এবছর করোনা আবহেই পুজো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাবগুলিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি৷ কলকাতার বাছাই করা কিছু সেরা পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন নাকতলা উদয়ন সংঘের পুজো প্রস্তুতি৷
সুলয়া সিংহ: কাশফুলের দোলায় শরৎকে স্বাগত জানাতে কার্পণ্য করেনি প্রকৃতি। নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘে ভেসে এসেছে আগমনির সুরও। কিন্তু এসবের মাঝেও কোথায় যেন সেই মেঘের কোলেও যন্ত্রণা-হাহাকার। অতিমারীতে আসা উৎসবেও প্রকট বিষাদের সুর। কবীর সুমন তাই কলম ধরেছেন, “বেকার মেঘেরা চলল দূর, শরৎ আকাশে ব্যথার সুর।” আর অন্তরের অন্তঃস্থলের সেই বিষাদের মধ্যেও উৎসবের আবেগ, আগামীতে ঘুরে দাঁড়ানোর আশাকেই নিজের শৈল্পিক সত্ত্বায় সাজিয়ে তুলেছেন শিল্পী ভবতোষ সুতার। পুজোর মঞ্চে এই দুই মহৎ শিল্পীর সৃষ্টি ফুটে উঠছে নাকতলা উদয়ন সংঘে।
মহামারীর জেরে লকডাউন। আর দেশজুড়ে আচমকা লকডাউনের জেরে বিপাকে পড়েছিলেন বহু পরিযায়ী। কেউ বাড়ি ফিরতে হিমশিম খেয়েছেন, তো কেউ দু’বেলা-দু’মুঠো অন্নসংস্থান করতে। এই লকডাউনেই স্পষ্ট হয়েছে, পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে কত মানুষকে ভিনরাজ্যে পড়ে থাকতে হয় দিনের পর দিন। এই কঠিন পরিস্থিতিতে বন্ধ কারখানার শ্রমিকের দীর্ঘশ্বাসে ব্যথা। ব্যথা রেললাইনের বুক চিরে জনতার ক্লান্ত পায়ে পায়ে। দুর্গাপুজোয় যেমন মেঘেরা এসে হাজির হয় অন্য কোনও আকাশ থেকে, ঠিক সেভাবেই যেন পরিযায়ীরাও নতুন স্বপ্ন বুকে ফিরে এসেছে পরিবারের কাছে। আর সেই ভাবনা থেকেই মণ্ডপজুড়ে মেঘেদের আনাগোনা ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী।
[আরও পড়ুন: শত্রু সংহার ও শান্তি স্থাপন, সেনার শৌর্যকে সম্মান জানিয়ে দেবী আরাধনা টালা বারোয়ারিতে]
এবারের পুজোয় মণ্ডপসজ্জায় পরিবেশবান্ধব, সস্তা উপকরণেই ভরসা রেখেছেন শিল্পীরা। ভবতোষ সুতার যেমন শুধু বাঁশকে কাজে লাগিয়েই নাকতলার বিরাট মাঠটিকে অন্যরূপ দিয়েছেন। আশেপাশের বহুতলেও ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর ভাবনার মেঘরাশি। হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল সভ্যতার গতি। তবে নিউ নর্মালে জীবনে আবার লেগেছে নতুন তরঙ্গের ছোঁয়া। তাই তো বদ্ধ দ্বার খুলে বেরিয়ে এসে নতুন জীবনকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত হচ্ছেন সকলে। মণ্ডপের পরতে পরতে সেই আশার তরঙ্গই ছড়িয়ে দিচ্ছেন শিল্পী।
ভিনপ্রদেশ থেকেই আবার বাপের বাড়ি এসেছেন মেয়ে। তাঁর হাতে মঙ্গল শঙ্খ। সেই শঙ্খধ্বনিই যেন শুভবার্তার আহ্বান জানাবে। দিশাহীন আসুরিক উন্মত্ততায় পড়বে লাগাম। ভবতোষ সুতারের কথায়, “মানুষ ভীষণ অসহায় হয়ে পড়লে সকলকে আহ্বান জানাতে শঙ্খই বাজায়। তাই এখানে তার হাতে শঙ্খ। আর কোথাও গিয়ে সেই জীবনের তরঙ্গের সঙ্গেও মিলে গিয়েছে এই ধ্বনি।” আয়োজনের আড়ম্বরে নয়, প্রয়োজনের দায়বদ্ধতাতেই নিউ নর্মালে তরঙ্গায়িত জীবন ধারার আশ্চর্য এক রূপকল্প তুলে ধরছেন শিল্পী।
