ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: নিয়মমতো ধরে এনে চলছিল নির্বীজকরণ অভিযান। সেই চিকিৎসা করতে গিয়ে নজরে এল পথ কুকুরদের মধ্যে ক্যানসারের দাপট ! দমদমের দক্ষিণ দমদম পুর এলাকার ঘটনা। পুরসভা সূত্রের খবর, মাদি কুকুররাই খুব বেশি করে এই ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। পুরুষ কুকুরদের মধ্যেও অল্পবিস্তর তা ছড়িয়েছে। পুরকর্তারা বলছেন, পোষা কুকুররা যে ক্যানসারের শিকার একেবারে হয় না, তেমনটা নয়। কিন্তু, পথ কুকুরদের মধ্যে যেভাবে রোগটা দাঁত নখ বার করছে, তা যথেষ্ট চিন্তার বিষয়। কর্কটের নিদারুণ জ্বালায় অস্থির হয়ে রাস্তার কুকুররা লোকজনকে আঁচড়ে কামড়ে ব্যতিব্যস্ত করে তুলতে পারে, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। “মানুষ বুঝতেই পারবে না, ওরা কেন কামড়াচ্ছে। অবলা জীবগুলো যে ভিতরে ভিতরে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে, তা কি কারও মাথায় আসবে?” খেদ এক পুরকর্তার।
এনআরএস কুকুর কাণ্ডের পর থেকে বিভিন্ন পুরসভায় কুকুরদের নির্বীজকরণের প্রবণতা বেড়েছে। কুকুরের কামড় থেকে বাঁচতে চলছে নির্বীজকরণের প্রক্রিয়াও। কখনও অভিযোগের ভিত্তিতে, কখনও স্বতঃস্ফূর্তভাবেই চলছে এই অভিযান। কলকাতা পুরসভার পাশাপাশি জেলা শহরতলির একাধিক পুরসভা রীতিমতো উদ্যোগ নিয়ে এই অভিযান শুরু করেছে। অন্যান্য পুরসভার মতো দক্ষিণ দমদম পুরসভাতেও এই কাজ শুরু হয়। কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, ইদানীং বেশ কিছু এলাকায় নির্বীজকরণের এই কাজ করতে গিয়ে তাদের হাতে ধরা পড়েছে ক্যানসার আক্রান্ত একাধিক কুকুর। যাদের মধ্যে মাদি কুকুরই বেশি।
[হাওড়া স্টেশন নোংরা করলেই দিতে হবে মোটা অঙ্কের জরিমানা]
কীভাবে এই ক্যানসার ধরা পড়ছে ? পশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ গৌতমপ্রসাদ সরখেল বলছেন, কুকুরদের অনবরত যৌন সঙ্গম হয়। তারপর অনিয়মিত জীবনযাপনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্ত্রী কুকুরদের যৌনাঙ্গ। সেই অসাবধানী জীবনযাপনই ডেকে আনছে বিপদ। যৌনাঙ্গের সে ক্ষত শেষে বীভৎসরকম সংক্রামিত হয়ে যাচ্ছে। সেখানেই টিউমার দেখা দিচ্ছে। তা থেকেই হয়ে যাচ্ছে ক্যানসার। পুরুষ কুকুরদের যৌনাঙ্গ সেক্ষেত্রে অনেকটাই সুরক্ষিত। তারপরও তাদের অসাবধানী জীবনযাপন ক্ষতি ডেকে আনে।
কিন্তু, কুকুরের ক্যানসার কি সারানো যায়? “আলবত যায়”-ডাঃ সরখেলের কথায়, ক্যানসারে আক্রান্ত এই ধরনের কুকুরদের চিহ্নিত করা খুব সহজ। তাদের যৌনাঙ্গের ক্ষত দেখলেই তৎপর হওয়া উচিত। তবে সেই তৎপরতা পুরকর্মীদের পাশাপাশি এলাকার মানুষেরও হওয়া উচিত বলে জানাচ্ছেন ওই চিকিৎসক। তিনি বলছেন, “এই ধরনের ক্যানসার ধরা পড়লে তা সারাতে ৭ থেকে ২১ দিন সময় লাগে। মানুষের ক্ষেত্রে যে কেমো দিয়ে চিকিৎসা করা হয়, এক্ষেত্রেও তার মাধ্যমেই চিকিৎসা হয়ে থাকে। আর তাতেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে সেই কুকুর।” পুরকর্তাদের যদিও খেদ, আরও বেশি সংখ্যায় কর্মী নিয়োগ করতে পারলে অন্তত এভাবে ক্যানসারের যন্ত্রণার হাত থেকে দ্রুত রেহাই মিলত কুকুরগুলির।
এর মধ্যেই অভিযোগ, পথকুকুরগুলির নির্বীজকরণের পর তাদের ক্ষতে ঠিকমতো সেলাই পড়ছে না। যার জেরে এলাকায় ছেড়ে দিয়ে যাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সেই সেলাই খুলে গিয়ে সংক্রামিত হয়ে যাচ্ছে ওই এলাকা। পুরসভার স্বাস্থ্য দপ্তরের মেয়র পারিষদ গোপা পাণ্ডে যদিও এই অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছেন। জানাচ্ছেন, “পশু চিকিৎসালয়ে শয্যা ভাড়া নিয়ে যথেষ্ট যত্নে পথকুকুরদের চিকিৎসা চলে। একেবারে মউ সাক্ষর করে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ২০১৭ সালে। হাসপাতালকে তার খরচও দেওয়া হয়। সেখানে যাতে কোনও ফাঁকি না থাকে, তার জন্য কুকুরগুলির নির্বীজকরণের পর সেগুলিকে অন্তত এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এমন ঘটনা সম্ভবই নয়।” সেক্ষেত্রে বেসরকারি কিছু সংস্থার দিকে আঙুল তুলেছেন পুরকর্তারা। মুনাফার লোভে তারা কোনওরকম জ্ঞান ছাড়াই এই কাজ করছে বলে অভিযোগ। তবু অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন গোপাদেবী।
The post ক্যানসারে ছটফট করছে পথ কুকুর, চিন্তায় পুরসভা appeared first on Sangbad Pratidin.