অর্ণব আইচ: অনলাইন জুয়ার নেশা। বারবার খেলায় হেরে যাচ্ছিল সে। জুয়ার জন্য ধার করা টাকা ফেরত দিতে অভিনব ছক ছাত্রের। সুন্দরী তরুণী ছাত্রী সেজে প্রৌঢ়কে অনলাইনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে দু’লাখ টাকা হাতিয়ে নিল এক যুবক।
নিজেকে বারাণসী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী পরিচয় দিয়ে রীতিমতো বিয়ের টোপ দেয় প্রৌঢ়কে। আর তাতেই বিগলিত হয়ে গিয়ে প্রৌঢ় রীতিমতো বারাণসীতে নিজের স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে ‘তরুণী ভার্যা’র সঙ্গে নতুন সংসার পাতার পরিকল্পনা করেন। তার জন্য বারাণসীতে ঘরও ভাড়া নেন। কিন্তু ল্যাপটপ আর মোবাইলের পর্দার আড়াল থেকে না বেরিয়ে তরুণী প্রেমিকা যখন সামনে আসতে নারাজ, তখনই সন্দেহ হয় প্রৌঢ়ের। আর তাঁরই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। এরপরই কোনও সুন্দরী তরুণী নয়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং থেকে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেন। স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় প্রৌঢ়ের। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি।
[আরও পড়ুন: কলকাতা পুলিশ থেকে সরলেন দময়ন্তী সেন! পাঠানো হল রাজ্য পুলিশের ট্রেনিং বিভাগে]
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত যুবকের নাম সায়ন ঘোষাল। ২৫ বছরের ওই যুবক পরিবেশ বিজ্ঞানে এমএসসি পাশ। এখন বিএড পড়ছে সে। ক্যানিংয়ের শরৎপল্লিতে সে মায়ের সঙ্গে থাকে। হলদিয়ায় তার বাবার দোকান রয়েছে। বিএড পড়তে পড়তেই অনলাইন গেমিং ও জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে সে। জুয়ায় টাকা লগ্নি করে মাঝেমধ্যেই হেরে যেতে থাকে সায়ন। জুয়ার নেশার জন্যই বিভিন্ন পরিচিতর কাছ থেকে টাকা ধারও করে। কিন্তু সেই বিপুল টাকা ফেরত দেওয়ার মতো অবস্থা ছিল না তার। তাই শুরু করে অনলাইন জালিয়াতি। বারাণসী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল থেকে তাঁর ছবি ও বিবরণ চুরি করে সায়ন। সেগুলি দিয়েই নিজে ফেসবুকে ভুয়ো প্রোফাইল খোলে। নিজেকে সুন্দরী তরুণী ছাত্রী পরিচয় দিয়েই ফেসবুকে বন্ধুত্ব শুরু করে দক্ষিণ কলকাতার চারু মার্কেট এলাকার এক প্রৌঢ়ের সঙ্গে।
প্রেমের অভিনয় এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, প্রৌঢ় কখনও ল্যাপটপ কেনার জন্য, আবার কখনও বা নতুন সেশনে ভরতি হওয়ার জন্য ‘তরুণী প্রেমিকা’কে মোট ২ লাখ ১ হাজার টাকা একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠান। প্রেমিকা প্রৌঢ়কে বিয়ে করত রাজি হয়। নতুন সংসার পাতার লোভে তখন বিভোর প্রৌঢ়। বারবার তিনি ‘প্রেমিকা’র সঙ্গে দেখা করবেন জানান। ‘প্রেমিকা’র কথামতো কয়েকটি জায়গায় যান। কিন্তু ‘প্রেমিকা’ আর দেখা দেয়নি। আর তাতেই ব্যর্থ প্রেমিকের সন্দেহ হয়। পুলিশ তদন্ত করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও মোবাইলের সূত্র ধরে সায়নকে শনাক্ত করে। ক্যানিংয়ে হানা দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে তাকে ১৩ জুন পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। এর আগে কতজনকে সায়ন এভাবে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছে, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।