shono
Advertisement

মানব সভ্যতার ইতিহাসের কিছু অদ্ভুত মৃত্যুগাথা

মৃত্যুর এমন নজির পৃথিবী বড় একটা দেখেনি! ভবিষ্যতেও দেখবে কি না, প্রশ্ন উঠতেই পারে! The post মানব সভ্যতার ইতিহাসের কিছু অদ্ভুত মৃত্যুগাথা appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:41 PM Jul 11, 2016Updated: 04:11 PM Jul 11, 2016

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় একবার এক কবিতায় লিখেছিলেন, ”মৃত্যু তখন হয় না সফল, হয় না সফল!”
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠবে- কখন? এবং, মৃত্যুর সাফল্যই বা কী?
কখন মানে বলাই বাহুল্য মৃত্যুর সময়। জন্মানোর ঠিক পরের মুহূর্ত থেকেই শুরু হয়ে যায় চলে যাওয়া, ছেড়ে যাওয়ার কাউন্টডাউন। সবাই তা জানেন! জানেন বলেই প্রত্যেকের একটা নির্দিষ্ট কল্পনা থাকে নিজের মৃত্যু নিয়ে- যে ভাবে হলে তবেই তাকে বলা যাবে সুন্দর করে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া। সেটা সম্ভব হলেই মৃত্যুও সফল!
কিন্তু এও সত্যি, পৃথিবীতে কী ভাবে থাকবে এবং কী ভাবে ছেড়ে যাবে, কোনওটাই মানুষের হাতে থাকে না। তার মধ্যেও অবশ্য পরিসংখ্যানের নিরিখে গড়ে ওঠে কিছু কিছু ধারণা- স্পষ্ট করে বললে স্বাভাবিক জন্ম এবং মৃত্যুর ঘটনা। ব্যতিক্রম হলেই তখন তা নজর কাড়ে!
যেমনটা হয়েছে এই ছয়জনের ক্ষেত্রেও। এঁদের পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘটনা এতটাই আকস্মিক এবং ব্যতিক্রম, তা জায়গা করে নিয়েছে উদাহরণের তালিকায়।

Advertisement

জীবনের ভরাডুবি:


রাজকন্যার জীবন সব দিক থেকে সমৃদ্ধ হওয়ারই তো কথা! সে খাতেই বইছিল থাইল্যান্ডের রাজা মোংকুট এবং রানি পিয়ামের কন্যা সুনন্দা কুমারীরত্নর জীবন। ১৮৬০ সালে আক্ষরিক অর্থেই সোনার চামচ মুখে জন্মান তিনি। বয়স বাড়তে থাকে, রূপে-গুণে সবার মন জয় করতে থাকেন রাজকন্যা। আনন্দে কাটতে থাকে জীবন, পার করে ফেলেন উনিশটি বছর।
এবং, ওই উনিশে যখন পা, ১৮৮০ সালে জীবনের খাতে ঢুকে যায় বেনোজল। সপরিবারে আনন্দ উদযাপনের জন্য গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদে যাচ্ছিলেন রাজকন্যা। নদীর বুকে ভেসে চলেছিল বজরা। বজরায় মায়ের সঙ্গে ছিলেন সুনন্দা। হঠাৎই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। নৌকাডুবি হয়। সবার চোখের সামনে জলে তলিয়ে যান মেয়ে সুনন্দাকে নিয়ে রানি পিয়াম।
কারণ, দেহরক্ষীদের তাঁদের স্পর্শ করার অনুমতি ছিল না। এই রাজকীয় নিয়ম পালন করতে গিয়ে তাঁরা রানি আর রাজকন্যাকে উদ্ধার করতে পারেননি!

বিপদ পায়ে পায়ে:


সাল ১৫৬৭। তখন নেহাত গিনেস বুক অফ রেকর্ড-এর কোনও অস্তিত্ব ছিল না। থাকলে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে লম্বা দাড়ি রাখার জন্য হান্স সেইনিনগারের নাম ওঠা কেউ ঠেকাতে পারত না। জানা যায়, তাঁর দাড়ি ছিল পাক্কা ১.৫০ মিটার লম্বা।
ওই দাড়ির জন্যই তাঁর খ্যাতি এবং মৃত্যুও!
ইতিহাস বলছে, একবার আগুনের হাত থেকে পালাতে গিয়ে দাড়িতে পা জড়িয়ে পড়ে যান হান্স। বেকায়দায় পড়ার ফলে ঘাড় ভেঙে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর!

জীবিত ও মৃত:


ফ্যাগিলু মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই!
এ ক্ষেত্রে ছোটগল্পের কাদম্বিনীও যা, রাশিয়ার ফ্যাগিলু মুখামেটজিয়ানভও তাই! ২০১১ সাল পর্যন্ত স্বামী ফ্যাগিলির সঙ্গেই রাশিয়ার কাজানে তাঁর দাম্পত্য ছিল ঠিকঠাক। সমস্যা দেখা দিল এক রাতে, যখন বুকে ব্যথা শুরু হল মহিলার!
এক্ষেত্রে যা করণীয়, তাই করা হয়। বছর একান্নর স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যান স্বামী। ভর্তি করা হয় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। ১২ মিনিটের মাথায় ডাক্তাররা জানান, ফ্যাগিলু আর বেঁচে নেই।
শুরু হয় শেষকৃত্যের আয়োজন। কফিনে দেহ নিয়ে পরিজনরা পৌঁছন গোরস্থানে। মাটি খোঁড়া হয়। শুরু হয় অন্তিম প্রার্থনা।
এই সময়ে সবাইকে অবাক করে কফিনের মধ্যে নড়ে-চড়ে ওঠেন ফ্যাগিলু! তাকান চোখ মেলে। শুনতে পান, ধর্মযাজক তাঁর আত্মাকে এই পৃথিবী ছেড়ে ঈশ্বরের সান্নিধ্যে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন।
পুরো ব্যাপারটায় এতটাই অবাক হন মহিলা যে এবার সত্যিই হার্ট অ্যাটাক হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়!

সত্যি অভিনয়:


সময়টা ১৯৫৮। স্টুডিওয় শট নেওয়ার তোড়জোর চলছে। ব্যস্ত প্রোডাকশন হাউজের সবাই। ব্রিটিশ ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা গ্যারেথ জোন্স-ও তৈরি হচ্ছেন শট দেওয়ার জন্য। চিত্রনাট্য অনুযায়ী গ্যারেথকে একটা হার্ট অ্যাটাকের দৃশ্যে অভিনয় করতে হবে।
অনেকে বলেন, ক্যামেরা চলার সময়েই না কি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় অভিনেতার! আবার, অনেকের দাবি, ক্যামেরা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে গ্যারেথ হৃদরোগে আক্রান্ত হন।
বিতর্ক যা-ই হোক, জীবনের মঞ্চে সত্যি মৃত্যুটাই দেখিয়ে গিয়েছিলেন গ্যারেথ জোন্স!

জীবন দৌড়ে মারণ হানা:


নিউ ইয়র্কের বছর পঁয়ত্রিশের ফ্রাঙ্ক হায়েস জীবনের একটা ঘোড়দৌড়েও জিততে পারেননি। অবশ্য, প্রশিক্ষিত জকি তিনি ছিলেনও না। তিনি দেখাশোনা করতেন সুইট কিস নামে এক ঘোড়ার। মাঝে মাঝে জকির কাজও করতেন, এই যা!
১৯২৩ সালের ঘটনা কিন্তু বদলে দেয় সব হিসেব। সেবার ঘৌড়দৌড়ের মাঝপথেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ফ্রাঙ্কের!
আশ্চর্যের ব্যাপার, তাঁর দেহ কিন্তু আটকে ছিল লাগাম ধরেই! ঘোড়ার পিঠে! এবং, সে বার সুইট কিস-ও দৌড়ে জিতে যায়!

বিয়ারে ডেথ ফিয়ার:


প্রচলিত ধারণা, মদ্যপান মানুষকে নিয়ে যায় মৃত্যুর দিকে। একটা সময়ের পর আর নিজেকে সংযত রাখা যায় না, প্রায় মদে ডুবেই কেটে যায় জীবন। এবং, এভাবে নানা অসুখে পড়ে কাছে চলে আসে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার দিন।
১৮১৪ সালে লন্ডন কিন্তু দেখেছিল এক ভয়াবহ ঘটনা। বিয়ারের বন্যায় ডুবে সেবার মৃত্যু হয় ৮ জনের!
জানা যায়, সে বার লন্ডনের এক বিয়ার কারখানায় এক বড়সড় বিস্ফোরণ হয়। ফেটে যায় বিয়ারের পিপে। পরিণতিতে ১,৪৭০,০০০ লিটার বিয়ারের স্রোতে ভেসে যায় কারখানা থেকে পার্শ্ববর্তী এলাকা। সেই বিয়ারের স্রোত পথ বেয়ে নেমে আসে এলাকার নানা বাড়ির বেসমেন্টে। ডুবে মৃত্যু হয় এক পরিবারের।
পাশাপাশি, সেই ধেয়ে আসা বিয়ারের স্রোতে বেশ কিছু বাড়ির পাঁচিল ভাঙে, ক্ষতিগ্রস্ত হয় এলাকাও!

মৃত্যুর এমন নজির পৃথিবী বড় একটা দেখেনি! ভবিষ্যতেও দেখবে কি না, প্রশ্ন উঠতেই পারে!

The post মানব সভ্যতার ইতিহাসের কিছু অদ্ভুত মৃত্যুগাথা appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement