সম্যক খান, মেদিনীপুর: চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ। অবস্থান বিক্ষোভে বসে পড়লেন খোদ দলীয় কাউন্সিলরদের একাংশ। বুধবার নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী রইল মেদিনীপুর পুরসভা।
পুরপ্রধান সৌমেন খানের বিরুদ্ধে বিমাতৃসুলভ আচরণ-সহ একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে পুরসভা ভবনেই অবস্থানে বসে পড়েন তৃণমূলের ১০ কাউন্সিলর। মাঝে একবার পুরপ্রধান তাঁদের কাছে গিয়ে অবস্থান তোলার অনুরোধ জানালেও বিক্ষুব্ধরা তা শোনেননি। উলটে পুরপ্রধানের সামনেই তাঁর পদত্যাগের দাবি তুলে স্লোগান দিতে থাকেন। শেষমেশ অবশ্য রাজ্য তৃণমূল সম্পাদক দলের নির্দেশে পুরসভায় গিয়ে অবস্থানে বসা কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলেন। বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে থাকা বিশ্বনাথ পাণ্ডবের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিও। বিশ্বনাথবাবু জানিয়েছেন, “রাজ্য সভাপতির সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি আগামী ২ তারিখ আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। দলের রাজ্য নেতৃত্বের অনুরোধে আমরা অবস্থান তুলে নিচ্ছি।”
[আরও পড়ুন: চেন্নাইয়ের আইওসি প্লান্টে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ, মৃত ১]
বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, কাউন্সিলরদের সঙ্গে বা বোর্ড মিটিংয়ে কোনও আলোচনা না করেই একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছেন পুরপ্রধান। কোন খাতে কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে তা জানানো হচ্ছে না। পুরসভায় ওয়ার্ডভিত্তিক জনসংখ্যার ভিত্তিতে যে প্রকল্পের অর্থবন্টন হত তাও উঠে গিয়েছে বলে দাবি তাঁদের। আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রেও নানা সমস্যার সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। পুরপ্রধান বিমাতৃসুলভ আচরণ করছেন তাদের সঙ্গে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও অন্য এক ইস্যুতে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা দেখিয়ে পুরসভার গেটের সামনেই অবস্থান বিক্ষোভ করেছিলেন এই দশ কাউন্সিলর। সেই দিনটা ছিল গতবছরের ১৯ ডিসেম্বর। একবছর পর এবার অবস্থান বিক্ষোভে বসলেন পুরসভার অন্দরেই।
উল্লেখ্য মেদিনীপুর পুরসভায় তৃণমূল দলের সমান্তরাল সংগঠন চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। একদিকে আছেন বিধায়ক জুন মালিয়া ও পুরপ্রধান সৌমেন খান তো অপরদিকে আছেন দলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা ও শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডব। মেদিনীপুর পুরসভায় মোট ২৫টি আসনের মধ্যে ২০জন কাউন্সিলর তৃণমূলের। অভিযোগ, গোষ্ঠী রাজনীতির শিকার হয়ে বিশ্বনাথ পাণ্ডব প্রবল দাবিদার থেকেও পুরপ্রধান হতে পারেননি। তাঁর গোষ্ঠীর কাউন্সিলররাও পুরসভায় কোনও পদ পাননি। পুরক্ষমতার বৃত্তের বাইরেই থেকে গিয়েছেন। সেই তালিকায় নাম আছে কয়েকজন হেভিওয়েট থেকে শুরু করে মৌসুমী হাজরারও। যিনি মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরার সহধর্মিনী। একপক্ষ অন্য পক্ষের কর্মসূচি এড়িয়ে আলাদাভাবে দলের কর্মসূচি পালন করে চলেছেন প্রথম দিন থেকেই। গোষ্ঠীকোন্দল চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। তারই প্রতিফলন ঘটেছে এদিন।
[আরও পড়ুন: ‘দেশবাসীকে আঘাত করে এমন ভুল যেন না হয়’, কাশ্মীরে দাঁড়িয়ে সেনাকে বার্তা রাজনাথের]
দলের রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোৎ ঘোষ বলেছেন, রাজ্য সভাপতির নির্দেশমতো এদিন তিনি পুরসভায় গিয়ে অবস্থানরত কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। তাঁদের কথা শুনেছেন। তাদের সমস্যাগুলি দলকে লিখিত আকারে জমা দেওয়ার অনুরোধও করেছেন। পরবর্তীকালে রাজ্য সভাপতির সঙ্গেও বিশ্বনাথবাবুর কথা হয়েছে। খুব শীঘ্রই দলের অভ্যন্তরীণ এই সমস্যা মিটে যাবে বলে মনে করেন তিনি। যদিও অভিযোগ প্রসঙ্গে পুরপ্রধান সৌমেন খান বলেছেন, তিনি সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেন। দল নির্দেশেই তিনি পুরপ্রধান হয়েছেন। দল নির্দেশ দিলে তিনি পদত্যাগ করে দেবেন বলেও ঘোষণা করেছেন।