বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন। বিয়ের অন্যতম একটি রীতি হল গাত্রহরিদ্রা বা গায়ে হলুদ। বিয়ের দিন সকালে হলুদ মেখে স্নান করেন বর-কনে। বরের গায়ে ছোঁয়ানো হলুদ দিয়ে আরম্ভ হয় কনের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। তবে গায়ে হলুদ নিছক প্রথা মাত্র নয়। যে কোনও প্রথার পিছনেই নির্দিষ্ট কিছু যুক্তিগত কারণ থাকে। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি।
গায়ে হলুদ প্রথার নেপথ্যে একাধিক তাৎপর্য। হলুদ এমন একটি মশলা যা প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ওষুধ হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে। কাঁচা হলুদ প্রাকৃতিক ভাবে জীবাণুনাশক। বিয়ে ছাড়াও এই গুণের কারণে অন্য ক্ষেত্রেও হলুদের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। ডিপ্রেশন প্রতিরোধের বৈশিষ্ট্য থাকার দরুন হলুদ ব্যবহারের চল রয়েছে। বিয়ের আগে নানা কারণে টেনশনে ভোগেন অনেকেই। আর তা থেকে মাথা ধরা বা গা-বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়। হলুদ মাথা যন্ত্রণা ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। স্বাভাবিক ভাবেই বিয়ের আসরে হলুদের কদর আলাদা।
হলুদের আর একটি গুণ হল, তা শরীরে তাপের ভারসাম্য বজায় রাখে ও শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। বর-কনে উভয়ের জন্যই বিয়েতে সাজগোজ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। ফলত হলুদ মেখে স্নান করলে, ত্বকও উজ্জ্বল দেখায়। তা ছাড়া হলুদ হল শুভ শক্তির প্রতীক। ভারতীয় সংস্কৃতিতে হলুদকে মঙ্গলদায়ক হিসাবে মান্য করা হয়। হলুদ আমাদের দেহ ও মনকে শুদ্ধ করে। তাই, নতুন জীবনে প্রবেশ করার আগে শরীরে হলুদের ছোঁয়া আবশ্যিক। অনেকেই বিশ্বাস করেন, হলুদের স্পর্শে বর-কনের উপর অশুভ শক্তির প্রভাব পড়ে না। এই কারণেই বর-কনেকে অনুষ্ঠানের পর বিয়ের মুহূর্ত পর্যন্ত বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়। প্রথা হিসাবে পালিত হলেও, হলুদের উপকারিতা কম নয়। গায়ে হলুদের আনন্দ-অনুষ্ঠানের নেপথ্যে থেকে যায় সেই উপকারী নিরাময়ের দিকগুলোও।
(প্রতিবেদনটি 'ছাঁদনাতলা' ফিচারের অংশ।)