সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাঙালি মাত্রই ইলিশ নিয়ে আলাদা আবেগ থাকবেই। আর তা যদি হয় পদ্মার, তবে তো কথাই নেই। রুপোলি শস্য সাধ্যের মধ্যে পেতে ভোজনপ্রেমীদের চেষ্টার অন্ত নেই। বাজারে ইলিশের আগমন ঘটলে, সকলেরই জিজ্ঞাসা থাকে, দাম কত? এবার সাধের সেই মাছের দরদাম পৌঁছল আইনের দুয়ারে! বাংলাদেশে প্রতি কেজি ইলিশের সর্বোচ্চ দাম ৭০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে, এই দাবিতে আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছে। রবিবার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার এই আইনি নোটিস পাঠান। অভিযোগ, বাজারে খুচরো ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে ইলিশের দাম বড্ড বাড়বাড়ন্ত। তাই দামের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে নোটিস পাঠানো হল বাণিজ্য ও মৎস্য-প্রাণিসম্পদ মন্ত্রকের সচিব, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আমদানি ও রপ্তানি দপ্তরের প্রধান নিয়ন্ত্রকের ঠিকানায়।
আইনজীবীর পাঠানো নোটিস অনুযায়ী, আগামী সাতদিনের মধ্যে ইলিশের পাইকারি ও খুচরো বাজারে নজরদারি, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আর্জি জানানো হয়েছে। এছাড়া সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোর বাস্তবতা মেনে ভারত ও বাংলাদেশ মিলিয়ে একটি অভিন্ন সময়ে বা কাছাকাছি সময়ে ইলিশ মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা নিয়ে ভারতকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়া হোক, সেই আবেদনও রয়েছে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে যে কোনও দেশে ইলিশ রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে যেন রপ্তানি করা না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। অন্যথায় উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করবেন বলে নোটিসে উল্লেখ করেছেন আইনজীবী।
বলা হয়, বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ মূলত বঙ্গোপসাগরের। এটি বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের চেয়ে ভারত ও মায়ানমারের সমুদ্রসীমা অনেক বেশি বিস্তৃত। ভারত ও মায়ানমারের সমুদ্রসীমায় প্রচুর ইলিশ উৎপাদন হয়। অবশ্য ভারতের বিভিন্ন নদীতেও ইলিশ পাওয়া যায়। ইলিশ সাগরের মাছ হলেও ডিম পাড়ার জন্য যখন নদীতে আসে তখন পদ্মা ও বিভিন্ন নদীর প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে পরিপুষ্ট হয় এবং প্রাকৃতিকভাবে অত্যন্ত সুস্বাদু হয়ে ওঠে। মূলত পদ্মা নদীর ইলিশ মাছই স্বাদে ও গন্ধে উৎকৃষ্ট। যেহেতু ইলিশ সাগরের মাছ তাই এই মাছ পুকুরে বা অন্য কোনও স্থানে চাষ করতে হয় না। ফলে ইলিশে কোনও উৎপাদন খরচ নেই। এটি শতভাগ প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মাছ।
আইনি নোটিসে আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ারের দাবি, ভারতে প্রতি কেজি ইলিশ ১০ মার্কিন ডলার বা এক হাজার ১৮০ টাকা দরে রপ্তানি শুরু হয়েছে। ভারতে যে দামে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে, তার চেয়ে প্রতি কেজিতে অন্তত ৯০০ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে বাংলাদেশের উপভোক্তাদের। ইলিশ রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশীয় বাজারদরের চেয়ে বেশি মূল্যে রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করা উচিত। এবছর ভারতে পদ্মার ইলিশ রপ্তানি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। প্রথমে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়েছিলেন, দেশের মানুষ যেখানে ইলিশ খেতে পারছে না, সেখানে প্রতিবেশী দেশে তা রপ্তানি করা হবে না। পরে অবশ্য সিদ্ধান্ত বদলে পুজোর মরশুমে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শর্তসাপেক্ষে ২ হাজার ৪২০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। তার অন্যতম কারণ চোরাচালান। বৈধ রপ্তানি বন্ধ থাকলে অবৈধ পথে ইলিশ চোরাচালান বেড়ে যেতে বাধ্য। তাতে রাজস্ব ক্ষতি হয়। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগও মেলে না। তাই রপ্তানির সিদ্ধান্ত।