সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সুপার কাপ (Kalinga Super Cup) চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানের (Mohun Bagan) বিরুদ্ধে মর্যাদার মেগা ডার্বি ড্র। ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) রক্ষণ নিয়ে অনেক ইতিবাচক আলোচনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেই রক্ষণই আইএসএলের (ISL 10) মঞ্চে যে তাসের ঘরের মতো নর্থইস্ট ইউনাইটেডের (North East United) বিরুদ্ধে ভেঙে পড়ল! এই হার কিছুতেই হজম করতে পারছেন না লাল-হলুদের হেড কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত (Carles Cuadrat)। কয়েক মাস আগে পাহাড়ের দলকে ৫-০ দলকে উড়িয়ে দেওয়া ইস্টবেঙ্গল কেন এভাবে হারের মুখ দেখল? কোন জায়গায় ছিল গলদ? দুই নতুন বিদেশি ভিক্টর ভাসকোয়েজ (Victor Vazquez) ও ফেলিসিও ব্রাউন (Felicio Brown) কেমন পারফরম্যান্স করলেন? সেটা নিয়ে পোস্টমর্টেম করলেন তিন প্রাক্তন ফুটবলার মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য (Monoranjan Bhattacharya), মেহতাব হোসেন (Mehtab Hossain) এবং অ্যালভিটো ডি কুনহা (Alvito D’Cunha)। যা সংবাদ প্রতিদিন.ইন-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
কোন কারণে হার…?
মনোরঞ্জন: ম্যাচের শুরু থেকেই ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণের ফুটবলারদের মধ্যে বিন্দুমাত্র বোঝাপড়া ছিল না। এমন এলোমেলো ফুটবল দেখে আমি খুবই হতাশ। সেটা নিয়ে আগেও অনেক মন্তব্য করেছি। গত বছর থেকে রক্ষণ খারাপ খেলছে। কোনও ধারাবাহিকতা নেই। গত আইএসএলে অনেক গোল করলেও, গোল ধরে রাখতে পারেনি। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। তবে এবার সুপার কাপে ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণের পারফরম্যান্স দেখার পর আশা বেড়েছিল। তবে এবার হতাশ হলাম। ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হল বিপক্ষ দল খুব দ্রুত কাউন্টার অ্যাটাকে উঠলেই, কুয়াদ্রাতের দলের রক্ষণ খেই হারাচ্ছে। ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণের ফুটবলাররা মোটেও পুরো ফিট নয়। কেউ উঠলে নামতে পারছে না। আর সেই সুযোগেই নর্থইস্ট দুটি গোল কাউন্টার অ্যাটাকে করে গেল। এবং সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হল লাল-হলুদের রক্ষণ একটা প্যারালাল সিঙ্গল লাইনে চলে আসছে। ফলে একটা থ্রু বাড়ালেই বেড়ে যাচ্ছে গোল খাওয়ার সম্ভাবনা। রক্ষণ প্যারালাল লাইনে থাকলে স্ট্রাইকাররা অনেক বেশি সুবিধা পায়। এই দুর্বলতা নিয়ে কুয়াদ্রাতকে ভাবতেই হবে। নাহলে ভবিষ্যতে বিপদ আরও বাড়বে। একে তো রক্ষণের বেহাল অবস্থা, এরমধ্যে সৌভিক কার্ড সমস্যার জন্য খেলতে পারল না। ফলে মাঝমাঠের ফুটবলারদের মধ্যে তালমেলের অভাব ছিল। সৌভিক মাঠে থাকলে রক্ষণের ফুটবলাররা অনেক ফ্রি খেলতে পারে। কারণ বিপক্ষের স্ট্রাইকারদের বিরুদ্ধে প্রথম ট্যাকেল করে শৌভিক। এমনকি অনেকবার ওকে নিজের বক্সে নেমেও ট্যাকেল করতে দেখেছি। আসলে সৌভিক খেললে ওর গুরুত্ব বোঝা যায় না। ছেলেটা মাঠে না থাকলে ওর অভাব টের পাওয়া যায়।
মেহতাব: সুপার কাপে জেতার পর ডার্বি ড্র করেছিল ইস্টবেঙ্গল। আমার মনে হয় পরপর দুই সাফল্য পেয়ে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদের মধ্যে আত্মতুষ্টি ভর করেছিল। এরসঙ্গে যোগ হয়েছিল নর্থইস্টের বিরুদ্ধে গত ম্যাচে ৫-০ গোলে জয়। তাছাড়া ক্রেসপোর চোট, সৌভিকের কার্ড হারের অন্যতম বড় কারণ। ওরা দুজন না থাকার জন্য মিডফিল্ড অচল ছিল। ফলে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে দুটি গোল হয়েছে। ক্লেটন সিলভা নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারেনি। ফেলিসিও ব্রাউনের গোলে অ্যাসিস্ট করা ছাড়া নিজে একটা গোল করেছিল। এছাড়া পুরো ম্যাচে ক্লেটনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরসঙ্গে আবার মেজাজ হারিয়ে চতুর্থ হলুদ কার্ড দেখল। ফলে মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে ও খেলতে পারবে না। আমার মতে দলের কথা মাথায় রেখে ক্লেটন রেফারির সঙ্গে তর্ক না করলেই পারত। এর পাশাপাশি সৌভিকের মতো লিডারকে আমরা মিস করেছি।
অ্যালভিটো: শুধু রক্ষণের ঘাড়ে দোষ চাপালে চলবে না। হারলে একটা দল হারে। আবার জিতলে একটা দলের জয় হয়। আমার তো মনে হয় মাঝমাঠে সৌভিক ও ক্রেসপো না থাকার জন্য ইস্টবেঙ্গল ধাক্কা খেল। এরমধ্যে আবার ক্লেটন পরবর্তী ম্যাচে নেই। সবাই খালি চোখে রক্ষণের ফুটবলারদের দোষ দিচ্ছে। কারণ দুটি গোল হয়েছিল কাউন্টার অ্যাটাক থেকে। পার্দো ও অজয় ছেত্রী চেষ্টা করলেও, মাত্র ৪ মিনিটে গোল হজম করা হারের অন্যতম বড় কারণ। এরসঙ্গে যোগ হয়েছিল ক্লেটনের গোল মিস।
[আরও পড়ুন: ব্রাত্য পূজারার কাছে কী আবদার করলেন অশ্বিন? জানলে অবাক হবেন]
প্রথমে ছয়ে থাকার সম্ভাবনা…
মনোরঞ্জন: এদিকে এই হারের ফলে লিগ টেবলে আরও খারাপ জায়গায় চলে গেল ইস্টবেঙ্গল। ১২ ম্যাচে মাত্র ১২ পয়েন্ট নিয়ে ৯ নম্বরে রয়েছে লাল-হলুদ। এমন অবস্থা কাটিয়ে শেষ ছয়ে জায়গা করে নিতে হলে রক্ষণের হাল ফেরাতেই হবে।
মেহতাব: প্রথম ছয়ে থাকা খুব সহজ নয়। কারণ রক্ষণের অবস্থা ভালো মনে হল না। এরমধ্যে আবার ক্লেটন মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে খেলতে পারবে না। বেশ বুঝতে পারছি কুয়াদ্রাতের কাজ কঠিন হতে চলেছে। ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদের মনে রাখা উচিত যে, পারফর্মারকে রোজ পারফর্ম করতে হয়।
অ্যালভিটো: ম্যাচটা জিতে নর্থইস্ট ভালো জায়গায় চলে গিয়েছে। পাঞ্জাব, জামশেদপুর, বেঙ্গালুরু শুরুটা বেশ ভালো জায়গায় রয়েছে। এটা ঠিক যে এই দলগুলো ইস্টবেঙ্গল থেকে বেশি ম্যাচ খেলেছে, তবে যাই হোক লাল-হলুদের চাপ বাড়বে। কারণ মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে সৌভিক দলে ফিরলেও, ক্রেসপো কিন্তু মাঠে নামতে পারবে না। এক্ষেত্রে সৌভিক ও ভিক্টর ভাসকোয়েজের সঙ্গে কতটা জায়গা ধরে খেলতে পারে সেটা কিন্তু দেখার বিষয় হবে। কারণ মাঝমাঠে নতুন জুটির শুরু থেকেই ক্লিক করার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। তাই আমার মতে মুম্বই ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পেলেই খুশি হওয়া উচিত।
কেমন খেললেন দুই নতুন বিদেশি ভিক্টর ভাসকোয়েজ ও ফেলিসিও ব্রাউন?
মনোরঞ্জন: এখানে আর একটা ব্যাপার নিয়েও আলোচনা দরকার। অনেকেই ভিক্টর ভাসকোয়েজ ও ফেলেসিওকে নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে। তবে আমার মনে হয় দুই বিদেশিকে নিয়ে এখনই কথা বলার বিশেষ প্রয়োজন নেই। কারণ ভারতের পরিবেশ, আবহাওয়া ও খাওয়া-দাওয়ার সঙ্গে আবার নতুন দল। অপরিচিত সতীর্থদের সঙ্গে বোঝাপড়ার জন্য আরও সময় দেওয়া দরকার।
মেহতাব: প্রথম ম্যাচ দেখে দুই বিদেশিকে নম্বর দেওয়ার কোনও মানে হয় না। স্ট্রাইকার হিসেবে ফেলিসিও গোল করে নিজের কাজ করেছে। ভিক্টর কিন্তু খুব বেশি বল ধরেনি। তবে আমার মনে হল ওর বল হোল্ড ও রিলিজ করা বেশ চোখে পড়েছে।
অ্যালভিটো: ফেলিসিও সুযোগ সন্ধানী ফুটবলার সেটা খুব সময় মাঠে থেকে বুঝিয়ে দিয়েছে। ওর গোলের জন্য একটা সময় স্কোরলাইন ৩-২ হয়ে যায়। ভিক্টরের পাস বাড়ানো দারুণ লেগেছে। ওর মধ্যে লড়াকু মানসিকতার পাশাপাশি লিডারশিপ কোয়ালিটি রয়েছে। সবমিলিয়ে আমি অন্তত দুই বিদেশিকে নিয়ে আশাবাদী। এহেন ভিক্টর আগামী ম্যাচে শুরু থাকলে লাল-হলুদের শক্তি আরও বাড়বে। আর তাছাড়া কুয়াদ্রাতের কাছে কোনও বিকল্প নেই। ক্রেসপো নেই। ক্লেটনের কার্ড। তাই হিজাজি, পার্দো, ভিক্টর ও ফেলিসিও ছাড়া তো এই মুহূর্তে কোনও বিদেশি নেই।