কলহার মুখোপাধ্যায়: দু’চোখে দৃষ্টিক্ষমতা সম্পূর্ণ শূন্য। টিচার্স রুমে বসে ব্রেলের মাধ্যমে পড়াশোনা করতে হয় তাঁকে। তারপর ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নেন। তাঁরও ডিউটি পড়েছে ভোটে। বিধানসভা নির্বাচনে (West Bengal Assembly Elections) প্রিসাইডিং অফিসার হিসাবে তাঁকে সামলাতে হবে বুথের দায়িত্ব! ভোটদান সংক্রান্ত কাগজপত্র কী উপায়ে চাক্ষুষ করবেন? কোন ম্যাজিকে গোটা নির্বাচনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন তা নিয়ে আতঙ্কে দক্ষিণ ২৪ পরগনার (South 24 Parganas) জয়নগর মজিলপুরের বাসিন্দা শিক্ষক নিলু মিস্ত্রি। নিলুবাবুর থেকে পাচুয়াখালি হাইস্কুলের শিক্ষক কিংশুকবাবুর দৃষ্টিশক্তি সামান্য ভাল। পকেটে ম্যাগনিফায়িং গ্লাস নিয়ে ঘোরেন। তা দিয়েও অবশ্য ছোট লেখা দেখা সম্ভব হয় না সবসময়। তাঁরও ভোটে ডিউটি পড়েছে।
নিলুবাবুর দাবি, তিনি যে দৃষ্টিহীন একথা জানানো হয়েছে কমিশনকে। তা সত্ত্বেও একের পর এক প্রশিক্ষণের তারিখ আসা শুরু হয়েছে। প্রথম প্রশিক্ষণে যোগ দিতে হয়েছিল। তারপর স্কুলের তরফ থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার শংসাপত্র-সহ বাকি নথি জমা করা হয়েছে জেলা নির্বাচন দপ্তরে। তারপর নাম বাদ দেওয়ার আবেদনপত্র জমা করেন। তার রিসিভ কপিও নিলুবাবুর কাছে রয়েছে। তারপরও ফের ট্রেনিংয়ে যোগদান করার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। দৃষ্টিহীন নিলু মিত্রর বক্তব্য, “আমাকে নির্বাচনের কাজে এতবড় দায়িত্ব দিলে গোটা প্রক্রিয়া বরবাদ হয়ে যাবে। একথা প্রাণপণে বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু তাতে আধিকারিকদের কেউ কর্ণপাত করছেন না।”
[আরও পড়ুন : ‘মমতাকে টুকলি করে লাভ নেই’, বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারকে চ্যালেঞ্জ তৃণমূল সুপ্রিমোর]
কুলতলির পাচুয়াখালির কিংশুকবাবু বলেন, “আলিপুরে ট্রেজারি বিল্ডিংয়ে গিয়ে অন্ধত্বের শংসাপত্র এবং ভোটের কাজ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন জমা করেছি। স্কুলের তরফ থেকেও যাবতীয় নথি দিয়ে কমিশনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় প্রশিক্ষণে অংশ নিইনি। এই শাস্তিস্বরূপ কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানো হয় কমিশন থেকে।”
নির্বাচনের সময় শিক্ষকদের এই ধরনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ধারাবাহিক আন্দোলন চালাচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ। সেই সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী জানিয়েছেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী, ক্যানসার-সহ গুরুতর অসুস্থ, দৃষ্টিহীন কিংবা সদ্যোজাত শিশুর মাকে পর্যন্ত ভোটকর্মীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আবেদন জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। বরং চাকরি থেকে বরখাস্ত করার হুমকি দিয়ে শোকজ নোটিস ধরানো হচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, “এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।”