বিবাহ পর্ব মিটলেই নবদম্পতিদের কাছেপিঠে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার রেওয়াজ। যদিও এর কোনও বাধ্যবাধকতা ছিল না। তবে ইদানীংকালে এই ঘুরতে যাওয়া যেন রীতিই হয়ে উঠেছে। নতুন জীবনের এই প্রথম ভ্রমণের নাম মধুচন্দ্রিমা। পরিভাষায় যাকে বলে ‘হানিমুন’। অনেকেই ভাবতে পারেন এই হানিমুনের সঙ্গে বিবাহকালীন কোনও বিশেষ রীতি পালনের যোগ রয়েছে। আবার অনেকের ধারণা এর সঙ্গে চাঁদ-ঘটিত কোনও ব্যাপার থাকতে পারে। তবে যতদূর জানা যায় আঠেরো শতক থেকেই এই হানিমুন তথা মধুচন্দ্রিমা শব্দটির প্রচলন। পশ্চিমি দেশগুলিতেই এই রীতি পালনের চল ছিল, যদিও ধীরে ধীরে তা ভারতীয় সংস্কৃতিরও অঙ্গ হয়ে উঠেছে।
আশ্চর্যের বিষয় মধুচন্দ্রিমার অথবা হানিমুনের সঙ্গে চাঁদের কোনও সরাসরি যোগ নেই বললেই চলে। এর সঙ্গে প্রেম-ভালোবাসার কোনও বিশেষ অর্থবহ কারণও পাওয়া যায় না। তাহলে কোথা থেকে এমন একটি রীতি এল? ইতিহাস বলে হানিমুন শব্দের উৎস-দেশ হল ব্যাবিলন। হুন রাজা এটিলার সময় একটি বিশেষ রীতি প্রচলিত ছিল। তা হল বিয়ের পরে এক মাস ধরে প্রতিদিন একপাত্র করে মধু দিয়ে তৈরি মদ খেতে হতো নবদম্পতিকে। তখনকার দিনে জনসমাজে এই বিশ্বাস ছিল যে এতে নতুন সম্পর্ক সুখের ও মধুর হবে। সেই প্রথা থেকেই হানিমুনের উৎপত্তি হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। আরেকটি বিষয় এখানে লক্ষ্য করার যে, ব্যাবিলনের প্রচলিত ক্যালেন্ডার ছিল চান্দ্র। অনেকের মতে ‘মুন’ শব্দটি সে কারণেই ব্যবহৃত হয়েছে।
এ ছাড়া আর একটি ব্যাখ্যা হতে পারে। ‘মুন’ শব্দটি আসলে ঋতুচক্রকে সূচিত করে। অবশ্যই এই বিষয়টির সঙ্গে যৌনতার যোগ রয়েছে। তাই সদ্য বিবাহের পরেই যে সময়টি দম্পতিরা একান্তে কাটান, সেটি হানিমুন আখ্যা দেওয়া হয়। অনেকের মতে, বিয়ের পরে যে সুন্দর সময়টি আসে সেটির রূপক হচ্ছে ‘হানি’ শব্দটি আর ‘মুন’ বা চাঁদ দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয় সময়কে। অর্থাৎ সুখের সময় তাই হলো মধুচন্দ্রিমা বা হানিমুন। কারণ যাই হোক না কেন প্রচলিত অর্থে নবদম্পতির একে অপরের সঙ্গে একান্তে সময় উপভোগ করাকে হানিমুন বা মধুচন্দ্রিমা বলা হয়ে থাকে। সুতরাং আকাশে চাঁদ মধ্য গগনে থাকুক অথবা নাই থাকুক হানিমুনে তাতে কোন প্রভাব পড়ে না।
(প্রতিবেদনটি 'ছাঁদনাতলা' ফিচারের অংশ।)