সৈকত মিত্র, আমস্টেলভিন, নেদারল্যান্ডস: প্রতি বছর ক্যালেন্ডারের পাতায় শরৎ এলেই মনে হয়, মা বুঝি চলেই এসেছেন। ঢাকের শব্দ কানে বাজে, ধূপধুনোর গন্ধ ভেসে আসে। অথচ আমরা থাকি হাজার মাইল দূরে। তবু নেদারল্যান্ডসে আমাদের হইচই পরিবারের কারণে সেই শূন্যতা আর থাকে না।
এ বছরও আমরা শুরু করেছি দুর্গাপুজোর আয়োজন। আর মজার ব্যাপার হল, এবার মা আসছেন একটু আগেই। ২৬ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর আমস্টেলভিনে আমরা তিন দিন ধরে মাতব উৎসবের আনন্দে। সবচেয়ে বড় গর্বের জায়গাটা হল প্রতিমা। কলকাতার প্রখ্যাত শিল্পী প্রদীপ রুদ্র পালের হাতে গড়া একেবারে অনন্য পাঁচচালা দুর্গা এবার এসেছে আমাদের কাছে। ভাবুন তো, পুরো প্রতিমাটি কোনও অংশ খোলা হয়নি, সম্পূর্ণ রূপে বিশেষ কাঠের বাক্সে বন্দি করে সমুদ্রপথে প্রায় দুই মাস ভেসে এসেছেন মা আমাদের কাছে। যখন তা আমাদের কাছে এসে পৌঁছল, মনে হল যেন মা স্বয়ং সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আমাদের কাছে এসেছেন। সেই দৃশ্য আমি জীবনে ভুলব না।
আর পুজোর সময় মানেই তো জমজমাটি খাওয়া-দাওয়ার কথা বলাই বাহুল্য। বিরিয়ানি, সর্ষে ইলিশ, মাটন, মোচার ঘন্ট, মিষ্টি দই– সব মিলিয়ে ভুরিভোজের উৎসব হবে। ভেন্যুর রান্নাঘর থেকে তৈরি হবে প্রতিদিনের দু’বেলা আহার, ঠিক যেমন আমাদের দেশে হয়। আরও আছে– নাচ, গান, নাটক, পোশাক, গহনা, আর আমাদের সবচেয়ে প্রিয় শারদীয়া পূজাবার্ষিকী ও বাংলা বইয়ের স্টল। বইয়ের পাতায় হাত রাখলেই মনে হয়, কলকাতার দুর্গাপূজার সেই গন্ধটা যেন আবার ফিরে এল। পুজোর মঞ্চও এবার জমে উঠবে অন্যভাবে। ইউটিউব সেনসেশন ঋষি পান্ডা প্রথমবার নেদারল্যান্ডসে গান গাইতে আসছেন। ওঁর গান আমি বহুবার শুনেছি ইউটিউবে, আর এবার সরাসরি শুনতে পারব—এটা ভেবে এখনই শিহরণ জাগে।
এ বছর উৎসবটা পুরো উইকেন্ডে, তাই কোনও অফিসের চিন্তা নেই। শুধু আমরা, মা আর উৎসবের আনন্দ। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, এবারের এই আয়োজন আমাদের সবার কাছে এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।
