সন্দীপ্তা ভঞ্জ: কুঞ্চিত ত্বক, আপাত বিবর্ণ মুখমণ্ডল। অ্যাসিড হামলা সৌন্দর্যকে এক নিমেষে ম্লান করে গিয়েছে। ঝলসে দিয়েছে মুখের ৭০ শতাংশই। এ তো শুধুই বাহ্যিক রূপান্তর। কিন্তু মন? তার আপন সৌন্দর্যে এখনও অটুট, রূপান্তরহীন। সেই মন গোটা পৃথিবীর সামনে আনতে চান অ্যাসিড হামলা থেকে বেঁচে ফেরা তরুণী মনীষা। মনীষা পৈলান। চান নিজের কাজ দিয়ে জীবনের এই ক্ষতিটুকু ঢেকে দিতে। বুঝিয়ে দিতে চান, মন আর কীর্তি দিয়েই মানুষ মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে ওঠে।
[আরও পড়ুন: ভগ্ন শরীরেও সচল কলম, এবার পুজোতে বই বেরচ্ছে বুদ্ধদেবের]
এর আগে মনীষার অনেক কাজ আমাদের গর্বিত করেছে। মনের শক্তিতে বলীয়ান মেয়েটি বহু সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষজনকে অনায়াসে টেক্কা দিতে পারে তাঁর অফুরান প্রাণশক্তিতে। সেদিক থেকে মনীষা সত্যিই দশভুজা। কাজও করেন, আবার ব়্যাম্পেও হাঁটেন। জেনে চমকে উঠলেন? তাহলে বাকি গল্পটা পড়তেই হবে।
শনিবার সন্ধেবেলায় দেরাদুনের ব়্যাম্পে সাদা-পিচরঙা পোশাকে আলো ছড়ালেন এই লড়াকু বঙ্গকন্যা। এই প্রথমবার। যিনি হাতে ধরে ব়্যাম্পে তাঁর অভিষেক ঘটালেন, তিনি বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার সুজয় দাশগুপ্ত। তাঁর বাড়িয়ে দেওয়া বন্ধুত্বের হাত ধরেই মনীষা স্বমহিমায় হেঁটে বেড়ালেন মার্জার সরণিতে। ‘অ্যাসিড বিক্রি বন্ধ হোক’, এই থিমভাবনায় সুজয়ের শো স্টপার হলেন মনীষা পৈলান। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের বাসিন্দা মনীষার এই লড়াই কিন্তু দীর্ঘ। সেই কোন কিশোরী বয়সে প্রতিবেশীর হাতেই এমন নৃশংসভাবে আক্রান্ত হতে হয়েছিল মনীষাকে। সেই অপরাধী প্রথমে ধরা পড়লেও আপাতত জামিনে ছাড়া পেয়ে প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর সেখানেই চিন্তা বেড়েছে। এক অপরাধী এভাবে ঘুরে বেড়ালে, আরও কতজন অপরাধমূলক কাজে উৎসাহ পেয়ে যাবে, তার ঠিক নেই। তবে সেদিনের অন্ধকার দিনগুলো কাটিয়ে এখন আলোয় ফিরেছেন মনীষা। কলেজে পড়ছেন, সাংস্কৃতিক চর্চার সঙ্গে যুক্ত, সমাজসেবাও করেন। এই একাধিক কীর্তির তালিকাতেই নব সংযোজন – ব়্যাম্পে হাঁটা। পাশাপাশি মনীষা ধন্যবাদ জানিয়েছেন সেসব মানুষগুলিকেও যাঁরা তাঁর পাশে থেকেছে। সর্বক্ষণ তাঁকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে গিয়েছে প্রথম সারিতে নিজের জায়গা করে নেওয়ার জন্য।
শনিবার সন্ধের অভিজ্ঞতা নিয়ে মনীষা বললেন অনেক কথাই। এ এক অন্য অনুভূতি, তা প্রকাশের পাশাপাশি তিনি বলছেন, ‘আমি বারবার আমার এই চেহারা নিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই একটাই কারণে। সমাজকে সতর্ক করতে চাই। যাতে আমারই মতো আর কোনও মেয়ের এই অবস্থা না হয়।’ মনীষা মনে করেন, শেষ বলে কিছু নেই। তাঁর কথায়, ‘নিজেকে বলতে শেখাও, আমি পারব, আমি ঠিক লক্ষ্যে পৌঁছে যাব। পজিটিভ ভাবো, পজিটিভ থাকো।’ অ্যাসিড বিরোধী বার্তাকে ব়্যাম্প শো’র মাধ্যমে সামনে আনার ভাবনা ফ্যাশন ডিজাইনার সুজয় দাশগুপ্তর। মনীষাকে তিনি সাজিয়েছেন হালকা, নরম সুতির পোশাকে। তিনি চান অ্যাসিড আক্রান্ত আরও অনেক তরুণীকে তাঁর শো স্টপারের মুকুট পরাতে। আর অ্যাসিড আক্রান্তদের প্রতি সুজয়ের এই বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবেই মনীষাকে ব়্যাম্পে হাঁটতে আগ্রহী করে তুলেছে। হয়ত আবারও আমরা মনীষাকে দেখতে পাব মার্জার সরণিতে – দেরাদুনের পর অন্য কোথাও, অন্য কোনওখানে।
[আরও পড়ুন: যাদবপুর কাণ্ড নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট, সমালোচিত মীর]
The post জীবনের আঁধার থেকে বেরিয়ে ব়্যাম্পে আলো ছড়ালেন অ্যাসিড আক্রান্ত মনীষা appeared first on Sangbad Pratidin.