সতর্ক করছেন বিশিষ্ট নেফ্রোলজিস্ট ডা. উপল সেনগুপ্ত। শুনলেন সোমা মজুমদার।
মেয়েদের যে কোনও বয়সেই ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা মূত্রনালিতে সংক্রমণ প্রচলিত সমস্যা হলেও গর্ভাবস্থায় তা অনেক বেশি মারাত্মক আকার নিতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে যার প্রভাব পড়ে মা এবং শিশু উভয়ের উপরেই। এমনকী চিকিৎসায় শুরু করতে বেশি দেরি হলে শিশুর জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত থাকতে পারে। প্রেগন্যান্সিতে রুটিন চেকঅাপে মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমেই ইউটিআই রোগ নির্ণয় সম্ভব।
গর্ভাবস্থায় মূত্রনালির সংক্রমণ
যে সব ক্ষেত্রে ইউটিআই-এর কোনও লক্ষণ বোঝা যায় না তাকে অ্যা-সিমটোমেটিক বলা হয়। আর যে ধরনের মূত্রনালীর ইনফেকশনে উপসর্গ থাকে সেগুলিকে সিমটোমেটিক বলা হয়। সিমটোমেটিক ইনফেকশন আবার দু’ধরনের হতে পারে। একটি হল সিসটাইটিস বা মূত্রথলির ইনফেকশন, যার লক্ষণ হল বারবার মূত্রের বেগ পাওয়া, মূত্রের জায়গায় জ্বালা ভাব, কখনও কখনও মূত্রের সঙ্গে রক্ত বেরনো। ঐর যদি এইসব লক্ষণের সঙ্গে জ্বর, কোমরে ব্যথা থাকে এবং বমি হয় তাহলে তাকে পাইলোনেফ্রাইটিস বলা হয়। এটি এক ধরনের কিডনির ইনফেকশন। সাধারণভাবে গর্ভাবস্থায় পাইলোনেফ্রাইটিস হয়। যদি সিসটাইসিসের চিকিৎসায় দেরি হয় তাহলে সেখান থেকে পাইলোনেফ্রাইটিস হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইউটিআই-এর কোনও লক্ষণ দেখা না গেলেও মূত্র পরীক্ষা করে ইনফেকশন ধরা পড়ে।
গর্ভাবস্থায় কেন বেশি হয়
গর্ভাবস্থায় শরীরে কিছু হরমোনের পরিবর্তন হয়। প্রোজেস্টেরন নামক একটি হরমোনের পরিমাণ এই সময় শরীরে বেড়ে যায় বলে ইউরেটর বা ব্লাডার রিল্যাক্সড হয়ে যায়। ফলে মূত্র বেশি জমে থাকে এবং ফ্লো কম হয়। দ্বিতীয়ত গভর্বতী মহিলাদের জরায়ু বড় হয়ে যাওয়ায় পিছন দিকে বেঁকে গিয়ে ব্লাডারে চাপ দেয় ফলে অনেকক্ষণ মূত্র বেরোতে পারে না। এছাড়া এই সময় মূত্র চেপে রাখার ক্ষমতা কমে যাওয়ায় যত্রতত্র মূত্র ত্যাগ করার ফলেও ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
[ বয়সকালে মাছ-মাংস ছাড়ুন, ডায়েটে রাখুন নিরামিষ আহার ]
চিকিৎসা
অ্যা-সিমটোমেটিক ইনফেকশন এবং সিসটাইসিস ইনফেকশনে বাড়িতে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা সম্ভব। কিন্তু পাইলোনেফ্রাইটিস হলে রোগীকে হাসপাতালে ভরতি করার প্রয়োজন পড়তে পারে এবং ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। পাইলোনেফ্রাইটিসে মা ও বাচ্চাকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়।
সতর্ক হোন
যাঁদের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রয়েছে, শারীরিক ওজন বেশি এবং যাদের আগেও ইনফেকশন হয়েছে তারা বেশি সতর্ক থাকবেন। পাইলোনেফ্রাইটিস হলে বাচ্চা এবং মায়ের উভয়েরই ক্ষতির হতে পারে। এমনকি সিসটাইসিস হলে প্রি ম্যাচিওর বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেকারণেই মা ও বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হয়। গর্ভাবস্থার রুটিন চেকআপের সময় অবশ্যই মূত্র পরীক্ষা করতে হবে। তাতে যদি একবার মূত্রনালীর ইনফেকশনের পজিটিভ ফল ধরা পড়ে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং বারে বারে মূত্র পরীক্ষা করিয়ে নিন।
প্রতিরোধ
- প্রাথমিক পর্যায়ে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন ধরা পড়াই এই রোগ প্রতিরোধের প্রধান সমাধান।
- গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ডাক্তারের চেক-আপে থাকা এবং মূত্রনালি সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হলেই ডাক্তারকে জানাতে হবে।
- প্রেগন্যান্সিতে জল বেশি করে খেতে হবে।
- কখনোই প্রস্রাব আটকে রাখবেন না।
পরামর্শ : ৯৮৩০৯২২৪৬৬
[ কলকাতায় কান্নার ক্লাস চাইছেন মনোবিদরা, কেন জানেন? ]
The post সংক্রমণ থেকে সচেতন থাকুন হবু মায়েরা, নাহলে প্রভাব পড়তে পারে শিশুর উপরও appeared first on Sangbad Pratidin.