সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হোয়াটসঅ্যাপে নজরদারি করা নিয়ে কড়া জবাব দিল কেন্দ্রীয় সরকার। বিরোধীদের দাবি, এটা মোটেই কড়া জবাব নয়। এটা হল সরকারের যুক্তিহীন সাফাই দেওয়া। কেউ কেউ বলেছেন, মোদি সরকার এখন পিঠ বাঁচাতে আইনের দোহাই দিচ্ছে। এদিকে, হোয়াটসঅ্যাপ-সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি বিতর্ক নিয়ে আজ, বুধবার আলোচনা হবে সংসদে। বৈঠকে থাকবে সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটি। কমিটির মাথায় রয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। বৈঠকে সরকার পক্ষ বিরোধীদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে পারে। সূত্রের খবর, ৩১ সদস্যের এই কমিটি এদিন উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের কাছে এই সংক্রান্ত বিষয়ে সরকার কী পদক্ষেপ করেছে জানতে চাইবে। এমনকি ফেসবুক কর্তৃপক্ষের তরফে তাদের আইনজ্ঞ ও আধিকারিকদেরও এই বিষয়ে আলোকপাত করার জন্য ডাকা হয়েছে বলে খবর।
এদিন কেন্দ্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপে আড়ি পাতার অভিযোগ একেবারেই ঠিক নয়। তবে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে সরকারের অধিকার আছে সাইবার ক্ষেত্রগুলিতে বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি চালানোর। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত আইনও আছে এটা করার। আইনের বলে বলীয়ান হয়েই সরকার এই সাইবার নজরদারির কাজ করতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি চালাতে সরকারের এই আইনি রক্ষাকবচ রয়েছে। মঙ্গলবার রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে লিখিতভাবে এই কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী জি কিষণ রেড্ডি।
তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সরকারি নিরাপত্তা সংস্থা বা তদন্তকারী সংস্থা আইন মেনেই এই নজরদারির কাজটি করতে পারে। দেশ ও নাগরিকের নিরাপত্তার স্বার্থে নজরদারি করা হতে পারে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাম মেসেঞ্জার, ভাইবার, গুগলের যাবতীয় চ্যাট, ফোন কল, মেসেজের উপর। আইন মোতাবেক, সুরক্ষার খাতিরে কোনও নির্দিষ্ট সরকারি এজেন্সি যে কোনও কম্পিউটারের যে-কোনও তথ্য মনিটর ও ডিক্রিপ্ট করতে পারে। তবে ইজরায়েলি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা এনএসও থেকে পেগাস্যাস সফটওয়্যার কিনে সরকার এই কাজটি ভারতের সাইবার এজেন্সিগুলিকে দিয়ে করাচ্ছে কি না সে প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি মন্ত্রী।
উল্লেখ্য, দেশের গণতন্ত্র ও উদার প্রশাসনের সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়াকে খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে অজস্র মানুষ। এমনটাই দাবি মোদি সরকারের। এই ধরনের মানুষরা ভারতে অস্থিরতা তৈরি করে সামাজির শান্তি, নিরাপত্তা নষ্ট করতে চায়। তাই দরকার কঠোর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ। সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন মামলায় এই দাবি করেছে সরকার। সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়ে সরকারের এই দাবির তীব্র বিরোধিতা করেছে ফেসবুক, গুগল। এর ফলে ব্যক্তি স্বাধীনতা, গোপনীয়তা থাকবে না বলেই জানিয়েছে তারা। হোয়াটসঅ্যাপের তথ্য অন্য কারওর পড়ার সুযোগ নেই। এন্ড টু এন্ড এনস্ক্রিপশনে সুরক্ষিত যাবতীয় তথ্য। এতদিনের সেই মিথ ভেঙে গিয়েছে ইজরায়েলি সফটওয়্যার পেগাসাস চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়ায় তথ্য সুরক্ষার কোনও বালাই নেই। কিন্তু তথ্য-প্রযুক্তির দুনিয়াতেই রয়েছে এমন কিছু ফাঁকফোকর, যা দিয়ে ঢুকে পড়েছে পেগাসাসের মতো ভাইরাস।
[আরও পড়ুন: এবার সোশ্যাল মিডিয়াতেও আড়ি পাতবে কেন্দ্র!]
কী এই এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন? সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, দু’পক্ষের মেসেজের তথ্য নিজস্ব সার্ভারে জমা থাকে, এই তথ্য তৃতীয় পক্ষের হাতে পড়ার কথা নয়। এতদিন ধরে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশনের সুরক্ষা নিয়ে তেমন অভিযোগ ওঠেনি। ইজরায়েলের এক অখ্যাত স্টার্ট আপের তৈরি ভাইরাসের ধাক্কায় সেই মিথ ভেঙে চুরমার। হোয়াটসঅ্যাপও নিজেদের ত্রুটি মেনে নিয়েছে। ইজরায়েলি পেগাসাস চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়ায় তথ্য সুরক্ষার কোনও বালাই নেই। লখিন্দরের বাসরঘরে ছিদ্র দিয়ে তারা সাপ ঢোকাতে ভীষণই ওস্তাদ। এভাবেই তারা কবজা করেছে চিন, রাশিয়া, আমেরিকা, ফ্রান্স, ভারতের বহু মানুষের হোয়াটসঅ্যাপ। তারপর সবার মন জয় করে ওই দেশের সরকারগুলিকে বানিয়েছে ক্রেতা। ওই দেশগুলির সরকার ও তাদের সাইবার এজেন্সি এখন ইজরায়েলের ওই সফটওয়্যার কিনে নিজেদের স্বার্থে নজরদারির কাজে লাগাচ্ছে।
The post WhatsApp-এ নজরদারি বৈধ জানাল কেন্দ্র, আড়ি পাতা ইস্যু খতিয়ে দেখবে সংসদীয় কমিটি appeared first on Sangbad Pratidin.