সুনিপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: একটা অজ পাড়া গাঁয়ের প্রাথমিক স্কুলের ক্লাসরুমে চলছে ডিজিটাল স্মার্ট ক্লাস (Digital Smart Class)! কীরকম? এলইডি স্ক্রিনে ফুটে উঠছে কৌতূহলী পড়ুয়াদের জানার বিষয়গুলি। থ্রিডি মোশনে বাঘের ছবি আর তার সঙ্গে বাঘের ডাক। পাখির কিচির মিচির। মানব দেহের অভ্যন্তরীণ নানা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের নানা বিষয় ডিজিটাল মাধ্যমে ফুটে উঠছে পড়ুয়াদের চোখের সামনে রঙিন স্ক্রিনে।
এক শিক্ষক সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমকে করে তুলেছেন ডিজিটাল স্মার্ট ক্লাস। উপজাতি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধ্যুষিত ওড়িশা ঘেঁষা নয়াগ্রাম ব্লকের গড় খিলাড় গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সনাতন মাহাতো। নিজের পকেটের টাকা খরচ করেই স্কুলের পড়ুয়াদের ডিজিটাল মাধ্যমে পাঠ দিচ্ছেন। দু’বছর পর স্কুল খুলেছে। এই সময়টায় পড়ুয়ারা লেখাপড়া থেকে অনেকটা সরে গিয়েছিল। কিন্তু সনাতনবাবুর ডিজিটাল ক্লাস চালু হতেই পড়ুয়াদের আগ্রহ ও উপস্থিতির হার বেড়েছে। সনাতনবাবু জানিয়েছেন, তাঁর বরাবরই ডিজিটাল এডুকেশনে আগ্রহ।
[আরও পড়ুন: বাড়ি ফাঁকা থাকার সুযোগে সাড়ে চার বছরের শিশুকে ধর্ষণ প্রতিবেশী নাবালকের!]
করোনার প্রকোপে দু’বছর বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। সেই সময় শিক্ষকদের বহু কটুক্তির শিকার হতে হয়েছে। সেই সময় সনাতনবাবু নিজের পলট্রি ফার্মে কারও সাহায্য ছাড়াই নিজে যাবতীয় কাজ করতেন। সেখানকার আয় জমিয়েছিলেন বিদ্যালয়ের জন্য। স্কুল খুলতেই তিনি ৫৬ হাজার টাকা দিয়ে একটি অত্যাধুনিক এলইডি টিভি প্যানেল এবং ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি বিশেষ সফটওয়্যার টিভির উপর বসান। বিদ্যালয়ের কমপোজিট ফান্ড থেকে কেনেন একটি ল্যাপটপ। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে দেন ক্লাস।
এই স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট পড়ুয়া ১৫৮ জন। শিক্ষক তিনজন। প্রায় প্রতিদিন প্রতিটি ক্লাসের পড়ুয়াদের এক ঘণ্টা করে ডিজিটাল মাধ্যমে ক্লাস করান। পশু,পাখি চেনানো থেকে অঙ্ক, বিজ্ঞান, সবই শেখাচ্ছেন। সনাতনবাবু বলেন, “মহামারী আবহে মানুষের শিক্ষকদের প্রতি অবজ্ঞা দেখে মন খারপ হত। তখনই ঠিক করি স্কুলের ছেলে মেয়েদের জন্য কিছু করব। আমি বরাবরই ডিজিটাল মাধ্যমে খেলাপড়ার বিষয়ে আগ্রহী। পড়ুয়াদের মধ্যে খুবই উৎসাহ,আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।”