কুণাল ঘোষ ও কিংশুক প্রামাণিক (লন্ডন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী): বাংলার গৌরব বারবার নানাভাবে উঠে এসেছে বিশ্বের দরবারে। এবার বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এ দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানীর গৌবর গাথাই আরও একবার তুলে ধরলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বৃহস্পতিবার অক্সফোর্ডে ‘সামাজিক উন্নয়ন- বালিকা, শিশু এবং নারীর ক্ষমতায়ন’ বিষয়ে বহু প্রতীক্ষীত বক্তব্যে 'মা-মাটি-মানুষে'র রাজ্যের সর্বধর্ম সমন্বয়, সম্প্রীতির চিত্র এঁকে দিলেন তিনি। সহজ-সরল শব্দে বুঝিয়ে দিলেন জীবনের নিগূঢ় সত্য - ভাঙা সহজ, জোড়া কঠিন! তাঁর কথায়, ''ভাগাভাগি করা সহজ, ঐক্য ধরে রাখা কঠিন।''

বৃহস্পতিবার লন্ডনের স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ শুরু হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা। বিষয় ছিল ‘সামাজিক উন্নয়ন- বালিকা, শিশু এবং নারীর ক্ষমতায়ন’। তা বলতে গিয়েই মমতার ভাষণে উঠে আসে বাংলার সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা। শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ থেকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, তাঁদের শিক্ষার কথা বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ''বাংলার মাটি বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের মাটি। এখানে ভিনরাজ্যের বাসিন্দারা এসে থাকেন, এটাই তাঁদের ঘর হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন ভাষায় তাঁরা কথা বলেন। কেউ বলেন, জল, কেউ ওয়াটার, কেউ আবার পানি। আমি বলি, আমরা ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক - কারও মধ্যে কোনও ভাগ করি না। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য কাজ করে আমাদের সরকার। আমি নিজেকে শুধু মানুষ বলতেই ভালোবাসি। একটা কথা জানবেন, ভাগাভাগি করা সহজ, কিন্তু একতা ধরে রাখাটা কঠিন। বলা হয়, ডিভাইড ওই ফল। এটাই আসল কথা।''
বাংলার বৈচিত্র্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। বলেন, ''বাংলায় মোট জনসংখ্যা ১১ কোটি। তার মধ্যে ৩৩ শতাংশ সংখ্যালঘু। মানে মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, আদিবাসী। ২৩ শতাংশ তফসিলি উপজাতির মানুষ। আমরা সব ধর্ম, জাতি নির্বিশেষে সবাই সবাইকে ভালোবাসি। সকলের জন্য কাজ করি।'' মমতার আরও বক্তব্য, ''মানবিকতা ছাড়া পৃথিবী চলে না।'' এভাবেই বিলেতের মাটিতে বাংলার ঐক্যের আবহ তুলে ধরার সুযোগ এতটুকুও নষ্ট করলেন না বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।