রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: ঘরের মাঠে একপেশে রনজি ট্রফি ফাইনাল হার। বত্রিশ বছর পর ইডেনে রনজি জয়ের মায়া-দিন ফেরার বদলে কুৎসিত ক্রিকেটে বঙ্গ ক্রিকেটারদের লজ্জায় মুখ চুন করে মাঠ ছাড়া। ‘ভুক্তভোগী’ রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা এরপর কী করবে? দ্রুত কোচ-অধিনায়ককে ডেকে ফাইনাল হারের ময়নাতদন্ত করতে বসে পড়বে। পরবর্তী রনজি ট্রফি (Ranji Trophy) নিয়ে একটা ‘রোডম্যাপ’ না হোক, অন্তত একটা খসড়া তৈরি করবে। স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধির ‘র্যাডারে’ যা যা ধরা পড়বে, সে সব করবে। তা, সিএবি (CAB) কী করছে? কেন, প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের নেমপ্লেট খুলছে! পূর্বতনের চেয়ার-টেবিল এক লহমায় তাঁর ঘর থেকে বার করে দিচ্ছে! পরে আবার ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতে নেমে সেই নেমপ্লেট আবার বসানো হচ্ছে পুরনো জায়গায়, চেয়ার-টেবিল ফিরে যাচ্ছে যথাস্থানে! কী বললেন, ক্রিকেট? ক্রিকেট নিয়ে ভাবনাচিন্তা? ধুর, ধুর, ও সব এ বঙ্গে এখন বিলাসিতা মাত্র!
রনজি ট্রফি ফাইনালে ট্রফি দেওয়াকে কেন্দ্র করে যা চলছে বঙ্গ ক্রিকেটে, সেটা এক কথায় ন্যক্কারজনক। টিম পারেনি। জয়দেব উনাদকটের সৌরাষ্ট্র ইডেনে (Eden Gardens) স্রেফ পিষে দিয়ে চলে গিয়েছে বাংলাকে। কোথায় অন্তহীন শোকে অর্ধনমিত থাকবে বঙ্গ ক্রিকেটের পতাকা, তা নয়। উলটে বর্তমান প্রশাসকরা কি না অযাচিত অন্তর্কলহে জড়িয়ে পড়ছেন! ঠিক কী হয়েছে? ঘটনার সূত্রপাত, রনজি ফাইনালের চতুর্থ দিন সকালে। বাংলাকে যে দিন ন’উইকেটে গুঁড়িয়ে দ্বিতীয়বার রনজি ট্রফির মালিকানা নেয় সৌরাষ্ট্র। খেলা শেষে রনজি জয়ী সৌরাষ্ট্র অধিনায়ক জয়দেব উনাদকটের হাতে ট্রফি তুলে দেন বর্তমান আইপিএল (IPL) গভর্নিং কাউন্সিল সদস্য ও প্রাক্তন সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়া। ও দিকে, বোর্ডের তরফে একজন সিএবি-র বর্তমান প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়কে (Snehashis Ganguly) বলে আসেন যে, বাংলার ন’উইকেট পড়ে গেলে তৈরি থাকতে। তাঁকে চ্যাম্পিয়নের ট্রফি তুলে দিতে হবে। আবার অভিষেকের কাছে কিছুক্ষণে বোর্ডের নির্দেশ যায় যে, ট্রফি তিনি দেবেন। যার পর একটা ভুল বোঝাবুঝি দেখা দেয়।
[আরও পড়ুন: মধ্যপ্রদেশে ৬ হাজার ‘পাটোয়ারি’ পদে আবেদন ১২ লক্ষের, প্রার্থীরা কেউ ডক্টরেট, কেউ ইঞ্জিনিয়ার]
আদতে ট্রফি দেওয়ার কথা ছিল, বর্তমান বোর্ড যুগ্ম সচিব দেবজিৎ সইকিয়ার। চতুর্থ দিন সকালে তাঁর আসার কথাও ছিল। কিন্তু তাঁর ফ্লাইট ছিল যখন, ততক্ষণে খেলা প্রায় শেষের দিকে। দেবজিৎ বুঝতে পারেন, তাঁর পক্ষে সময়ে আসা সম্ভব হবে না। তিনি তখন ফোন করেন বোর্ড সচিব জয় শাহকে (Jay Shah)। বোর্ড সচিব নাকি তখন বলেন যে, কলকাতায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আছেন কি না? কারণ, তিনি প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্ট। তিনি ট্রফি দিতেই পারেন। কিন্তু সৌরভও না থাকায় শেষ পর্যন্ত অভিষেককে ট্রফি দিতে বলা হয়। নিয়ম অনুযায়ী যা ঠিক। রনজি ট্রফি বোর্ড টুর্নামেন্ট। বোর্ড কর্তাই তো ট্রফি দেবেন।
এখানেই ব্যাপারটা চুকেবুকে গেলে কথা ছিল। কিন্তু যায়নি। উলটে উত্তাপ বাড়তে থাকে। ‘ক্ষোভের আগুনে’ সিএবি থেকে অভিষেক ডালমিয়ার (Abhishek Dalmia) নেমপ্লেট বার করে দেওয়া হয়! ঘর থেকে বার করে দেওয়া হয় তাঁর চেয়ার-টেবিল! যা দেখে সদস্যদের অনেকে স্তম্ভিত। এতটা অধঃপতন যে বঙ্গ ক্রিকেট প্রশাসনের হতে পারে, অনেকেই কল্পনা করতে পারেননি। ব্যাপারটা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) পর্যন্ত পৌঁছে যায়। কেউ কেউ তো ঠিক করেন যে, সিএবি সচিব নরেশ ওঝার কাছে গিয়ে জবাবদিহি চাইবেন অভিষেকের নেমপ্লেট নামিয়ে দেওয়া নিয়ে, জানতে চাইবেন কেন পূর্বতন প্রেসিডেন্টের প্রতি এতটা অসৌজন্য দেখানো হল? অনেকেরই মতে, সিএবিতে এখন দক্ষ প্রশাসকের চেয়ে অবাঞ্ছিত ‘উপযাজকে’র সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। তাই যা হওয়ার, তাই হচ্ছে। আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ইস্তফা দিতে চাইছেন। ভিশন ২০২৫ ‘উদ্বাস্তু’ প্রোজেক্টে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতার পেশি-আস্ফালনই এখন মুখ্য, ক্রিকেট নয়। বুধবার ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতে নেমে যথাস্থানে অভিষেকের নেমপ্লেট ফিরে গিয়েছে। কিন্তু বিতর্কের লাভাস্রোত তাতে থামেনি।
[আরও পড়ুন: শিব সেনার নাম-প্রতীক আপাতত শিণ্ডেদেরই, সুপ্রিম কোর্টেও স্বস্তি পেলেন না উদ্ধব]
কী বুঝলেন? লজ্জার ফাইনাল হারের পর বঙ্গ ক্রিকেট প্রশাসকদের মনোভাব নিয়ে বা কী বলবেন? বলারও নেই, লেখারও নেই। উপায় কী? বোধ ইহাদের এতই সূক্ষ্ণ যে প্রায় নাই বলিলেই চলে!