডনির স্থানে ব্যথা হবে। কারণ কিডনিতে টিউমার থাকলে তা থেকে ব্লিডিং হতে থাকে। সেই রক্তের ক্লট ইউরিনারি ট্র্যাকে জমা হয়ে ব্যথা হয়। তবে ব্লাডারে টিউমার হলে তার কোনও ব্যথা বা যন্ত্রণা একেবারেই থাকে না। শুধু মূত্রের সঙ্গে রক্তপাতই এর অন্যতম লক্ষণ।
[আরও পড়ুন: কোভিড টিকা নেওয়ার পর কেমন হবে ডায়েট চার্ট? জানালেন ডায়েটেশিয়ানরা]
যদি হয়ে থাকে, তারপর?
এই ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পেলে সর্বপ্রথম আল্ট্রাসাউন্ড করে ইউরোলজিস্টের পরামর্শ নিন। তারপর কিডনি বা ব্লাডারে টিউমার ধরা পড়লে পরবর্তী পর্যায়ে সিটি স্ক্যান অত্যন্ত জরুরি। যা দেখে বোঝা যাবে ক্যানসার অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছে কি না। তারপর টিউমার অপারেশন করে বাদ দেওয়া হয়। ব্লাডারের টিউমার TURBT- পদ্ধতিতে অপারেশন করা হয় এটি একপ্রকার মাইক্রো সার্জারি। অন্যদিকে যদি কিডনিতে টিউমার হয় সেক্ষেত্রে ছোট টিউমার হলে অর্ধেকটা টিউমার বাদ যায়, যাকে বলা হয় পার্শিয়াল নেফ্রেকটমি। বড় টিউমার হলে পুরো কিডনি বাদ দিতে হয়। তখন তাকে বলা হবে র্যাডিক্যাল নেফ্রেকটমি।
ফিরে আসা রুখতে চেক সিস্টোস্কোপি-
ব্লাডার টিউমার অপারেশন করার পরও আবার ফিরে আসে। এই টিউমার প্রাণ কাড়ে না কিন্তু বারবার মাথাচাড়া দেয়। তাই অপারেশন করে বাদ দেওয়ার পর তিনমাস অন্তর চেক সিস্টোস্কোপি করতে হবে। এই পদ্ধতিতে অপারেশন পরবর্তী টিউমার বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা তা সিস্টোস্কোপি করে দেখা হয়। সঙ্গে বিশেষ কিছু কেমোথেরাপির ড্রাগ বা ওষুধ সেই টিউমার হওয়া স্থানে প্রয়োগ করা হয়। যাতে টিউমার আবার ফিরে না আসে। এখানে বলে রাখা ভাল,
প্রয়োজনে এই টিউমারকে নিষ্ক্রিয় রাখতে বিসিজি (টিবি ভ্যাকসিন) ব্লাডারের মধ্যে প্রয়োগ করে টিউমারের গ্রোথকে থামিয়ে রাখা হয়। এতেও কাজ না হলে পুরো ব্লাডার বাদ দেওয়ার (র্যাডিক্যাল সিস্টেকটমি) দরকার হতে পারে। তারপর আর্টিফিসিয়াল ব্লাডার তৈরি করে (ILEAL CONDUIT পদ্ধতিতে) রোগীকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করা হয়। আরও বিশদে জানতে পারেন ৯৮৩০০১০০০৪ নম্বরে।