সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ (Ramnath Kovind) খানিকটা ঘাবড়েই গিয়েছিলেন, যখন কর্ণাটকের যোগাম্মা লোকনৃত্য শিল্পী মাতা বি মানজাম্মা (Matha B Manjamma Jogati) তাঁর নিজস্ব কায়দায় অভ্যর্থনা জানালেন রাষ্ট্রপতিকে। আসলে একদিনে দুই ভারতবর্ষের মুখোমুখি হয়েছিল রাষ্ট্রপতি ভবন। একদিকে বলিউডের কতিপয় নক্ষত্র, অন্যদিকে কঠিন লড়াকু জীবনের প্রতিনিধি। নেপথ্যে পদ্ম পুরস্কার।
এবারের পদ্ম সম্মান প্রাপক ১১৯ জন। এর মধ্যে যেমন রয়েছেন ঝলমলে ভারতের প্রতিনিধি কঙ্গনা রানাউত, একতা কাপুর, করণ জোহরের মতো তারকারা। তেমনই রয়েছেন ‘বনের বিশ্বকোষ’ নামে পরিচিত কর্ণাটকের এক সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা তুলসি গৌড়াও। মঙ্গলবার খালি পায়ে পদ্ম পুরস্কার নেন তুলসি দেবী। খানিক অন্য ভাবে রাষ্ট্রপতি ভবনের বিশিষ্ট অতিথিদের নজর কাড়লেন কর্ণাটকের যোগাম্মা লোকশিল্পী মাতা বি মানজাম্মা যোগাতিও।
এমনিতেই মাতা বি মানজাম্মার পদ্মপ্রাপ্তি উল্লেখযোগ্য। কারণ তিনি ট্রান্সজেন্ডার। সমাজের চোখে রূপান্তরকামী। তাঁর দীর্ঘ লড়াইয়ের জীবন হতে পারে বহু মানুষের অনুপ্রেরণা। ট্রান্সজেন্ডার হওয়ায় পরিবার তাঁকে ঘরে রাখেনি। পরিস্থিতির চাপে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন মানজাম্মা। পরে সুস্থ হলেও জীবন ধারণের জন্য ভিক্ষে করতে বাধ্য হন। পথে পথে কাটে জীবন। এমন সময় আরও মারাত্বক ঘটনা ঘটে যায় কিংবদন্তি শিল্পীর জীবনে। গণধর্ষণের শিকার হন তিনি। এমত পরিস্থিতিতে ফের আত্মহত্যা করবেন বলেই ঠিক করেন। কিন্তু শিল্প বাঁচিয়ে দেয় শিল্পীকে। যোগাপ্পা শিল্পী বাসাপ্পার একটি নৃত্যানুষ্ঠান দেখার পর জীবনের মোড় ঘুরে যায় মানজাম্মার। বাসাপ্পার কাছেই তাঁর লোকনৃত্য শেখা। পরবর্তীকালে এই মানুষটাই কর্ণাটকের ঐতিহ্যবাহী জনপদ অ্যাকাডেমির প্রথম ট্রান্সজেন্ডার প্রেসিডেন্ট হন।
[আরও পড়ুন: ‘আসল’ ভারতবর্ষের প্রতিনিধি! পদ্মশ্রী নিতে খালি পায়েই মঞ্চে আদিবাসী বৃদ্ধা]
এই কিংবদন্তি লোকনৃত্য শিল্পীই আজ পদ্ম সম্মান গ্রহণ করলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাত থেকে। শুধু তাই নয়, পদ্ম সম্মান গ্রহণের আগে রাষ্ট্রপতিকে নিজস্ব ভঙ্গিতে অভ্যর্থনা জানালেন। যাতে প্রথমটায় খানিক থতমত খেলেন কোবিন্দ। তবে কিনা মানজাম্মার এই অভ্যর্থনার মধ্যে আদৌ অস্বাভাবিকতা নেই। যেহেতু বিরাট ভারতের হাজারও সংস্কৃতির প্রতিনিধি অসংখ্য গুণি মানুষ। তাঁদের মধ্যে থেকে এবার ১১৯ জনকে পদ্ম সম্মান দেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি ভবনে ছিল ঝলমলে ভারত, সেই সঙ্গে ছিল প্রান্তিক আরেক ভারতও। এই প্রান্তিক, অপর সংস্কৃতির ভারতের প্রতিনিধি কর্ণাটকের মাতা বি মানজাম্মা, সবুজ প্রকৃতির বন্ধু আদিবাসী বৃদ্ধা তুলসি গৌড়া।