সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক:আজ প্রপোজ ডে। দুয়ারে বসন্ত। মনে এখনই পলাশের মাস। আর কে না জানে, এ সময় চোখে চোখ পড়লেই সর্বনাশ। সুতরাং আজ কেবলই দৃশ্যের জন্ম হয়। ওই যে কফিশপের সামনে তৃণার জন্য দাঁড়িয়ে আছে যুবকটি। ওকে আপনি চেনেন। ওর গল্পই আপনাকে শোনাচ্ছে শাম্মী হুদা। পড়তে পড়তে দেখুন তো, আপনার সঙ্গেও কোনও মিল খুঁজে পান কিনা।
তৃণার জন্য অনেকক্ষণ বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি। একসঙ্গে হেঁটে দূরের ওই কফিশপটায় যাব। প্রপোজ ডে-তে বলেই দেব মনের কথাটা। কিন্তু মেয়েটার যে পাত্তাই নেই। সেইতো সেদিন প্রথম দেখা হল। দেখাই বা বলব কী করে! কী যে তখন থেকে বকে যাচ্ছি! মেয়েটার নামই তো অন্য। জেনেশুনে মনের মতো নাম বসিয়ে তাকে ডেকে চলেছি।
[সঙ্গীর ব্যবহারে কামনা না ভালবাসার প্রকাশ? পরখ করুন এই উপায়েই]
প্রথম যেদিন দেখা হয়েছিল, সেদিনও একপ্রকার অন্তরালেই ছিল তৃণা। ব্যাঙ্কে গিয়ে খেয়াল হয়েছিল শার্টের বুক পকেটে থাকা কলমটা কখন পড়ে গিয়েছে। ততক্ষণে লাইনের সামনে এসে পড়েছি। এখন লাইন থেকে বেরিয়ে গেলে আজ আর কোনও কাজই হবে না। ফের একদিন ব্যাঙ্কে আসতে হবে। বেশিক্ষণ ভাবতে হয়নি। ভিড়ের মধ্যে থেকেই চাঁপার কলির মতো আঙুল কলমটি বাড়িয়ে দিয়েছিল। কে যে সেই সহমর্মী বোঝার সময় পাইনি। কলমটা নিয়ে তাড়াতাড়ি ফর্ম ভরতে শুরু করি। কাজ মিটিয়ে কলম ফিরিয়ে দিতে গিয়ে দেখি কেউ অপেক্ষায় নেই।
চিন্তায় কলমের মালকিনের মুখটাই দেখা হয়নি। ভিড়ের মধ্যে থাকা চাঁপার কলির আঙুল তখন যে কীভাবে খুঁজে পাব তাই ভাবছিলাম। এরপরে চারমাস কেটে গিয়েছে। যখন ট্রেনের টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়েছি, কিম্বা খেয়া পারাপারের লাইনে। চাঁপার কলির মতো আঙুল চোখের সামনে ভেসে উঠলেও আঙুলের অধিকারিণীকে খুঁঝে পাইনি। ভিড়ের মধ্যে বারবার খুঁজে ফিরেছি।
[ব্যস্ততার মধ্যেই গ্রাস করছে বিষণ্ণতা? নিজেকে চনমনে রাখুন এই উপায়ে]
পরে ফের ফার্ন রোডর ব্যাংকটিতে যাওয়ার দরকার পড়েছিল। কাজ মিটে যাওয়ার পরও বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম। যদি দেখা হয়। নাহঃ সে আসেনি। এভাবে কি আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়। নিজের বোকামিতে নিজেই হেসে উঠি। তবে সেদিন থেকেই বুক পকেটে জায়গা নিয়েছে সেই কলম। দেখা হলেই দিয়ে দেব। গতকালই ভিড়বাসে বসার জায়গা পেয়ে গিয়েছিলাম। ত্রিবর্ণের মোড়ে জানলার বাইরে তাকাতেই চোখের সামনে সেই চাঁপার কলির আঙুল। নাহ, ভুল হয়নি, অনামিকায় উঁকি দিচ্ছে নীলার আঙটি। সিট ছেড়ে উঠতে যাব বাস ছেড়ে দিল।
আজ সময়মতোই পৌঁছে গিয়েছি সেই জায়গায়। এখনও আসেনি চাঁপার কলি থুড়ি তৃণা। আমার তৃণা। মনে মনে কবে যে তাকে আমার করে নিয়েছি, নিজেই বুঝতে পারিনি। আচ্ছা যদি সে অন্য কারওর হয় তাহলে কী হবে! তাতে আমার আর কী, কলমটা ফেরত দিয়ে দায়মুক্ত হব। বেলা গড়িয়ে গেলেও সে এল না। অফিসের দেরি হচ্ছে, তাই ফিরতে হল।
এভাবেও কেটেছে প্রায় দুমাস। এখন আর পাগলের মতো খুঁজি না। তবে রাস্তায় চলতে ফিরতে চোখ চলে যায় ললনাদের আঙুলে। গত শনিবার সেকেন্ডহাফে অফিস ছিল। হাতেও অনেকটা সময়। মন চাইছিল একবার বাসস্ট্যান্ডের ওই জায়গাতে যাই। কী করি ভাবতে ভাবতেই ঢুকে পড়েছিলাম অক্সফোর্ড বুকস্টোরে। সামনেই বন্ধুর বিয়ে, বইপাগল বন্ধু। তাই বইই কিনতে হবে। জেমস হেডলি চেজের একটা বই নিয়ে ঘাঁটছি। এমন সময় নিশার গলা। নাম ধরে চিৎকার করছে মেয়েটা। বয়স বাড়লেও স্বভাব বদলায়নি। হাত উঁচু করে থামতে বললাম।
কাছে পৌঁছে বকুনি দিতে গিয়েই থমকে গেলাম। থামিয়ে দিল নিশার কাঁধে রাখা চাঁপার কলির মতো আঙুল। খোলা চুলের ভারে মুখটা দেখতে পাচ্ছিলাম না। অন্যহাতে আটকে থাকা হ্যারাল্ড রবিন্স তখন উঁকি মারছে। শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল। মন চাইল উড়ে যাই। ফের বকা দিল নিশা। ওর বন্ধুর দিকে ভ্যবলার মতো তাকিয়ে আছি বলে খোঁচা দিতেও ছাড়ল না। তারপর নিজেই আলাপ করিয়ে দিল নন্দিনীর সঙ্গে। নন্দিনী সেন, তৃণা নয়। পোশাকি আলাপ মিটলে নিশা প্রায় টেনে নিয়ে গেল লাগোয়া কফিশপে। অফিসের দেরি হচ্ছে বুঝতে পেরেও নিজেকে আটকাতে পারিনি।
গরম ব্রাউনিতে কামড় বসিয়ে চোখ গেল টেবিলের ওপাশে থাকা নন্দিনীর আঙুলে। নিশার ফোনে ভাবনার তাল কাটল। আমাদের একা রেখেই কফিশপের বাইরে গেল নিশা। একবার ইচ্ছে হল মনে করিয়ে দিই। কোনওরকম ঝুঁকি নিতে মন চাইল না। কলমটা পকেট থেকে টেবিলে নামিয়ে রাখলাম। নন্দিনী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতেই তাকাতেই ছমাস আগের ব্যাঙ্কের কথাটা পাড়লাম। এর মধ্যে নিশা এসে পড়ায় কথা আর এগোয়নি। তবে সেই ফাঁকেই ফোন নম্বরের আদানপ্রদান হয়েছিল।
তাই তো আজ বিকেলে অফিস থেকে সোজা যাব ওই বাসস্ট্যান্ডেই। অফিসের কিউবিকল লাগোয়া বড় ব্যালকনি। সেখান থেকে কলকাতা শহরের অনেকটাই দেখা যায়। মেঘলা দিনের একমাথা খোলা আকাশটা যেন আমায় তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। ঘড়ির কাঁটা পাঁচটা ছুঁতেই পৌঁছে গেলাম নির্ধারিত জায়গায়। নাহ, নন্দিনী এখনও পৌঁছয়নি। ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক সেদিক দেখতে দেখতেই চলে এল। বৃষ্টি আসতে পারে তাই বাসস্ট্যান্ডে না দাঁড়িয়ে কফিশপেই বসতে চাইল নন্দিনী। মনের আনন্দ গোপন রেখে পাশাপাশি হাঁটতে লাগলাম। বুক পকেটে কলমের সঙ্গে গোলাপের ঠোকাঠুকিতে তখন কাঁটার খোঁচা, আমায় বিদীর্ণ করে চলেছে। ভাবলাম প্রেমের প্রকাশে এমন কাঁটা খাওয়া সুলক্ষণই।
[ব্যস্ত জীবনে ব্রাত্য বার্ধক্য, এই বয়সে একা থাকাই কি গুরুজনদের নিয়তি?]
এর মধ্যেই বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। মাথা বাঁচাতে হাত ধরেই ছুটলাম কফিশপের দিকে। খেয়ালই ছিল না, আমরা সদ্য পরিচিত। যতক্ষণে মাথায় এল ততক্ষণে কফিশপের ভিতরে ঢুকে পড়েছি। প্রহরী ওয়েলকাম জানাচ্ছে। প্রোপোজ ডে উপলক্ষে সুন্দর সেজেছে কফিশপটা। ওয়েটার মেনুকার্ডের সঙ্গে কমপ্লিমেন্টারি হিসেবে দিয়ে গেল ছোট্টো উপহারের বাক্স। বুক পকেটে থাকা গোলাপ-কলম ততক্ষণে বন্ধুত্ব পাতিয়ে নিয়েছে। তাই নির্ভয়েই দুটিকে একসঙ্গে বের করলাম। হাত বাড়িয়ে নন্দিনীর দিকে তাকাতেই দেখি চোখের সামনে ধরা উপহারের বাক্সটি। ঢাকনা তুলতেই লালরঙা হার্টশেপ কেমন দুষ্টু বাচ্চার মত চোখ পাকিয়ে দেখছে। বিব্রত হতে গিয়ে হেসে ফেলি। নন্দিনীও হাসিতে যোগ দেয়। স্ফটিকের হার্টশেপে আলো পড়ে ঠিকরে যাচ্ছে নন্দিনীর মুখে। সেই হাসিতেই যেন প্রেম নিবেদন হয়ে গেল। পোশাকী প্রপোজ ছাড়াই। টেবিলে তখন মাখো মাখো প্রেমে আবদ্ধ গোলাপ ও কলম। রাত নামছে কলকাতা শহরে।
The post প্রপোজ ডে-র এই গল্প কি আপনার জীবনেও সত্যি? appeared first on Sangbad Pratidin.