রমেন দাস: কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে শিক্ষক নিয়োগ মামলায় ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিল হয়েছে। চাকরিহারা প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক। প্যানেলের মেয়াদ বাতিলের পরও অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করে যে চাকরি দেওয়া হয়েছিল, সেই চাকরিপ্রার্থীদের সুদ-সহ বেতনও ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া একেবারে নতুন করে করতে হবে বলে জানিয়েছে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। নিঃসন্দেহে চাকরিপ্রার্থীদের কাছে বড়সড় ধাক্কা। এক নিমেষে যেন নেমে এসেছে আঁধার। কিন্তু এসবের মাঝেও শেষ আশা ছাড়তে নারাজ আন্দোলনকারী রাসমনি পাত্র। ধর্মতলার অনশন মঞ্চে ১১৩৫ দিন কাটানোর পরও রাসমনি বলছেন, ''চাকরিই আমাদের বাঁচার শেষ লড়াই। এখনই হতাশ বলব না। বিচারব্যবস্থার প্রতি আবেদন, যোগ্যদের চাকরি পাওয়ার রাস্তা বন্ধ করবেন না।''
২০১৬ সালের SSC পরীক্ষায় প্যানেলভুক্ত হয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর (East Midnapore) রাসমনি পাত্র। তার পরও স্কুল শিক্ষক পদে মেলেনি চাকরি, হয়নি নিয়োগ। চাকরির দাবিতে ধর্মতলায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে অনশন মঞ্চে যোগ দিয়েছিলেন রাসমনি। আর গত ডিসেম্বরে সেই ধরনামঞ্চেই মাথা নেড়া করে প্রতিবাদের অন্য পথ খুঁজে নিয়েছিলেন রাসমনি। তাঁর এই কাণ্ড দেখে সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। এর পর তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) মধ্যস্থতায় রাসমনিদের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনায় বসেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। কিন্তু আইনি জটই বারবার নিয়োগের পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবু ধৈর্য ধরে বিচারব্যবস্থার উপর ভরসা রেখে আন্দোলনের পথ থেকে সরে আসেননি রাসমনি।
ন্যায্য চাকরি না পেয়ে হতাশায় কলকাতার রাস্তায় নিজের চুল বিসর্জন দিয়েছিলেন রাসমনি পাত্র। ফাইল ছবি।
[আরও পড়ুন: ফেসবুক বান্ধবীর টাকা-গয়না হাতিয়ে হোটেলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ! মুর্শিদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার যুবক]
সোমবার, হাই কোর্ট (Calcutta HC) এসএসসি মামলার রায়দানের পরও আশার আলো নিভতে দিলেন না তিনি। ধরনামঞ্চে বসে বললেন, ''আমরা কখনও চাইনি, গোটা প্যানেল বাতিল হয়ে যাক। আমরা চেয়েছিলাম, যাদের ওএমআর (OMR) শিট ঠিক আছে, যারা যোগ্যতার ভিত্তিতে প্যানেলভুক্ত হয়েছে, তাদের চাকরিটা হোক, অযোগ্যদের বাদ দিয়ে। সরকার অনেক চেষ্টা করেছিল নিয়োগ জট খোলার। এবার প্যানেল বাতিল হয়ে নতুন করে সব করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এখন চাই, সেই প্রক্রিয়া যেন স্বচ্ছভাবে হয়। আমাদের চাকরিই একমাত্র বাঁচার শেষ রাস্তা। যোগ্যরা যেন চাকরি পায়।'' কিন্তু গোটা পরিস্থিতিতে রাসমনিরা কি সত্যিই পারবেন লড়াইয়ের সেই শক্তি ধরে রাখতে? এ প্রশ্ন বাস্তব, উত্তর সময় দেবে।