সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের কবলে শ্রীলঙ্কা (Sri Lanka)। নেই জ্বালানি। কাগজের অভাবে বন্ধ পরীক্ষা, অধিকাংশ সংবাদপত্রের প্রকাশ। খরচ বাঁচাতে দিনে অন্তত ১০ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হচ্ছে বিদ্যুৎ। এরই প্রতিবাদে এবার পথে নামল সেদেশের মানুষ। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় কলম্বোর (Colombo) রাজপথে রাষ্ট্রপতির বাসভবনের সামনে জমায়েত করল হাজার পাঁচেক মানুষ। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে বিক্ষোভকারীদের। পরিস্থিতি হয়ে ওঠে অগ্নিগর্ভ। প্রতিবাদীরা আগুন ধরিয়ে দেয় একটি বাস, জিপ ও মোটরবাইকে। পরে পুলিশ গ্রেপ্তার করে ৪৫ জনকে।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, পদত্যাগ করতে হবে রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে। আর সেই দাবিতেই পথে নেমে আসেন তাঁরা। জানা গিয়েছে পুলিশের একটি বাস, একটি জিপ, দু’ টি মোটরবাইক পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি জলকামানও। আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এএসপিও। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে জারি করা হয়েছে কারফিউ। শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি তাঁর প্রতিক্রিয়ায় দাবি করেছেন, যাঁরা পথে নেমে প্রতিবাদ করছেন তাঁরা চরমপন্থী।
[আরও পড়ুন: মাসের শুরুতেই পকেটে টান! একধাক্কায় ২৫০ টাকা বাড়ল বাণিজ্যিক গ্যাসের দাম]
উল্লেখ্য, গত সাত দশকে সবচেয়ে বড় আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে দ্বীপরাষ্ট্র। বিদ্যুতের অভাবে ব্ল্যাক আউট চলছে দেশে। এমনকী মিলছে না প্রতিদিনের প্রয়োজনের রান্নার গ্যাস। আগেও ক্ষুব্ধ নাগরিকদের কলম্বোর প্রধান সড়ক অবরোধ করতে দেখা গিয়েছে। অবরোধকারীদের বক্তব্য, রান্নার গ্যাসের অভাবে তাঁরা কেরোসিন তেল সংগ্রহ করতে বেরিয়েছিলেন, কিন্তু তাও পাওয়া যাচ্ছে না। উত্তেজিত জনতাকে সামলাতে অস্ত্রহীন সেনা মোতায়েন করে লঙ্কা সরকার।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ডিজেলের ঘাটতির কারণে প্রায় ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল সেদেশে। যার প্রভাব গিয়ে পড়ে হাসপাতালের পরিষেবাতেও। বন্ধ করতে হয় অস্ত্রোপচার। স্বাভাবিক ভাবেই এই পরিস্থিতিতে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে আমজনতার। এদিকে বিদ্যুৎ বাঁচাতে অধিকাংশ সময়ই বন্ধ রাখা হচ্ছে স্ট্রিটলাইটও। ফলে বহু জায়গাতেই রাজপথ ছেয়ে রয়েছে গাঢ় অন্ধকারে।
[আরও পড়ুন: রাজস্থানে ডাক্তারের আত্মহত্যার পিছনে বিজেপি নেতা! গ্রেপ্তার এক অভিযুক্ত]
এদিকে এতদিন যা হয়নি এবার তাও শুরু হয়েছে, দেশ ছাড়তে শুরু করেছেন মানুষ। মঙ্গলবার ১৬ জন শরণার্থী সমুদ্র ডিঙিয়ে তামিলনাড়ুর দু’টি সৈকতে এসে উঠেছেন। জানা গিয়েছে, তাঁরা জাফনা ও মান্নারের বাসিন্দা। শরণার্থীরা জানিয়েছেন, দেশের পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন কর্মহীন তাঁরা, খাবারও মিলছে না। বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়েছেন। এদিকে প্রতিবেশী দেশের এই দুরবস্থায় পাশে দাঁড়িয়েছে ভারত। শ্রীলঙ্কাকে একশো কোটি ডলারের ঋণের সুবিধা দিতে চলেছে নয়াদিল্লি। সরকারি তরফে জানানো হয়েছে, ওই অর্থের বিনিময়ে আপাতত তাদের খাদ্যভাণ্ডার ও ওষুধের সরবরাহ পর্যাপ্ত রাখতে চাইছে কলম্বো।