ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL) নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড ও মুম্বই সিটি এফসি-র হয়ে খেলে গিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডার মাতো গ্রিজিচ। বুট জোড়া এখন তিনি তুলে রেখেছেন। কিন্তু এই দেশকে ভোলেননি তিনি। বিশ্বকাপে লুকা মদ্রিচের দল শেষ চারে পৌঁছেছে ব্রাজিলকে টাইব্রেকারে হারিয়ে। প্রথম সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার সামনে ক্রোয়েশিয়া। মহাম্যাচের আগে তাঁর দেশ কি ফুটছে? ফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনাই বা কতটা? শেষ চারের বল গড়ানোর আগে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের হয়ে কলম ধরলেন মাতো গ্রিজিচ।
কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে শ্বাসরোধ করা একটা ম্যাচ জেতার পর ক্রোয়েশিয়ার সবাই খুব খুশি। আমার দেশ এখন উত্তেজনায় কাঁপছে। লুকা মদ্রিচদের উপরে আমাদের অগাধ আস্থা। এবার পরীক্ষা আরও কঠিন। সেমিফাইনালে আরও একটা দক্ষিণ আমেরিকার দলের মুখোমুখি ক্রোয়েশিয়া। আর্জেন্টিনা যে আমাদের কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে, একথা বলাই বাহুল্য। ম্যাচটা নিঃসন্দেহে কঠিন। প্রথমত, সেমিফাইনাল। তার উপরে প্রতিপক্ষ লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা (Argentina)। এবারের টুর্নামেন্টে আর্জেন্টিনা বেশ ভাল ফুটবল খেলছে। ওদেরকে রীতিমতো আগ্রাসী দেখাচ্ছে। ব্রাজিল ম্যাচের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে হবে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধেও। আশা করছি, আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ঠিক ফাইনালে পৌঁছবে ক্রোয়েশিয়া (Croatia)।
কাতারে আমরা সেমিফাইনালে। চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপের রানার্স আপ আমরা। যে কোনও দেশের জন্য দু’ বার সেমিফাইনাল খেলাটা যথেষ্ট গর্বের ব্যাপার। রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে আমরা হারিয়েছিলাম। এবার ওরা প্রতিশোধ নিতেই চাইবে। তবে দুই বিশ্বকাপের দুটো ম্যাচ কিন্তু সব অর্থেই আলাদা। গতবার গ্রুপ পর্বে আমরা মুখোমুখি হয়েছিলাম আর্জেন্টিনার। ক্রোয়েশিয়া সেই ম্যাচ জিতেছিল ৩-০ গোলে। আমরা জেতায় অবাক হয়েছিলেন অনেকেই। প্রশ্ন উঠেছিল, কীভাবে জিতল ক্রোয়েশিয়া? নিন্দুকদের জবাব দিতে পেরেছিলাম আমরা।
[আরও পড়ুন: জার্সিতে আর থাকবে না পাঁচটি স্টার! পেলের সম্মানে অভিনব বদলের ভাবনায় ব্রাজিল]
কাতারে আমরা টানা দুটো ম্যাচ টাইব্রেকারে জিতেছি। ১২০ মিনিটের দারুণ লড়াইয়ের শেষে পেনাল্টি শুট আউট রীতিমতো কঠিন ব্যাপার। খেলোয়াড়দের স্নায়ুর পরীক্ষা দিতে হয়। তার মানে এই নয় যে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ক্লান্ত হয়েই দল খেলতে নামছে। সেমিফাইনাল সম্পূর্ণ অন্য ধরনের একটা ম্যাচ। সবসময়ে এই ধরনের ম্যাচ হয় না। এরকম একটা সেমিফাইনাল খেলা স্বপ্নের মতো। গোটা দেশের নজরে এখন লুকা মদ্রিচরা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন ক্রোয়েশিয়ানরা, তাঁরাও তাকিয়ে মহাম্যাচের দিকে।
সামনে লিও মেসিরা হলেও আমরা কিন্তু অন্যদের নিয়ে ভাবছি না। নিজেদের ক্ষমতার উপরে আমরা বিশ্বাস রাখি। বিশ্বের যে কোনও শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে ক্রোয়েশিয়া, তা অতীতে বহুবার দেখিয়েছি আমরা। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে পিছিয়ে থেকেও আমরা ফিরে এসে ম্যাচ জিতেছি। ক্রোয়েশিয়া কখনওই হাল ছাড়ে না।
ছোট্ট দেশ ক্রোয়েশিয়া। জনসংখ্যা প্রায় চল্লিশ লাখ। মদ্রিচের হাতে বিশ্বকাপ, এই স্বপ্নে বিভোর দেশের মানুষ। লুকা মদ্রিচ সম্পর্কে নতুন করে আর বলার কিছু নেই। বিশাল তারকা মদ্রিচ। অথচ একেবারে মাটির মানুষ। একসময়ে সবাই বলতেন মদ্রিচ ফুটবল খেলে না, ফুটবল প্রচার করে। মদ্রিচের মুখে বড় কথা কখনওই শুনিনি। সবঅর্থেই টিমম্যান মদ্রিচ। দেশবাসী মদ্রিচের জন্য গর্বিত। ওরকম একজন তারকা বারবার বঞ্চিত হবে, এটা কি কেউ চায়? ব্রাজিলের বিরুদ্ধে পেটকোভিচকে গেমচেঞ্জার বলেছিলাম। পেটকোভিচই গোল করে সমতা ফেরায়। ওর মধ্যেও দারুণ ক্ষমতা রয়েছে। এখন দেশের লিগে খেললেও একসময়ে ইটালির ক্লাবে খেলেছে পেটকোভিচ। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে সবার নজরে থাকবে পেটকোভিচের উপরেও।
আর্জেন্টিনার এই দলটায় ভাল প্লেয়ারের অভাব নেই। মেসি তো আছেই। ওর কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ প্লেয়ার আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। মেসি ছাড়াও বাকিরা ইউরোপের বড় ক্লাবে খেলে। ক্রোয়েশিয়া যদি কেবল মেসিকে থামানোর কথা ভাবে, তাহলে ভুল করবে। মেসিকে ম্যান মার্কিং করলে হবে না। ম্যান মার্কিং সমস্যা বাড়াতে পারে আমাদেরই। ক্রোয়েশিয়াকে একটা টিম হয়ে উঠতে হবে। টিম ক্রোয়েশিয়া থামাক মেসিকে। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে যেরকম রণনীতি নেওয়া হয়েছিল, আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধেও একইভাবে খেলতে হবে। বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে খেললে আর্জেন্টিনা নার্ভাস হয়ে যাবে। সেই সুযোগ তখন কাজ লাগাতে হবে আমাদের।