সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুর্বলের প্রতি পরাক্রমশালীর আক্রমণ ইতিহাসের এক অমোঘ ঘটনা। সময়ের চাকায় তা ফিরে ফিরে এসেছে। নয়ের দশকে ইরাকে আমেরিকার আগ্রাসন কিংবা আজকের ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা – একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। শুধু কি অন্য দেশের জমিদখলের চেষ্টা? তা তো নয়। আগ্রাসন চলে সে দেশের সংস্কৃতি, অর্থনীতিতেও, এমনকী ভাষাতেও। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের (Russia Ukraine Conflict) আবহে সেই ভাষা আগ্রাসনের স্মৃতিই ফিরে এল। জানেন কি, রুশ আগ্রাসনেই ইউক্রেনের রাজধানী ‘কিভ’ মুখে মুখে ‘কিয়েভ’ (Kiev)বলে পরিচিত হয়ে গিয়েছে? শুনে চমকালেও অধিকাংশ ভাষা সাহিত্যিকের মতামত এমনই। তাই ‘কিয়েভ’ এবং ‘কিভ’ (Kyiv)-এর মধ্যেও সে অর্থে যুদ্ধ চলছে।
‘কিয়েভ’ নাকি ‘কিভ’ – এ নিয়ে প্রচুর দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের লেখার বানান এবং উচ্চারণে দুইই চোখে পড়ছে। ফলে অনেকের মনেই চূড়ান্ত বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। সহজ করে বলতে গেলে কিয়েভ বা Kiev – এই উচ্চারণ রুশদের। আর কিভ বা Kyiv বলে থাকেন ইউক্রেনীয়রা। এটুকুই তফাৎ। কিন্তু আদি Kyivকে কিয়েভ বলে উচ্চারণ করে বিশ্বজুড়ে একে পরিচিত করে তোলার পিছনে রুশ আগ্রাসনের কাহিনী তুলে ধরেন ইউক্রেনের বাসিন্দারা।
[আরও পড়ুন: যুদ্ধ শেষের পথে? পরমাণু হামলার আশঙ্কার মাঝেই রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকে রাজি ইউক্রেন]
জানা গিয়েছে, সোভিয়েত শাসন কালে এবং তার পরবর্তী সময়ে একবিংশ শতকের গোড়া থেকে ‘কিয়েভ’ নামটিই ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপকভাবে। ১৯৭০–এর দশকে পশ্চিমী দেশগুলোতে ‘চিকেন কিয়েভ’ নামে একটি খাবার দারুণ জনপ্রিয় ছিল। সেখান থেকেও ‘কিয়েভ’ নামটির পরিচিতি পায়। পরবর্তীকালে ‘কিয়েভ’কে রুশ আগ্রাসনের প্রতীক হিসেবেই দেখেন ইউক্রেনীয়রা (Ukraine)। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর ইউক্রেনীয়রা ‘কিভ’ নামটাই ব্যবহার করে থাকেন সরকারি নথিপত্রে।
[আরও পড়ুন: বিজেপির ডাকা বন্ধে সরকারি কর্মীদের হাজিরা বাধ্যতামূলক, নবান্নে জরুরি বৈঠকে জারি বিজ্ঞপ্তি]
‘কিভ’ এবং ‘কিয়েভ’ – দুটি উচ্চারণের সঙ্গেই এই অঞ্চলে এক হাজার বছর ধরে মোঙ্গল, লিথুয়ানিয়ান, পোলিশ এবং রুশ অঞ্চলের প্রভাব রয়েছে। ভাষাবিদদের মতে, রুশ এবং ইউক্রেনীয় – দুটি ভাষারই উৎপত্তি পূর্ব স্লোভানিক। বর্তমান ইউক্রেনীয় ভাষার অনেকটাই প্রভাবিত পোলিশ ভাষার দ্বারা। ইউক্রেনে মূলত কিছু স্বরবর্ণের উচ্চারণ রুশ ভাষা থেকে পৃথক। তাই ইউক্রেনীয়দের মাতৃভাষা অনেক সময় রুশদের পক্ষে বোঝা কষ্টকর। আর তাই হয়ত ‘কিভ’ আর ‘কিয়েভে’র মধ্যে এত দ্বন্দ্ব।