সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশ থেকে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নাম মুছতে উঠেপড়ে লেগেছে মহম্মদ ইউনুসের সরকার। 'নতুন' বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ছুড়ে ফেলা হচ্ছে ডাস্টবিনে। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মুজিবের বাড়ি। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে সরেছে তাঁর ছবি। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুজিব-হাসিনার নাম মুছে ফেলা হয়েছে। এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের নবনির্মিত হলের নাম রাখা হল ফজলুল কাদের চৌধুরীর নামে। যাকে চট্টগ্রামের সবচেয়ে কুখ্যাত গণহত্যাকারী রাজাকার হিসাবেই চেনে সকলে। এতেই প্রশ্ন উঠছে, এটাই তাহলে বদলের বাংলাদেশ? যাঁরা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছেন, তাঁদের নাম মুছে স্থান পাচ্ছে ফজলুলের মতো রাজাকাররা। ইসলামি বাংলাদেশ গড়ার পথেই কি এগোচ্ছে মহম্মদ ইউনুসের প্রশাসন ইতিমধ্যেই এনিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা।
জানা গিয়েছে, বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য নবনির্মিত হলের নামকরণ ফজলুল কাদের চৌধুরী করার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। আগামী এক মাসের মধ্যে তাঁরা এই নাম পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া হলটির নাম পরিবর্তন করে বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলামের নাম রাখার দাবিও জানানো হয়েছে। এনিয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ইফাজউদ্দিন আহমদ বলেন, "ফজলুল কাদের চৌধুরী ও তার ছেলে রাজাকার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধানতম দালাল হয়ে কাজ করেছিলেন। চট্টগ্রামে শান্তি কমিটি, রাজাকার বাহিনী, আল বদর ও আল শামস বাহিনী গঠনে সে ভূমিকা পালন করে। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গণহত্যা শুরু করার পর মুসলিম লিগের শীর্ষনেতা মানিক মহম্মদ কাসিমকে সঙ্গে নিয়ে ফজলুল তৎকালীন গভর্নর টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করে। কীভাবে পাকিস্তানের ফৌজকে সহযোগিতা করা যায় এবং তৎকালীন পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার সংগ্রাম ধূলিসাৎ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করে।”
এখানেই শেষ নয়, ইফাজউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, “ফজলুল কাদের চৌধুরীর গুডস হিলের বাড়িটি চট্টগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের নির্যাতনের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হত। ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর নৌকা করে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় আনোয়ারা উপজেলায় গহীরা উপকূলে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে ফজলুল। পরে তাকে বাঙালির বিরুদ্ধে ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনের অভিযোগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী করা হয়।” এদিকে, শোনা যায় বিএনপিতে যোগ দিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হয়েছিল ফজলুল কাদেরের ছেলে সাকা চৌধুরী। কিন্তু এরপর আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির সাজা দেয় সাকাকে। পরে তা কার্যকর করা হয়। ফলে ফজলুলের মতো কুখ্যাত রাজাকারের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের নাম রাখায় নানা বিতর্ক শুরু হয়েছে। হচ্ছে প্রতিবাদও।
এদিকে, শেখ হাসিনার পরিবারের নামে থাকা ৬ স্থাপনার নাম পরিবর্তন (চবি) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫৯তম সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে খবর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলকে শহিদ ফরহাদ হোসেন হল, আবু ইউসুফ ভবনকে শহিদ হৃদয় তরুয়া ভবন, শেখ হাসিনা হলকে বিজয় ২৪ হল, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলকে নবাব ফয়জুন্নেছা, বঙ্গবন্ধু উদ্যানকে জুলাই বিপ্লব উদ্যান ও শেখ কামাল জিমনেসিয়ামকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেসিয়াম করা হয়েছে। এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক আন্দোলনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
