shono
Advertisement

জরি-চুমকির গয়নায় সেজেছে মা দুগ্গা, দুয়োরানি আজ ডাকের সাজ

কদর নেই, তাই পুজোর মুখেও বিপন্ন কোচবিহারের শোলাশিল্পীরা। The post জরি-চুমকির গয়নায় সেজেছে মা দুগ্গা, দুয়োরানি আজ ডাকের সাজ appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 04:59 PM Sep 30, 2018Updated: 04:59 PM Sep 30, 2018

বিক্রম রায়, কোচবিহার: কাশফুলে দোলা দিয়ে মা আসছেন। আর মাত্র কয়েকটি দিন, ঢাকে কাঠি পড়তেই মনটা উড়ুউড়ু। তবে শহরের নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘকে তেমন ভেসে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে না। কর্পোরেট আবহাওয়ার বাইরেও পুজোর আগমনী ভালই অনুভূত হচ্ছে। ছুটির সন্ধ্যায় একটু একা হয়ে ফেলে আসা পুজোর দিনগুলি মনে করার চেষ্টা করুন। সেই যে স্কুল থেকে ফিরছেন। মহালয়া আসছে, আর দুএক দিন তারপরেই টানা একমাসের লম্বা ছুটি। যেমন তেমন কোনও ছুটি নয়, পুজোর ছুটি। মা দুগ্গা আসছেন। ডাকের সাজের প্রতিমা, লালপেড়ে সাদা শাড়ির মা দুগ্গা। রায়বাড়ির কাকুরা কাঁধে করে মাকে নিয়ে আসছেন। কাশবনের মাঝ থেকে যে রাস্তা রেলপাড়ের দিকে চলে গিয়েছে। সেই পথ ধরেই মা আসছেন। দু্গ্গা মা দূর গাঁয় ফিরছেন পাঁচটি দিনের জন্য। কানে ভেসে আসছে সুপ্রীতি ঘোষের ‘বাজল তোমার আলোর বেণু’। মন ভাল করা সেই সকালের স্মৃতি রোমন্থন করতে করতেই ফের কাজে ফেরা। ডাকের সাজের মাকে আজ আর খুব বেশি দেখা যায় না

Advertisement

পুজোর ছুটিতে আপনিও তো বাড়িতেই যাবেন। শপিংমলের দামি জামাকাপড়ে ভরতি থাকবে আপনার ব্যাগ। সেই যে টিউশনি করে জমানো টাকায় মাকে কিনে দেওয়া প্রথম তাঁতের শাড়ির গন্ধ। নাহঃ, ব্র্যান্ডেড পোশাকের ব্যাগে কিন্তু সেই গন্ধ কোত্থাও নেই। পুজো আসে চলেও যায় শহুরে মা দুগ্গা থিমের আড়ালে যেন ঢাকা পড়ে যান। তাইতো ডাকের সাজের সাবেকি মাকে আজ আর খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না। কয়েকটি নামী পুজোতে সনাতনী সাজ বজায় থাকলেও বেশিরভাগই থিমের চমক ও সংশ্লিষ্ট শিল্পীর স্বকীয়তায় মা মূর্ত হন। ডাকের সাজ যেদিন থেকে ব্রাত্য হয়েছে সেদিন থেকে শোলাশিল্পীদেরও কদর কমেছে। বছর ঘুরে ফের পুজো এলেও শোলা শিল্পীদের মুখে আজ আর তেমন হাসি ফোটে না। তাঁদের নাওয়াখাওয়া ফেলে কাজ করার ধুমও আজ অতীত।

[মহাষষ্ঠীতে বেলতলায় আগমনী গানের মধ্যে দিয়ে মা আসেন এই বাড়িতে]

একটা সময় দুর্গাপুজো মানেই ছিল ডাকের সাজ। আশ্বিন মাস পড়ার অনেক আগে থেকেই বাড়ি বাড়ি শোলার কাজ চলত জোরকদমে। শিল্পী নিজে একা নন, স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের শোলার অলঙ্কার তৈরিতে হাত পাকানোর কাজ করিয়ে রেখেছেন। যাতে পুজোর মরশুমে তাঁর সঙ্গে জোগাড় দিতে পারেন পরিবারের সদস্যরা। মা দুগ্গার সাজ তো আর কম কিছু নয়। তারজন্য কত গয়না গড়তে হবে। সঙ্গে রয়েছে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ। একসঙ্গে অনেক গয়না। শোলাশিল্পীদের পাড়ায় বনেদিবাড়ির বাবুদের আনাগোনা লেগেই থাকত। বারোয়ারি পুজোর রমরমা শুরু হলে শোলাশিল্পীদের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন পুজোকর্তার ভিন্ন ভিন্ন খেয়াল। দাবি মেনে সেসব কাজ সময়ে তুলে দিতে পেরে একসময় খুশিই থাকতেন রবীন মালাকাররা। কিন্তু সেসব দিন গিয়েছে, থিমের জোয়ারে বারোয়ারি পুজোতে আর তাঁদের ডাক পড়ে না। বনেদি বাড়ির পুজো হলেও তার দাপট কমেছে। নামী পরিবারগুলি নিজেদের মধ্যে আলাদা হয়ে গিয়েছেন। বেশিরভাগ বনেদি বাড়ির পুজোয় এখন আর আহামরি আয়োজন হয় না। তাই শোলাশিল্পীদের কেউ ডাকেন না। বচ্ছরকার পুজোয় ভালমতো উপার্জন করে সারা বছর নিশ্চিন্ত থাকার দিন ফুরিয়েছে। সেকারণেই পরবর্তী প্রজন্মকে পারিবারিক কাজে নিয়ে আসতে চান না অনেকেই।

[এই পুজোতে ‘মধু-বিধু’রাও পরবে নতুন জামা]

আজকাল ডাকের সাজের প্রতিমা খুব একটা হয় না। শোলার গয়নার জায়গা পূরণ করতে বাজারে এসেছে সস্তার জরি, চুমকি, অভ্রের অলঙ্কার। তাই পুজো এলেও বেশিরভাগ শোলাশিল্পীই আজ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে উৎসবের মুখেও সংসার চালানোর খরচের টাকা বাড়ন্ত। কীভাবে পুজোর দিনগুলি কাটবে তানিয়ে দুশ্চিন্তা গ্রাস করেছে দিনহাটা মহকুমার ভেটাগুড়ির শোলাশিল্পীদের মধ্যে। ওই গ্রামে কয়েক প্রজন্ম ধরে শোলার বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করে আসছেন ধীরেন্দ্রনাথ মালাকার। তিনি বলেন, ‘আগে ডাকের সাজে প্রতিমা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শোলার তৈরি অলঙ্কারের কদর ছিল। ধীরে ধীরে তার চাহিদা কমে আসছে। এটা দিয়েই একসময় আমাদের সংসার ভালমতো চলত। তবে এখন সেদিন নেই। তাই সংসার কীভাবে চলবে, তা নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছি।’ একই কথা শোনালেন শোলাশিল্পী গজেন্দ্রচন্দ্র মালাকারও। তাঁর কথায়, একসময়ে শোলার অলঙ্কারের এত বেশি অর্ডার আসত যে, স্নান খাওয়ার সময় মিলত না। পরিবারের মহিলারাও পুজোর সময়ে দিন-রাত এক করে মা দুগ্গার গয়না তৈরির কাজে হাত লাগাতেন। এখন পরিস্থিতি বদলেছে। জরি, চুমকি, অভ্রের অলঙ্কার দিয়ে প্রতিমা সাজানো হয়। গয়নাতে বৈচিত্র্য আসায় মা দু্গ্গার সাজের চমক লেগেছে। তাই তো পুজো থেকে বহুদূরেরে বাসিন্দা হয়ে উঠছেন শোলাশিল্পীরা।

[দেওয়ান রামলোচনের বাড়ির পুজোতে সস্ত্রীক এসেছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস]

The post জরি-চুমকির গয়নায় সেজেছে মা দুগ্গা, দুয়োরানি আজ ডাকের সাজ appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement