সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অক্টোবরের গোড়াতেই প্রায় ১৭ লক্ষ অভিবাসীকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ আগেই দিয়েছে পাকিস্তান। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই আফগান। বুধবার অর্থাৎ ১ নভেম্বরের মধ্যেই তাঁদের দেশ ছাড়তে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছিল ইসলামাবাদ। সোমবার ১৭৪টি ট্রাকে ১৪৯টি পরিবার পাকিস্তান ছেড়েছেন। পাক ফৌজের হাতে হেনস্তার সম্ভাবনায় আতঙ্কিত বহু আফগান শরণার্থীও সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই সেদেশ ছেড়ে গিয়েছেন ৮৬ হাজার আফগান শরণার্থী।
পাক-আফগান সীমান্তবর্তী খাইবার-পাখতুনখোয়া এবং বালুচিস্তান প্রদেশের বিভিন্ন চেকপোস্টে দেখা গিয়েছে আফগানিস্তানের (Afghanistan) মানুষ ও যানবাহনের দীর্ঘ সারি। আটের দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সেনার অনুপ্রবেশ এবং মুজাহিদ বাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই শুরুর পর থেকে পাকিস্তানে মূলত পাশতুন জনগোষ্ঠীর শরণার্থীদের ভিড় শুরু হয়েছিল। দুদশক আগে আফগানিস্তানে আমেরিকার সেনা অভিযান শুরুর পরও কয়েক লক্ষ আফগান নাগরিক প্রাণভয়ে পাকিস্তানে (Pakistan) চলে এসেছিলেন।
[আরও পড়ুন: গাজা যুদ্ধে নিহত ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইজরায়েলি সেনা, শোকস্তব্ধ ‘লিটল ইন্ডিয়া’]
মূলত পাক-আফগান সীমান্ত লাগোয়া খাইবার-পাখতুনখোয়া এবং বালুচিস্তান প্রদেশে তাঁদের বসবাস। পাক সরকারের দাবি, তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষ। যদিও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সমীক্ষায় তা সাড়ে ১৭ লক্ষের আশপাশে। এদিকে, ইতিমধ্যেই এর প্রভাব পড়েছে পাকিস্তানে অবস্থিত স্কুলগুলোতে। আফগান পড়ুয়াদের জন্য দরজা বন্ধ করে দিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। মনে করা হচ্ছে, এর ফলে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মধ্যে পড়ল আফগান ছাত্রীরা। হয়তো বহু ছাত্রীরই পড়াশোনা চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। এর পর দেশে ফিরে গেলেও তাদের আর পড়াশোনার সুযোগ হবে না। কারণ তালিবান সরকার ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানে প্রাথমিক শিক্ষাটুকুর পরই সেদেশের মেয়েদের পড়াশোনার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিয়েছে।
দীর্ঘ দিন ধরে আফগান শরণার্থীদের জন্য বিপুল অঙ্কের আন্তর্জাতিক অর্থসাহায্য এবং ত্রাণ পেয়েছে ইসলামাবাদ। কিন্তু ২০২১ সালে কাবুলে তালিবানের ক্ষমতা দখলের পরে সীমান্ত চিহ্নিতকরণ নিয়ে দুদেশের বিরোধ শুরু হয়। সেই সঙ্গে পাক সেনার সঙ্গে লড়াইয়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবান (টিটিপি)-কে কাবুলের মদতের অভিযোগ ঘিরেও দুতরফের টানাপোড়েন শুরু হয়। জানা যাচ্ছে, মূলত দুটি কারণে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামাবাদ।
[আরও পড়ুন: ‘শিশুদের বলি, টাকার জন্য যুদ্ধ’, হামাসের মুখোশ খুলল প্রতিষ্ঠাতার ছেলেই!]
প্রথমত, দেশের বেহাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাড়তি ব্যয় বহনে অক্ষমতা। দ্বিতীয়ত, নিরাপত্তা সংক্রান্ত সঙ্কট। পাশতুন বিদ্রোহী গোষ্ঠী টিটিপির সঙ্গে আফগান নাগরিকদের একাংশের যোগাযোগ। ইসলামাবাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর গত বছরের নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে পাকিস্তান সরকার এবং সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তারা। টিটিপিকে আফগান তালিবানদের একাংশ সরাসরি মদত দিচ্ছে বলেও অভিযোগ। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি আত্মঘাতী মানববোমা হামলায় আফগান শরণার্থীদের জড়িত থাকার প্রমাণও মিলেছে।