রিন্টু ব্রহ্ম: আবহাওয়ার তারতম্যের সঙ্গে সঙ্গে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে গত কয়েক বছর ধরে পাট চাষে ক্ষতির মুখে পড়ছেন বাংলার কৃষক কূল। তাই পাটের বিকল্প হিসাবে আখ চাষকে বেছে নিচ্ছেন তাঁরা। আর পূর্বস্থলীর বেলেরহাটের কৃষকরা এ ব্যাপারে পথ দেখাচ্ছেন। প্রায় একই সময়ে আখ চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন তাঁরা। জলের প্রয়োজনীয়তা কম হওয়ায় পাট চাষ থেকে আখের দিকে ঝুঁকেছেন বেলেরহাটের কৃষকরা।
[জবা ফুল চাষ করেও হতে পারে প্রচুর লাভ, পদ্ধতি জানা আছে?]
পূর্ব বধর্মানের পূর্বস্থলীর বিস্তীর্ণ এলাকায় পাট চাষ হয়। তবে মূলত বেলেরহাট অঞ্চলে গত কয়েক বছর ধরে প্রচুর পরিমাণে আখের চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে উখড়া, দাসপাড়া, টিকনিমাঠ এলাকাতে পাটের জমিতে আখ চাষ শুরু করে দিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। এর মধ্যে অধিকাংশ কৃষকেরই বক্তব্য, পাটের মতো জল কম লাগায় আখ চাষে তাঁদের ক্ষতির ঝুঁকি কম। উখড়া এলাকার প্রবীণ কৃষক কার্তিক মণ্ডল জানান, পাট চাষে গাছের বৃদ্ধি ও পাট পচানোর জন্য প্রচুর জলের প্রয়োজন হয়। তাই বৃষ্টির কম হলে পাট চাষ বা পাট পচানো কোনওটাই ভালভাবে করা যায় না। তার উপর বর্তমানে পাট চাষের পর ভেজানোর জন্য পরিস্কার জল না পাওয়ায় ভাল আঁশও মিলছে না। যার জেরে পাটের দাম হু হু করে নামছে। তাই দামও কম পাচ্ছিলেন তাঁরা। এজন্যই তিনি গত তিন বছর ধরে দু’বিঘা জমিতে আখ চাষ শুরু করেছেন। কার্তিকবাবু আরও জানান, আখ চাষের জন্য সব মিলিয়ে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে চার থেকে পাঁচ মাস পরই উন্নত মানের আখ উৎপাদন হচ্ছে। এক-একবারে সেই উৎপাদিত আখ চাষের মাঠ থেকেই পাইকারি দরে বিক্রি করে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যাচ্ছে। চৈত্রের শেষে আখ লাগিয়ে আশ্বিনের শেষেই সম্পূর্ণ ফসল পাওয়া যায়। পাশাপাশি আখ গাছে রোগ বা পোকার উপদ্রব কম হওয়ায় ক্ষতির সম্ভাবনাও অনেক কম বলে জানাচ্ছেন ওই গ্রামেরই কয়েকজন সম্পন্ন কৃষক। বর্তমানে বেলেরহাটে সাদা ও লাল দু’ধরনের আখেরই চাষ করা হচ্ছে।
[মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের চাষেও লাভের মুখ দেখা সম্ভব]
[কম খরচে বেশি লাভে আজও তুলসীর তুলনা মেলা ভার]
মাটি: নিচু জমিতে এই চাষ করা চলবে না। উঁচু জমি প্রয়োজন। উঁচু জমি না পাওয়া গেলে মাঝারি উচ্চতার জমি। কারণ, নিচু জমিতে গাছ বড় হলে গাছ ঝুঁকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাকি যে কোনও রকম উঁচু জমিতে আখ চাষ করা সম্ভব। জমি খুব বেশি উর্বর না হলে আগে জমিতে সার প্রয়োগ করে সেই জমিতে আখ গাছ লাগানো যেতে পারে। তবে ধূসর অর্থাৎ একেবারে অনুর্বর জমিতে আখ চাষ করলে উই পোকার আক্রমণ ঘটতে পারে।
সার: চাষ শুরু করার আগে জমিতে ভাল করে জৈব সার প্রয়োগ করা উচিত। বর্তমানে জৈব সার প্রয়োগে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। গাছ একটু বড় হলে সামান্য যেকোনও রকম রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া রাসায়নিক সার ব্যবহার না করাই ভাল। আখের চারা লাগানোর আগে জমিটি ভাল করে চষে নিতে হবে। জমিতে ১০ : ২৬ : ২৬-এর সঙ্গে ইউরিয়া জমিতে ছড়িয়ে দিলেই ভাল ফসল হাতে পাবেন কৃষকরা। একবার চারা লাগালে তিন বছর পর্যন্ত আখের গোড়া থেকে চারা পাওয়া যাবে। যা পাটে সম্ভব নয়।
[বেশি লাভের মুখ দেখতে হলে, বর্ষার মরশুমেই শুরু করুন আমের চাষ]
[সিডার ও প্যাডি ট্রান্সপ্ল্যানটারে চাষ করলে ফলন বাড়বে প্রায় ২০%]
কীটনাশক: আখ গাছে কীটের উপদ্রব খুব কমই হয়। তবে মাঝে মধ্যে মাজরা পোকার উপদ্রব দেখা দিতে পারে। এই মাজরা পোকার আক্রমণ রুখতে খুব প্রয়োজন হলে দানা প্রয়োগ করা যেতে পারে।
ফসল তোলার সময় : গাছ লাগানোর সময় থেকে ন’মাসের পর যেকোনও সময় ফসল তোলা যায়। তবে গাছের বয়স ১০ মাস থেকে এক বছর হলে খুব ভালো পরিমাণ রস পাওয়া যায়। আর এই রস থেকে ভাল মানের চিনি উৎপাদনও সম্ভব।
The post পাটের বিকল্প হিসাবে আখ চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা appeared first on Sangbad Pratidin.