shono
Advertisement

কুসমা গ্রাম থেকে স্পেন, দেশের জার্সিতে গোল করার স্বপ্ন দেখে আদিবাসী সৃজল

অনূর্ধ্ব-১৩ ওড়িশা ইউথ লিগে প্রথমবার খেলতে নেমেই আট ম্যাচে কুড়ি গোল করেছে সৃজল।
Posted: 12:31 PM Feb 09, 2024Updated: 12:31 PM Feb 09, 2024

প্রসূন বিশ্বাস: চোখ দেখলেই বোঝা যায় স্বপ্ন বুনতে পারে এই চোখ।
সেই স্বপ্নই হঠাৎ করে বলতে শুরু করল সে, “স্বপ্ন দেখি ভারতের হয়ে গোল করে সেলিব্রেশন করছি।” কথা শেষ হতে না হতেই তার পাশের ছেলেটি হাসতে শুরু করল। বোঝা গেল সেও এই কিশোরের খুদে রুমমেট। একটা হস্টেল যেমন হয়। ছোট ঘর। দুটো করে ডবল ডেকার খাট। চারজনের থাকার জায়গা।

Advertisement

আর্দার ফুটবল অ্যাকাডেমির পাতিয়া অঞ্চলের হস্টেলের সেই ডবল ডেকার খাটের একটার উপর বসে নিজের কিটস গোছাতে গোছাতে যে শান্ত আদিবাসী ছেলেটি কথা গুলো বলে যাচ্ছিল, কে বলবে এই কৃষ্ণকায় দ্বাদশবর্ষীয় তরুণ ওড়িশা যুব ফুটবলের অন্যতম চর্চিত নাম সৃজল কিস্কু। সদ্য শেষ হওয়া অনূর্ধ্ব-১৩ ওড়িশা ইউথ লিগে প্রথমবার খেলতে নেমেই আট ম্যাচে কুড়ি গোল করার পাশাপাশি স্পেনের এসপিএফ রাস সকার অ্যাকাডেমিতে দুই মাসের ট্রেনিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন। গত বছর দুজন স্প্যানিশ উয়েফা প্রো লাইসেন্স কোচ এসে ওড়িশা থেকে দুশো জন ফুটবলারের মধ্যে থেকে ট্রায়ালের মাধ্যমে দুজনকে ওদেশে ট্রেনিংয়ের সুযোগ দিয়েছেন। তাদেরই একজন সৃজল। অন্যজন বর্তমান খেলো ইন্ডিয়ায় অংশ নেওয়া ওড়িশা মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক সুলেখা কানহার। এই বছর আগস্ট-সেপ্টেম্বরে স্পেন যাচ্ছে তারা।

[আরও পড়ুন: মোদি ক্ষমতায় ফিরলেও ২০১৯ লোকসভার তুলনায় কমবে আসন? প্রকাশ্যে সমীক্ষার রিপোর্ট]

যদিও সৃজল জন্মসূত্রে ওড়িশার নয়, সে আসলে ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ জেলার আদিবাসী অধ্যুষিত কুসমা গ্রামের এক আদিবাসী পরিবার থেকে উঠে আসা কিশোর। গত এপ্রিলেই ঝাড়খণ্ড থেকে ওড়িশার আর্দার ফুটবল অ্যাকাডেমিতে সুযোগ পেয়েছে। তখন থেকেই ওড়িশার আর্দার ফুটবল অ্যাকাডেমিতে চলে আসা। বাবা সন্দীপ কিস্কু ঝাড়খণ্ডের কুসমা গ্রামের একজন নিম্নবিত্ত চাষি। সৃজলের কথায়, “আমি স্পেনে যাওয়ার কথা বলতে বাবা একটু অবাকই হয়েছিল। কারণ এর আগে স্পেন সম্পর্কে কিছুই জানত না বাবা। আমরা চাষি পরিবারের ছেলে, বাড়ির লোকেদের বাইরের দুনিয়ার সম্পর্কে অতটা জানা নেই।”
তবে স্পেন সুযোগ পাওয়া নিয়ে তার অ্যাকাডেমির সতীর্থরা যখন উচ্ছ্বসিত, তখন সেদেশে যাওয়া নিয়ে অত মাথাব্যথা নেই সৃজলের। ওড়িশাতেই তৈরি হচ্ছে দেশের সেরা ফিফা এলিট অ্যাকাডেমি। স্পেনের ট্রেনিংয়ের চেয়েও অনূর্ধ্ব-১৩ সেই অ্যাকাডেমিতে সুযোগ করে নেওয়াই পাখির চোখ তার। বর্তমানে সৃজল যে অ্যাকাডেমিতে রয়েছে সেই আর্দার ফুটবল অ্যাকাডেমির চিফ কোচ জয়দীপ মহাপাত্র বলেন, “দু মাস স্পেনে ট্রেনিংয়ের চেয়েও যদি এই এলিট অ্যাকাডেমিতে সুযোগ পেয়ে যায় তাহলে আরও উন্নত সুযোগ-সুবিধা পাবে সৃজল। শুনেছি ওখানকার ছেলেদের বিদেশে উন্নত ট্রেনিংয়ের সুযোগ থাকবে ভবিষ্যতে। আমার ধারণা এই ফিফা অ্যাকাডেমিতে সুযোগ পেলে দেশ একটা ভালো ফুটবলার পেতে পারে। আমরা ওকে ট্রায়ালের জন্য ছাড়ছি। যদি সুযোগ পেয়ে যায় তাহলে পুরোপুরি ছেড়ে দেব।”
এখন ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী কুসমা গ্রামে সোহরাই পরব চলছে। আদিবাসীদের প্রকৃতি কেন্দ্রিক উৎসব এই সোহরাই। সেই সময় প্রকৃতির সঙ্গে গরুকেও পুজো করা হয়। কিন্তু সেই পরবে শামিল হবে না সৃজল। তার এই সময় রয়েছে বড় পরীক্ষা। ফিফা অ্যাকাডেমির চূড়ান্ত বাছাইয়ে তাকে নির্বাচিত হতে হবে। তাহলে বাবা মায়ের কষ্ট লাঘব হবে অনেকটাই। সৃজল মূলত মাঝমাঠের ফুটবলার। তবে গোল করতে ভালোবাসে। যদিও সে বলছে, গোল করেও যা আনন্দ পাই, গোলের বল সতীর্থকে সাজিয়ে দিলেও ততটাই আনন্দ হয়। অন্যরা গোল করলে ভালো লাগে। আর্দর ফুটবল অ্যাকাডেমির চিফ কোচ জয়দেব মহাপাত্র আরও বলেন, “সৃজল হল ইউটিলিটি ফুটবলার। দলের প্রয়োজনে যে কোনও পজিশনে ফিট করে যায়। এমন ফুটবলার মেলে কমই। ”
গ্রামের মাঠ থেকে এখন সে স্কলারশিপ পেয়ে ওড়িশার নামী স্কুল ওডিএম গ্লোবাল স্কুলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। হাসতে হাসতে সৃজলের সহজ সরল উক্তি, “ফুটবল খেলতে পারি বলে এত বড় স্কুলে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। নয়ত এত বড় স্কুলে পড়ার ক্ষমতা আমাদের মত মাটির বাড়িতে থাকা ছেলেদের কোথায়। ” ক্লাস ফাইভে পড়া ছেলেটি বাস্তব বোঝেন যথেষ্টই। ফুটবলার কোটায় স্কলারশিপ পেয়েছে বলে তাকে স্কুল দলের হয়েও খেলতে হয়। রিলায়েন্স লিগের দু ম্যাচ খেলে ইতিমধ্যেই নয় গোল করে ফেলেছেন এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার।

 

[আরও পড়ুন: ‘আমাদের প্রাপ্য ট্রফি কেড়ে নেওয়া হয়েছে’, SAAF চ্যাম্পিয়নশিপে যুগ্মজয়ী হয়ে বিস্ফোরক কোচ]

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement