বাবুল হক, মালদহ: নিজেই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। বাড়িতেই চালাচ্ছেন কেন্দ্র। স্বামী, সন্তানসন্ততি তো রয়েছেনই, কারও বাড়িতে বৃদ্ধ মা-বাবা। আর সেই ভরা সংসারের মধ্যেই পাড়ার কচিকাঁচারা আসে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। সমস্যা শুধু শৌচাগারের নয়, রান্নাবান্না থেকে পঠনপাঠন, সবেতেই। বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের জন্য একটিই শৌচাগার। শিশুরা বাথরুম পেলে ছুটতে হয় নিজ নিজ বাড়িতে কিংবা পাড়ার বাঁশবাগানে, আমবাগানে। তাহলে শিশুদের নিরাপত্তা কোথায়? বাঁশবাগানে শৌচকর্ম করতে গিয়ে শিশুরা সাপ-পোকামাকড়ের ছোবলে পড়তেই পারে। কেউ নিখোঁজ বা অপহৃত হতে পারে।
একটি-দু’টি নয়, মালদহ জেলায় ৫০ শতাংশের বেশি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চলছে কর্মী কিংবা সহায়িকাদের বাড়িতেই। কিছু কেন্দ্র চলছে স্কুলগুলিতে। কালিয়াচক থেকে চাঁচোল, হরিশ্চন্দ্রপুর, গাজোল, হবিবপুর, বামনগোলা, রতুয়া, মানিকচক, এমনকী ইংলিশবাজার ব্লকেও এই একই চিত্র। সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের (আইসিডিএস) মালদহের জেলা প্রকল্প আধিকারিক অজয় বড়ুয়া বলেন, “এই জেলায় ৫ হাজার ৭২৩টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বা আইসিডিএস সেন্টার রয়েছে। তারমধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি নিজস্ব ঘর বা বাড়ি নেই। সংখ্যাটা অন্তত তিন হাজার হবে। আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি এই জেলায়। এখন ৪০টি সেন্টারের নতুন ঘর তৈরির কাজ চলছে। কোনও সেন্টারেই বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। আসলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না।”
[আরও পড়ুন: যাত্রী সুরক্ষায় নজরদারি বাড়াচ্ছে রেল, এবার ট্রেনের ইঞ্জিনে বসছে ক্যামেরা]
কেন তৈরি করা যাচ্ছে না আইসিডিএস সেন্টার? সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের মতে, এই কাজের জন্য কোনও পঞ্চায়েত জমি দেয় না। কেউ জমি দানও করেন না। গ্রামের সরকারি খাস জমিগুলি সব জমি মাফিয়াদের দখলে চলে গিয়েছে। ভূমি বিষয়ক দপ্তর সেই খাস জমি উদ্ধারে উদ্যোগী হয় না। ফলে গ্রামে গ্রামে এখনও তৈরি হয়নি শিশু আলয় বা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। কোথাও কারও বারান্দায়, কোথাও খোলা আকাশের নিচে কেন্দ্র চলছে এই কেন্দ্র। গভীর আক্ষেপ করেই এই অব্যবস্থার বিষয়টি জানিয়েছেন সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের মালদহের এক আধিকারিক। যেখানে কেন্দ্রের নতুন বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে সেখানেও নির্মাণকাজে চরম দুর্নীতি হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
মালদহের বামনগোলা ব্লকের জগদ্দলা গ্রাম পঞ্চায়েতে এলাকার কাশিমপুর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। এখানে ২০১৮ সালে তৈরি করা হয় শিশু আলয়ের ঘর। অভিযোগ, চার বছর হতে না হতে খসে পড়ছে পাকা ঘরের চাঙড়। এমজিএনআরজিএস-এর দু’টি তহবিল থেকে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয় ওই কেন্দ্রের একটি ঘর। স্থানীয়দের অভিযোগ, এত টাকা দিয়ে তৈরি করা ঘর চার বছর যেতে না যেতেই ভেঙে পড়ছে কেন?
বিরোধীদের অভিযোগ, শিশু বিকাশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে মালদহের অন্তত তিন হাজার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। ন্যূনতম পরিকাঠামোর অভাব। জল, শৌচাগার, বিদ্যুতের মতো অতি জরুরি এবং মৌলিক পরিকাঠামোই নেই জেলার অধিকাংশ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে। ফলে শিশুবিকাশের বিষয়টি পদে পদে বাধা পাচ্ছে বলে অভিযোগ। বিজেপি নেতা অম্লান ভাদুড়ি বলেন, “পরিকাঠামোর এই নড়বড়ে হাল শোধরানো না-গেলে কোনওমতেই কাঙ্খিত ফল মিলবে না। কেন্দ্রের চাল, আলু চলে যায় তৃণমূলিদের বাড়িতে।” সিপিএম জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “পরিকাঠামো নেই। নিরাপত্তা নেই। শিশুদের স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব পড়ছে। রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না শিশুদের।”