সুকুমার সরকার, ঢাকা: ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। গদি হারিয়ে এখন তিনি ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন। প্রায় আড়াই মাস পেরিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক পালাবদলের। কিন্তু এখন ফের একবার বিতর্ক দানা বাঁধছে হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর কাছে শেখ হাসিনার পদত্যাগ সংক্রান্ত কোনও তথ্য প্রমাণ বা নথিপত্র নেই। রাষ্ট্রপতির এই বক্তব্যকে মিথ্যাচার বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়া নিয়ে এখনও বিস্তর জলঘোলা চলছে। এই ঘটনায় গভীর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামি লিগের নেতা-কর্মীরা। গত আগস্ট মাসেই হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় দাবি করেছিলেন, "মা দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি। সংবিধান মতে তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।" জয়ের সেই দাবিই আরও একবার উসকে গেল রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের মন্তব্যে। সম্প্রতি ঢাকার একটি দৈনিকের বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "আমি বহুবার পদত্যাগপত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেছি, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে বঙ্গভবনে ফোন আসে, প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আসবেন। কিন্তু এক ঘণ্টার মধ্যে আর একটি ফোনে জানানো হয় যে, শেখ হাসিনা আসছেন না। এ বিষয়ে আর বিতর্কের সুযোগ নেই। তিনি দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন এবং এটাই সত্য। কিন্তু ভবিষ্যতে এ বিষয়ে যাতে আর কোনও প্রশ্ন না ওঠে, তা নিশ্চিত করতে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে আদালতের মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়।"
রাষ্ট্রপতির এহেন মন্তব্যের পরই ক্ষোভ প্রকাশ করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। সাহাবুদ্দিনের বক্তব্যকে মিথ্যাচার বলে দাবি করেন তিনি বলেন, "তাঁর এই পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না, এ নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। তিনি যদি তাঁর বক্তব্যে অটল থাকেন, তাহলে বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হতে পারে। রাষ্ট্রপতি নিজেই ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তাঁর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং উনি তা গ্রহণ করেছেন।" অন্যদিকে, ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, "হাসিনাকে উৎখাত করা হয়েছে। একটি অবৈধ সরকারকে জনগণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করা হয়েছে। এখানে পদত্যাগপত্রের কোনও ভূমিকা নেই।" এখানেই প্রশ্ন উঠছে, হাসিনার পদত্যাগ কি আদৌ বৈধ?
গত আগস্ট মাসে জয় দাবি করেছিলেন, “আমার মা আনুষ্ঠানিকভাবে কখনও পদত্যাগ করেননি। তিনি সেই সময়ই পাননি। মা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করেছিল। তাই আর বেশি সময় ছিল না। আমার মা নিজের ব্যাগ পর্যন্ত গোছাতে পারেননি। ফলে সংবিধান অনুযায়ী তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।” নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার অসাংবিধানিক বলেও দাবি করেন জয়। ফল ফের একবার জল্পনা বাড়ছে হাসিনার ইস্তফা দেওয়া নিয়ে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ছাড়ার পর থেকে একের পর এক মামলা দায়ের হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে মামলার সংখ্যা ১০০ পেরিয়ে গিয়েছে। ৭টি গণহত্যার অভিযোগও আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এবার বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে ফিরে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মুজিবকন্যা হাসিনাকে।