সুমিত বিশ্বাস ও দেবব্রত দাস: কংসাবতীর নীল জলরাশিতে ভেসে বেড়াচ্ছে রাঙামুড়ি, জলকাক, বড় পানডুবি। ডানা ঝাপটাচ্ছে সরাল, ভূতিহাঁস। এই অ্যাডভেঞ্চারের ছবি পর্যটকদের চোখের সামনে তুলে ধরতে চায় রাজ্য। তাই দক্ষিণ বাঁকুড়ার পর্যটন কেন্দ্র মুকুটমণিপুরকে (Mukutmanipur) ঘিরে ‘বার্ড ওয়াচিং ইকো ট্যুরিজম সেন্টার’ গড়ে তুলতে পক্ষী গণনার কাজ শুরু করল বনদপ্তর।
‘উইন্টার ওয়াটার বার্ড কাউন্ট’ নামে কর্মসূচি নিয়ে এই কাজ শুরু করেছে বাঁকুড়া দক্ষিণ বনবিভাগ। পুরুলিয়া-বাঁকুড়ায় বন্যপ্রাণ নিয়ে কাজ করা গ্রিন প্ল্যাটুকে সঙ্গে নিয়ে এই কাজ করছে বাঁকুড়া বনদপ্তর। গতবছরও শীতকালে এই কাজ শুরু করেছিল বাঁকুড়া দক্ষিণ বনবিভাগ। এবারও ওই জলাধারে থাকা পাখিদের তালিকাভুক্ত করে ‘বার্ড অফ বাঁকুড়া’ নামে একটি বই প্রকাশ করবে বনদপ্তর। গতবছর এই জলাধারে যে পাখি গণনা হয়েছিল তাতে প্রায় কমবেশি ৩০০ প্রজাতি ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল। চলতি মাসের ১২ তারিখ থেকে এই কাজ শুরু হয়েছে। ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই কাজ চলবে। বাঁকুড়া দক্ষিণ বন বিভাগের ডিএফও ই.বিজয় কুমার বলেন, “গত বছরও আমরা এই কাজ করেছিলাম। মুকুটমণিপুর জলাধারে প্রায় ৩০০ প্রজাতির পাখি আমরা ক্যামেরাবন্দি করে তা তালিকাভুক্ত করেছি। এবারও আমাদের এই কাজ শুরু হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, মুকুটমণিপুরকে ঘিরে ‘বার্ড ওয়াচিং ইকো ট্যুরিজম সেন্টার’ গড়ে তোলা।”
[আরও পড়ুন: করোনা আতঙ্কের মাঝেই দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যের অভিযোগ, নতুন বছরে শুনশান টাকি]
রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে ওপরের দিকেই রয়েছে এই মুকুটমণিপুর। শুধু পর্যটনকেন্দ্র নয়, এই এলাকা পিকনিক স্পটও। তাই মুকুটমণিপুরকে ঘিরে আরও পরিবেশবান্ধব পর্যটনের প্রসারে এই কাজ হাতে নিয়েছে বাঁকুড়া দক্ষিণ বনবিভাগ। তাঁরা চাইছেন, মুকুটমণিপুর জলাধারে ফি বছর যে বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী পাখি আসে সেই পক্ষীদের যাতে পর্যটকরা দেখতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা। আর এই কাজের মধ্য দিয়েই এই বনমহলের পরিবেশবান্ধব পর্যটনকে রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরতে চাইছে বনদপ্তর। কাঁসাই ও কুমারী নদীকে ঘিরে এই মুকুটমণিপুর জলাধার।
একদিকে বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর। আরেকদিকে মানবাজারের দোলাডাঙা। মুকুটমনিপুরের পাশেই রয়েছে বনপুকুরিয়া ডিয়ার পার্কও। এই পর্যটন কেন্দ্রে পক্ষী নিরীক্ষণ জুড়লে এই এলাকার পর্যটনের আরও প্রসার ঘটবে। পুরুলিয়ার মানবাজার এলাকায় গিয়ে এই জলাধারে থাকা বেশ কিছু পাখি নিরীক্ষণ করেছে গ্রিন প্ল্যাটু। রবিবার তারা নৌকা নিয়ে বনকর্মীদের সহায়তায় মুকুটমণিপুর জলাধারে ক্যামেরায় ছবি তুলে, ভিডিও করে, বাইনাকুলারে অবস্থান দেখে পাখির গণনা করেন। ওই সংগঠনের সম্পাদক অনির্বাণ পাত্র বলেন, “এবার বৃষ্টি বেশি হওয়ায় এই জলাধার একেবারে টইটুম্বুর। ফলে গতবারের মতো পাখি পাইনি। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩০ রকমের প্রজাতি আমাদের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। তবে এই কাজ এখনও অনেক বাকি।”
যে পাখিগুলো এখনও পর্যন্ত দেখা পাওয়া গিয়েছে তারমধ্যে পরিযায়ী ছাড়াও স্থানীয় পাখিও রয়েছে। রাঙামুড়ি, সরাল, জলকাক, বড় পানডুবি, কাদাখোঁচা, ভুতিহাঁস, শামুকখোল, মদনটাক-র মত পক্ষীদের তালিকাভুক্ত করেছে বনদপ্তরের ওই সংস্থা। বাঁকুড়া দক্ষিণ বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জলাধারে যেসব পাখি মিলছে তাদের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে দু’মলাটে বন্দি করা হচ্ছে যা পর্যটকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এই কাজের মধ্য দিয়ে বাঁকুড়া দক্ষিণ বন বিভাগ চাইছে, পরিযায়ী পাখির আবাসস্থলকে নিরাপদ রাখা এবং পাখিদের বিচরণস্থল সংরক্ষণে আরও জোর দেওয়া। কারণ, বিশ্বজুড়ে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে পাখিদের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ফলে তারা মারাত্মক খাদ্য সংকটের মধ্যে পড়ছে। এই অবস্থাও দূর করা লক্ষ্য ওই বনবিভাগের।